গাজার বিধ্বস্ত ভবনে শিশুদের আর্তচিৎকার
১৮ মার্চের পর থেকে প্রায় ৪,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত * হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর ‘কাছাকাছি’ ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসরাইলের অবিরত হামলায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে অবরুদ্ধ গাজা। ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন আগ্রাসনে গাজাকে রীতিমতো ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চাচ্ছে ইসরাইল। প্রতিনিয়ত ভোরের আলো না ফুটতেই শুরু হয় হামলা। ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোর ওপর ধসে পড়ে ঘরের ছাদ। বিধ্বস্ত সেসব ভবন ও পাথরের নিচ থেকে ভেসে আসে শিশুদের কান্না ও আর্তচিৎকার। করুণ সেসব আওয়াজে দিশেহারা হয়ে পড়ে উদ্ধারকর্মীরা। শুক্রবার আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার পর্যন্ত) ইসরাইলের হামলায় গাজায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০৬ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,৯১২ জনে। এ ছাড়া ১৮ মাসের সংঘাতে ১,১৬,০০০ জন আহত হয়েছেন।
গাজায় শুক্রবার ভোর থেকে ড্রোন ও ফাইটার জেট দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে ইসরাইল। আবাসিক এলাকাগুলোর খুব নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল সেসব যুদ্ধ সরঞ্জাম। জানা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবেই দেইর-আল-বালাহ’র আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরাইল বাহিনী। পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই সেখানে চালানো হয়েছে হামলা। ফলে ধসে পড়েছে বেশকিছু ভবন। সেসব ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে অসংখ্য ফিলিস্তিনি। সেখানে কাজ করতে গিয়ে বিধ্বস্ত ঘরগুলোতে শিশুদের চিৎকার শুনেছে উদ্ধারকর্মীরা। এমনকি জাতিসংঘের ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শুক্রবার ভোর থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। খান ইউনিসের দক্ষিণে-পূর্বে হামলায় সাত শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়। এ ছাড়া ছিটমহলের দক্ষিণে, রাফাহতে বেসামরিকদের একটি গ্রুপের ওপর বিমান হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং চারজন আহত হয়েছে। ইসরাইলি ড্রোনের আঘাতে দেইর এল-বালাহে বেসামরিকরা নিহত হয়েছে। হতাহতদের ইতোমধ্যেই আল-আকসা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এছাড়াও স্ট্রিপের উত্তরে বেইত লাহিয়ার আল-আতাত্রা এলাকায় বোমা হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহতদের ইন্দোনেশিয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী-মূলত ইসরাইলি বাহিনী তথাকথিত বাফার জোন সম্প্রসারণের জন্য উত্তর গাজার আবাসিক বাড়ি সমতল করার চেষ্টা করছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলের মধ্যে গাজা নিয়ে আলোচনার ঠিক পরপরই এ হামলার খবর পাওয়া গেছে। মন্ত্রিসভায় এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, বন্দিবিনিময় নিয়ে হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তির কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছেন তারা। অন্যদিকে ১৮ মার্চের পর থেকে গাজায় প্রায় ৪,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাজায় বন্ধ করা হয়েছে ত্রাণসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়-গাজা শহরের সুজাইয়া থেকে উম্মে খালেদ বলেছেন তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তার পরিবারের পর্যাপ্ত খাবার নেই। বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। খুবই অল্প জায়গায় তাদের থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া ইসরাইলি বাহিনী পানির সব উৎস ধ্বংস করে দিচ্ছে। গত সপ্তাহে, ইসরাইল গাজার একমাত্র অপারেশনাল ওয়াটার ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টে একটি বোমা হামলা করে ধ্বংস করেছে। ফলে মৃত্যুর আগে পানি পাবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কিত অসহায় ফিলিস্তিনিরা।
