Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

খাবার আনতে গিয়ে গুলিতে মরছে শিশুরা

গাজায় তীব্র হচ্ছে দুর্ভিক্ষ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দিন যত যাচ্ছে তত তীব্র হচ্ছে গাজা দুর্ভিক্ষ। ইসরাইলের ত্রাণের বাধার মুখে অসহায় হয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা। প্রতিনিয়তই খালি পেটে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প ত্রাণ আসছে-কিন্তু ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য তা নগণ্য। একটু খাবারের সন্ধান পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে গাজাবাসী। খাবার আনতে গিয়ে ইসরাইলি গুলিতে মরছে গাজার ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। মিডল ইস্ট মনিটর।

গাজায় শিশুদের জীবন-মরণ সংগ্রাম নিয়ে কথা বলেন ডা. কুপার। তিনি ১১ বছর বয়সি এক ছেলের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তিনি বলেন, সেই ছেলেটি পরিবারের জন্য খাবার আনতে গিয়ে ইসরাইলি গুলিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি আরও জানান, ‘কিশোর-কিশোররা খাবার আনতে যাচ্ছিল এবং তাদের উপর গুলি চালানো হচ্ছে। তাদের আক্ষরিক অর্থেই শিকার করা হচ্ছে। তাদের শিকার করে হত্যা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জরুরি কক্ষে শিশুদের খাবারের অভাবে অজ্ঞান হতে দেখেছি। তারা সম্পূর্ণ ক্ষুধার্ত, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, হৃদরোগ এবং স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত। তাদের জীবন-হুমকির মধ্যে রয়েছে। এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’ ডা. কুপার জানিয়েছেন-গাজার মৌলিক খাদ্য সামগ্রী ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এক কেজি মাংস বা চিনির দাম প্রায় ১০০ ডলার। তিনি বলেন, ‘মানুষ বলছে যে এখানে খাবার আছে, কেন দাম এত বেশি এবং খাবারের এত অভাব। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবশ্যই সত্য নয়। যারা দাবি করছেন গাজায় কোনো অনাহার নেই তারা মিথ্যা বলছেন। আমি নিজের চোখে অনাহারে থাকা শিশুদের দেখেছি।’ রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুসারে-অনাহারে গাজায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ৯৩ জন শিশুসহ কমপক্ষে ১৬৩ জন অনাহারে মারা গেছে। ডা. কুপার আরও বর্ণনা করেছেন-কীভাবে অপুষ্টি এবং দূষিত পানি গাজার শিশুদের হত্যা করছে: ‘অপুষ্টির শিকার এবং পুষ্টির অভাব, ভিটামিনের অভাব... তারা তৃষ্ণার্তও। পানি নেই। এবং তাদের কাছে থাকা পানি নিম্নমানের। প্রচুর পরিমাণে ডায়রিয়া, জ্বর, সংক্রামক রোগ রয়েছে-কিছু আমরা চিকিৎসা সুবিধার অভাবের কারণে নির্ণয়ও করতে পারি না।’

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ছাড়বে না হামাস : এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার সময় অস্ত্র সমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশের খবর প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। গোষ্ঠীটি বলছে, যতদিন ফিলিস্তিনিদের জাতীয় অধিকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত সশস্ত্র লড়াই থামানো হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতি এ তথ্য জানিয়েছে হামাস। এর আগে উইটকফ দাবি করেছিলেন, হামাস অস্ত্রত্যাগে সম্মতি জানিয়েছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, মার্কিন দূত জিম্মিদের পরিবারকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময় হামাস জানিয়েছে তারা ‘অস্ত্রত্যাগের জন্য প্রস্তুত’। তবে উইটকফের দাবি প্রত্যাখ্যান করে শনিবার এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরাইলি দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে ততদিন পর্যন্ত সশস্ত্র কার্যক্রম জাতীয় ও বৈধ হিসাবে থাকবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যতদিন ফিলিস্তিনিদের জাতীয় অধিকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত না হবে এবং পূর্ণ সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, যেটির রাজধানী হবে জেরুজালেম-প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন পর্যন্ত সশস্ত্র লড়াই থামানো হবে না।

এদিকে গাজায় বিতর্কিত জিএইচএফ পরিচালিত মার্কিন ও ইসরাইল-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শনের একদিন পর শনিবার তেল আবিবে ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন উইটকফ। হামাস এর আগে মার্কিন দূতের গাজার সফরকে ‘পরিকল্পিত প্রদর্শনী’ বলে নিন্দা জানিছে। গোষ্ঠীটি বলছে, জনগণকে উপত্যকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভ্রান্ত করাই ছিল উইটকফের গাজা সফরের উদ্দেশ্য। গত কয়েক দিনে আরব দেশগুলো হামাসকে গাজা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার ও অস্ত্র পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে ফ্রান্স ও কানাডাসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

সিডনি হারবার ব্রিজে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ : রোববার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনপন্থিরা। বিক্ষোভকারীরা প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সিডনি হারবার ব্রিজে মিছিল করেন। তারা স্লোগান দিতে থাকে ‘এখনই যুদ্ধবিরতি চাই’ এবং ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বামপন্থি গ্রিনস পার্টির সিনেটর মেহরিন ফারুকি সিডনির ল্যাং পার্কে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, এই মিছিল ‘ইতিহাস সৃষ্টি করবে’। তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সিডনি শহরজুড়ে তারা কয়েকশ অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে ব্যানারও ছিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম