লোকসভায় নতুন বিল
‘এক মাস আটক’ মানেই পদচ্যুতি
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লোকসভায় বুধবার এক ঐতিহাসিক অথচ বিতর্কিত মুহূর্তের সাক্ষী রইল ভারতীয় সংসদ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংবিধান (১৩০তম সংশোধনী) বিল, ২০২৫ উপস্থাপন করতেই মুহূর্তে হট্টগোল শুরু হয়। প্রস্তাবিত এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে-কোনো প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী বা সংসদ-সদস্য যদি দুর্নীতি বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে অন্তত ৩০ দিনের জন্য আটক থাকেন, তবে ৩১তম দিনে তার পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খারিজ হবে। এই একটি প্রস্তাবই যেন আগুন ধরিয়ে দিল রাজনৈতিক মহলে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, সরকারের হাতে এভাবে সংবিধানকে বদলানো মানে গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা। অমিত শাহ লোকসভায় দাঁড়িয়ে যুক্তি দেন, ‘দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধী, দুর্নীতিগ্রস্ত বা কারাগারে থাকা কেউই মন্ত্রিত্বের আসনে বসে থাকতে পারেন না। জনগণের কাছে নৈতিক দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে এই আইন অপরিহার্য।’ তার যুক্তি, যতক্ষণ না আদালত নির্দোষ ঘোষণা করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ৩০ দিনের বেশি কারাবন্দি হয়ে থাকা কোনো জনপ্রতিনিধি মন্ত্রী পদে থাকলে সেটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি অন্যায্য বার্তা দেয়। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য একেবারেই ভিন্ন। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম থেকে শুরু করে আঞ্চলিক দলগুলোও একসঙ্গে দাবি তোলে, এই বিল রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সংসদে বলেন, ‘আইনের শাসন আদালত চালাবে, সংসদ নয়। সরকার বিচারব্যবস্থার আগে সাজা ঘোষণা করতে চাইছে।’ তৃণমূল সংসদ-সদস্য মহুয়া মৈত্র মন্তব্য করেন, ‘আজ মন্ত্রিত্ব, কাল এমপি-এমএলএ পদ-এভাবে সংবিধানকে শাসকের সুবিধামতো বাঁকানো চলতে পারে না।’
বিরোধীরা ওয়েলে নেমে স্লোগান দেয়, ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’, ‘সংবিধান বাঁচাও’। কয়েকজন সংসদ-সদস্য বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে লোকসভার স্পিকারকে শেষ পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত রাখতে হয়। সংসদ কক্ষে অগ্নিগর্ভ পরিবেশে দিনের অন্যতম বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ের ছবি ফুটে ওঠে। সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাণার্জি। এক্স (টুইটার)-এ দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি অভিযোগ করেন, এই বিলের মাধ্যমে আদালত ও বিচারব্যবস্থার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে সবকিছু কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে কেন্দ্র। মমতার ভাষায়, ‘এটি গণতন্ত্রে হিটলারি আঘাত। মানুষ ভোট দিয়ে সরকার গড়ে, আর সেই প্রক্রিয়াকেই ধ্বংস করা হচ্ছে।’
তিনি সতর্ক করেন, ইডি-সিবিআইয়ের মতো তদন্ত সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী রাজ্য সরকারগুলোকে অচল করার পরিকল্পনাই আসল উদ্দেশ্য। ‘গণতন্ত্রকে রক্ষার লড়াই শুরু করতে হবে এখনই’ আহ্বান জানিয়েছেন মমতা।
