Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

চীনে এসসিও সম্মেলনের শেষদিন

নয়া বিশ্বব্যবস্থার ভিত গাড়লেন শি

নতুন শাসনের ভিশন উন্মোচন: সফরে একই গাড়িতে মোদি-পুতিন * ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে : পুতিন * চীনা ড্রাগনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ভারতীয় হাতি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে নয়া বিশ্বব্যবস্থার ভিত গাড়লেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন, পুরোনো ক্ষমতার খেলা, আধিপত্যবাদ আর শীতল যুদ্ধের মানসিকতা দিয়ে বিশ্বকে আর এগিয়ে নেওয়া যাবে না। এবার প্রয়োজন বহুমুখী ও ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। এই প্রেক্ষাপটে নতুন এক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্তনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন শি। বিশ্ব নেতাদের কাছে ‘গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (এএও)’-এর প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। যার মূল লক্ষ্য হলো-ন্যায়ভিত্তিক, সমতাভিত্তিক ও টেকসই নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা। রোববার শুরু হওয়া দুই দিনের এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সোমবার বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের নেতারদের কাছে এই প্রস্তাবের ঘোষণা দেন শি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্মেলন চীন ও রাশিয়ার জন্য কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বাধীন শাসনব্যবস্থার সামনে বিকল্প বিশ্বশক্তি হিসাবে নিজেদের প্রমাণ করার কৌশল। এএফপি, সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনটির মূল লক্ষ্য ছিল চীনের বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রদর্শন এবং রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বকে তুলে ধরা। শি বলেছেন, ‘কিছু দেশের নিজেদের নিয়ম অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।’ এখানে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি। সম্মেলনে এসসিও সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এ বছর ২ বিলিয়ন ইউয়ান (২৮০ মিলিয়ন ডলার) অনুদান এবং আগামী তিন বছরে এসসিও ব্যাংক কনসোর্টিয়ামকে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ইউয়ান (১.৪ বিলিয়ন ডলার) ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই বৃহৎ বাজারের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুবিধা বাড়ানো।’ এর পর পরই গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা করেন চীনা প্রেসিডেন্ট। নিজের বক্তব্যে শি জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সমতা, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ-এসব নীতিই হবে নতুন এই উদ্যোগের ভিত্তি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সব দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানবজাতির জন্য একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব হবে।

এদিকে সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশন শেষে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে একই গাড়িতে চড়ে হোটেলে গেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি, পুতিন এবং শি জিনপিংকে একান্তে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। তিনজনকেই খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে। তিন নেতার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিও পোস্ট করেছেন মোদি। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে তিন নেতার বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতা সামনে এলো। এ ঘটনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি স্পষ্টবার্তা বহন করছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে মোদির এই সফরকে এক প্রকার পরাজয় হিসাবেই দেখছেন তার নিজ দেশের রাজনীতিকরা। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, তিয়ানজিনে চীনা ড্রাগনের কাছে ভারতীয় হাতি আত্মসমর্পণ করেছে। মোদিকে ব্যর্থ নেতা বলেও কটাক্ষ করছেন অনেকেই। অন্যদিকে শি-মোদির সঙ্গে আলোচনার পর পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ বন্ধ করা উচিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, শিগ্গিরই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হবে বলে আশাবাদী তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিকল্প বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার মডেল দেখাতেই এই সম্মেলনকে কাজে লাগিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র যখন একের পর এক বহুপক্ষীয় সংস্থা থেকে সরে আসছে এবং অস্থির নীতি গ্রহণ করছে, ঠিক তখনই এসসিও সম্মেলনকে বেইজিং নিজস্ব নেতৃত্বের প্রমাণ দেখানোর সুযোগ হিসাবে দেখছে। একই সঙ্গে এই সম্মেলনকে ভারত-চীন সম্পর্ক মেরামতের সুযোগ হিসাবেও ব্যবহার করেছে বেইজিং।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম