Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

ইন্দোনেশিয়ায় গ্রাম বাঁচাতে একাই গড়লেন ‘সুন্দরবন’

দুর্বার নারীর বশে সমুদ্রের জোয়ার

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভা প্রদেশের ৫৫ বছর বয়সী এক নারী পাসিজা। প্রতিদিন তার ঘুম ভাঙে সমুদ্রের গর্জনে। বিষয়টি শুনতে গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তব পরিবেশটা একেবারেই উলটো। সমুদ্র উপকূলে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়তই লড়াই করতে হয় পাসিজাকে। কেননা জাভার উত্তর উপকূলে অবস্থিত তার গ্রামটি পুরোটাই জলমগ্ন। সকাল-সন্ধ্যা জোয়ারের ভয়! সমুদ্রতে ভালোবাসলেও এই জোয়ারই ছিল তাদের একমাত্র আপদ! বিষ্ময়টি হলো-নিজের দুর্বার উদ্যোগে সেই বিপদকেই শেষমেশ বশ করে ফেলেছেন রুগ্ন চেহারার হ্যাংলা-পাতলা পাসিজা। রেজোসারি সেনিক নামের জোয়ারবিধৌত গ্রামটিকে রীতিমতো ‘সুন্দরবন’র মতো বিরাট এক ম্যানগ্রোভ বন গড়ে তুলেছেন পাসিজা। রেজোসারি সেনিক গ্রাম বা শুধু ইন্দোনেশিয়াকে নয়-চমকে দিয়েছেন পুরো পৃথিবীকেই!

পাসিজা এবং তার পরিবার সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করছেন। গত ২০ বছর ধরে তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১৫ হাজার ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়েছেন। বিষয়টি অনেকটা যেন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে অবস্থিত প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ অঞ্চল সুন্দরবনের মতো। পাসিজা প্রতিবছর যদি গড়ে ১৫ হাজার গাছ লাগিয়ে থাকেন, তাহলে ২০ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখে। অর্থাৎ, ছোটখাটো একটি ম্যানগ্রোভ বনই গড়ে তোলার কাজ করেছেন তিনি। কি নিরলস উদ্যোম! শুরুর দিকে অনেকেই ‘ঘরের ভাত খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ পন্ডশ্রমে হাসি-ঠাট্টা করলেও বছর ঘুরতেই তা পালটে চায় প্রশংসার গুঞ্জনে। এখনও প্রতিদিন তিনি নীল প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে তৈরি একটি নৌকায় করে ম্যানগ্রোভ চারা পরিচর্যা করতেন এবং নতুন চারা লাগাতে যান। বুক-সমান নীলচে-ধূসর পানিতে নেমে তিনি এই কাজ করেন। পাসিজা বলেন, ‘বন্যার পানি ঢেউয়ের মতো আসে, ধীরে ধীরে, একবারে নয়। পানি বাড়তে শুরু করার পর আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো দরকার, যাতে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং বাড়িটিকে বাতাস ও ঢেউ থেকে রক্ষা করতে পারে।’ পাসিজা ও তার পরিবার ছেলেদের ধরা মাছ নিকটতম বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ত বলেন, যত দিন ঢেউ আটকে রাখতে পারবেন, তত দিন তারা সেখানেই থাকবেন। আরও বলেন, ‘এখানে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন নিয়ে আমার এখন আর কোনো উদ্বেগ নেই, যেহেতু আমি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমরা একবারে একটি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করব।’ ইন্দোনেশিয়া হাজার হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। দেশটির উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮১ হাজার কিলোমিটার। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভাঙনের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ুবিদ্যা ও ভূপদার্থবিদ্যা সংস্থার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কর্মকর্তা কাদারসাহ রয়টার্সকে জানান, ১৯৯২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরে গড়ে ৪ দশমিক ২৫ মিলিমিটার হারে বেড়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই হার আরও বেড়েছে। কাদারসাহ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের একটি লক্ষণ হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।’ তিনি আরও জানান, কিছু ছোট দ্বীপ ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত মাত্রায় তোলার কারণে জাভার উত্তর উপকূলে ভূমি দেবে গেছে। রাজধানী জাকার্তায় এই সমস্যা বিশেষভাবে প্রকট। প্রায় ১ কোটি মানুষ এই শহরে বাস করে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম