পুরো গাজা দখলের সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর
আমরা তার বার্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না-হামাস * প্রতিদিন গড়ে ২৮ শিশু নিহত-ইউনিসেফ * নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৬১ হাজার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুরো গাজা দখলের সিদ্ধান্ত নিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ বিষয়ে দেশটির নতুন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামিরকে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ করে এক লিখিত বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য পুরো গাজা দখলে আনা। এজন্য গাজার সর্বত্র আমাদের অভিযান চালাতে হবে। এমনকি হামাস যেসব অঞ্চলে ইসরাইলি জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি, সেসব অঞ্চলেও চালাতে হবে অভিযান। আমাদের এই লক্ষ্য যদি আপনার পছন্দ হয় তাহলে দায়িত্ব পালন করুন, নয়তো ইস্তফা দিন।’ সোমবার এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট, চ্যানেল ১২, ওয়াইনেট ও আই২৪নিউজ।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে চ্যানেল ১২-এর প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমিত সেগা বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ছাড়া হামাস আর কোনো জিম্মি মুক্ত করবে না। আর আমরা আত্মসমর্পণ করব না। তাই এখনই পদক্ষেপ না নিলে জিম্মিরা অনাহারে মারা যাবে এবং গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে যাবে।’ গত জানুয়ারিতে ইসরাইলের সেনাপ্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি। পদত্যাগের কারণ হিসাবে তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলেই পদত্যাগ করছেন তিনি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হালেভি পদত্যাগের দুই মাস পর মার্চ মাসে নতুন সেনাপ্রধান হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামির। এদিকে সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর নেতানিয়াহুর এমন পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিকল্পনাটি রুখে দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন এসেছে এমন সময়ে যখন মঙ্গলবার ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসছেন নেতানিয়াহু। কারণ অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছেছে। এদিকে ইসরাইলি হামলা ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখে গাজায় নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুধায় কাতর গাজাবাসীর জন্য আরও ত্রাণসহায়তা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপও বাড়ছে। হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করে আনার নিশ্চয়তা চেয়ে দেশের ভেতরেও কড়া চাপের মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু। সোমবার হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং তাদের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্যের কথা আবারো পুনর্ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু। এদিকে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইসরাইলি নৃশংসতায় চোখ বুজে থাকার অভিযোগ আনেন। বলেন, একগুঁয়েমি, অহংকার ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে গড়িমসি করার কারণে ইসরাইলি জিম্মিদের জীবনকে ‘ঝুঁকিতে ফেলার’ দায় নেতানিয়াহুর। সেনাপ্রধানকে নেতানিয়াহুর বার্তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। গোষ্ঠীটির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা তার বার্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। তার মূল লক্ষ্য যে পুরো গাজা দখল করা-তা আমরা আগে থেকেই জানি।’ কিন্ত এমন পরিস্থিতিতে দিন দিন তীব্র হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি আগ্রাসণ। বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় শিশুদের দুর্দশা সীমাহীন রূপ নিয়েছে। যুদ্ধ, ক্ষুধা এবং মানবিক সেবার অভাবে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু। এই হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার ইউনিসেফ জানায়, গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান ইসরাইলি অভিযানে গাজায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ শিশু নিহত হচ্ছে। মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা এবং মৌলিক সেবা ভেঙে পড়ার কারণে এ মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইউনিসেফ বলছে, এই শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে ‘বোমা হামলায়, অপুষ্টিতে, অনাহারে এবং সহায়তার অভাবে’।
