Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

হাজার বছরের মন্দির নিয়ে শতবর্ষের সংঘাত

থাই-কম্বোডিয়া বৈরিতার নেপথ্য কারণ

Icon

শাবনুর নাহার

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে একাদশ শতাব্দীর এক প্রচীন মন্দির-তা মোয়ান থম। পাথরের ভেতর ইতিহাস খোদাই করা এই খেমার স্থাপত্য কেবল ধর্মচর্চার স্থানই নয়, বরং উপনিবেশিক মানচিত্রের বিভাজনরেখার জ্বলন্ত প্রতীক। সীমান্ত ভাগের এক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও এই প্রাচীন মন্দির ঘিরে বিরোধের আগুন আজও নিভেনি। বৃহস্পতিবার সকালে দুই দেশের পালটাপালটি হামলায় নতুন করে ফের রক্তাক্ত হয়েছে সীমান্ত অঞ্চল। উথলে উঠেছে ইতিহাসের পুরোনো ক্ষত। শুক্রবারও চলেছে সংঘর্ষ। দ্য ইকোনমিক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, ব্লুমবার্গ, দ্য হিন্দু।

থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস বহু পুরোনো। এই বিরোধের সূচনা হয়েছিল সেসময়, যখন খেমার সাম্রাজ্য বর্তমান থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়ার বড় একটি অংশে আধিপত্য বিস্তার করত-১৪শ থেকে ১৫শ শতাব্দীর মধ্যে। পরবর্তীতে খেমার সাম্রাজ্যের পতনের পর থাই ও ভিয়েতনামের রাজ্যসমূহ খেমার ভূমি দখল করে। এরপর ১৮০০ শতকের শেষদিকে ফরাসিরা কাম্বোডিয়াকে তাদের উপনিবেশে পরিণত করে। ফ্রান্স তখন থাইল্যান্ডকে (তখন সিয়াম বা শ্যাম দেশ নামে পরিচিত) একাধিক চুক্তির মাধ্যমে বাট্টামবাং ও সিয়েম রিয়েপ প্রদেশ ছাড়তে বাধ্য করে। ১৯০৭ সালে তৈরি ফরাসি মানচিত্রই পরবর্তী সময়ে সীমান্ত নির্ধারণের ভিত্তি হয়ে ওঠে। যদিও এটি একটি পানি-বিভাজিকা রেখার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু এটি ছিল অস্পষ্ট। ফলে তা পরবর্তীতে বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু এই মন্দির এলাকা নিয়ে দুই দেশে ঝামেলা এমনটা নয়। অন্তত ১০০০ বছরের পুরোনো প্রেয়া ভিবিয়ার শিব মন্দির নিয়েও দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দেয় যে মন্দির এলাকাটি কম্বোডিয়ার অধীনে থাকবে। কারণ ১৯০৭ সালে ফরাসিরা যে মানচিত্র তৈরি করেছিল তাতে এই এলাকা কম্বোডিয়ার অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু থাইল্যান্ডের দাবি, মন্দিরসংলগ্ন ৪.৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিতর্কিত এবং এ নিয়ে আদালত পরিষ্কার সিদ্ধান্ত দেয়নি। এখনও কিছু কিছু সীমান্ত অংশ পরিষ্কারভাবে নির্ধারিত নয় বলেই জানিয়েছে থাইল্যান্ড। ২০০০ সালে উভয় দেশ একটি যৌথ সীমান্ত কমিশন গঠন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সীমান্ত নির্ধারণে কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। ২০০৮ সালেও নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়, যখন কম্বোডিয়া এককভাবে প্রেয়া বিহার মন্দিরকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। এরপর বহুবার এই অঞ্চল নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। বিশেষ করে ২০১১ সালে এক সপ্তাহের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হন। পরে ২০১৩ সালে আইসিজে জানিয়েছে, মন্দিরসংলগ্ন এলাকাটিও কম্বোডিয়ারই অংশ। যদিও বহু থাই নাগরিক এখনো এই রায় মানতে নারাজ। একইভাবে তা মুয়েন থম মন্দির এলাকা নিয়েও চলছে বিরোধ। প্রথমদিকে এই মন্দিরগুলো হিন্দুদের উপাসনার কেন্দ্র ছিল। যেখানে শিবের পূজা হতো। কিন্তু সময়ের প্রবাহে খেমার সাম্রাজ্য বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করলে, এই মন্দিরগুলোও ধীরে ধীরে বৌদ্ধ উপাসনালয়ে পরিণত হয়।

তা মোয়ান থম ও প্রেয়া বিহার মন্দির দুটি দাংরেক পর্বতমালার একটি খাড়া পাহাড়ের ধারে অবস্থিত। প্রেয়া বিহার বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল হিসাবে স্বীকৃত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম