এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্র
আবদুল কুদ্দুস
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রভাষক, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা
১ম অধ্যায় : যুক্তিবিদ্যা পরিচিতি
উদ্দীপক :
দৃশ্যকল্প : ১ প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের আবশ্যিক পদ্ধতি প্রদানকারী প্রারম্ভিক বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তিবিদ্যা।
দৃশ্যকল্প : ২ সঠিক যুক্তি থেকে ভ্রান্ত যুক্তির পার্থক্যকারী নিয়মসমূহের আলোচনা হচ্ছে যুক্তিবিদ্যা।
ক. যুক্তিবিদ্যা কিসের আকার নিয়ে আলোচনা করে?
খ. logic শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা কর।
গ. দৃশ্যকল্প : ১ এ যুক্তিবিদ্যার কোন দিকটির ইঙ্গিত এসেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প : ১ এর চেয়ে ২ এর বক্তব্যে যুক্তিবিদ্যার স্বরূপ বেশি স্পষ্টতর হয়েছে- মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ক. যুক্তিবিদ্যা যুক্তি বা চিন্তার আকার নিয়ে আলোচনা করে।
উত্তর: খ. যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘logic’ শব্দটি গ্রিক logos শব্দ থেকে এসেছে। logos শব্দের অর্থ হচ্ছে চিন্তা, ভাষা, শব্দ বা উক্তি। প্রাচীন গ্রিসে logos শব্দটি ব্যবহৃত হতো mythos (কল্প-কাহিনী) শব্দের বিপরীতে। mythos দ্বারা বোঝানো হতো অনুভূতি বা আবেগ সংক্রান্ত বিষয়কে, অন্যদিকে logos দ্বারা যৌক্তিক চিন্তা সংক্রান্ত বিষয়সমূহকে নির্দেশ করা হতো। অর্থাৎ উৎপত্তির সময় থেকেই এ শব্দের উদ্দেশ্য ছিল যৌক্তিক চিন্তা। চিন্তার বাস্তবরূপই হল ভাষা, এজন্য শব্দটি দ্বারা ভাষাকেও বোঝানো হতো। তাই ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায় ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার বিজ্ঞানই হচ্ছে যুক্তিবিদ্যা।
উত্তর : গ. দৃশ্যকল্প-১ এর উক্তিটি যুক্তিবিদ্যার জনক এরিস্টটলের। এখানে যুক্তিবিদ্যাকে অন্যসব বিজ্ঞানের আলোচনা ও গবেষণার মূল উপাদান হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এরিস্টটলের যুক্তিবিষয়ক গ্রন্থ-সংকলন ‘অর্গানন’-এর শুরুতেই এসেছে, Logic is the instrument by means of which we come to knwo anything অর্থাৎ কোনো কিছু জানার প্রথম উপকরণই হচ্ছে যুক্তিবিদ্যা। তিনি তার শিক্ষক সক্রেটিস ও প্লেটোর মাধ্যমে যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান লাভ করেন, তবে অন্যান্য গ্রিক দার্শনিক যেমন, পিথাগোরাস, পারমেনাইডিস, জেনো প্রমুখের আলোচনা থেকেও তিনি ধারণা নেন। এসব লব্ধ জ্ঞান এবং তার নিজস্ব গবেষণার সমন্বয়ে তিনি যুক্তিবিদ্যার একটি ব্যাপক ও সুগঠিত রূপ দান করেন। এজন্যই তাকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলা হয়। উদ্দীপকে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে এরিস্টটলের যে বক্তব্য এসেছে তাতে যুক্তিবিদ্যার মৌলিক কাজেরই ইঙ্গিত রয়েছে।
যুক্তিবিদ্যাকে তিনি বলেছেন চিন্তার বিজ্ঞান। তার মতে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হল চিন্তা। চিন্তা পদ্ধতি সঠিক না হলে যথার্থ জ্ঞান অনুসন্ধান সম্ভবপর হয় না। এ জন্যই চিন্তাকে সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ করতে হয়। আর যুক্তিবিদ্যাই চিন্তাকে সুশৃঙ্খল করার পথ দেখায়। এজন্যই এরিস্টটল যুক্তিবিদ্যাকে সব বিজ্ঞান ও কলার নিয়ম সরবরাহকারী প্রারম্ভিক বিদ্যা বলেছেন।
উত্তর : ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এর উক্তিটি যুক্তিবিদ আইএম কপির আর প্রথমটি এরিস্টটলের। এরিস্টটলের বক্তব্যের চেয়ে কপির বক্তব্যেই যুক্তিবিদ্যার স্বরূপ বেশি স্পষ্ট হয়েছে।
আমেরিকান দার্শনিক ও যুক্তিবিদ কপি (১৯১৭-২০০২) তার Introduction to Logic গ্রন্থের শুরুতেই অন্যান্য যুক্তিবিদের যুক্তিবিদ্যা সংক্রান্ত ধারণাসমূহ খণ্ডন করেন। পূর্ববর্তী যুক্তিবিদদের অনেকেই যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তার নিয়মাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেন। কিন্তু তার মতে চিন্তার সামগ্রিক ক্ষেত্রসমূহ মনোবিজ্ঞানের বিষয়। চিন্তার বিভিন্ন প্রকারের অনুশীলনের কাজ মনোবিজ্ঞানের। যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তার বিজ্ঞান বললে যুক্তিবিদ্যা মনোবিজ্ঞানের শাখায় পরিণত হয়। এরিস্টটলের মতানুযায়ী যুক্তিবিদ্যা চিন্তার বিজ্ঞান। যোসেফও এরিস্টটলের অনুসরণ করেন। কিন্তু কপি মনে করেন যুক্তিবিদ্যা চিন্তনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যেখানে আশ্রয়বাক্য থেকে কেবল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া জানা যায়। সব ধরনের চিন্তন এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। এরিস্টটল যুক্তিবিদ্যাকে সব কিছু আলোচনার প্রথম উপকরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু কপি বলেন, যুক্তিবিদ্যার মূল কাজ হচ্ছে সঠিক যুক্তি নির্ণয় করা এবং ভ্রান্ত যুক্তির ভ্রান্তি উদ্ঘাটন করা। সব বিষয়ের জন্য এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। কপি জেভন্সের সংজ্ঞার প্রশংসা করেছেন। জেভন্সের মত হচ্ছে, যুক্তিপদ্ধতির বিজ্ঞান। মিলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মিল যুক্তিবিদ্যাকে অনুমান ও মানসিক ক্রিয়ার বিজ্ঞান বলে ভুল করেছেন। যুক্তিবিদ্যা মূলত সঠিক ও নির্ভুল যুক্তি প্রদানের নিয়মাবলি।
কপির সংজ্ঞায় যুক্তিবিদ্যাকে বৈধ যুক্তি প্রদানের কলাকৌশল শিক্ষার বিদ্যা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে যুক্তিবিদ্যার প্রায়োগিক দিকটার প্রাধান্য এসেছে। তবে কপি এ কথা বলতে চাননি যে, যুক্তিবিদ্যা পড়লেই কেবল সঠিক যুক্তি দেয়া সম্ভব, বরং তিনি বলতে চেয়েছেন যুক্তিবিদ্যা পড়লেই সঠিক ও ভ্রান্ত যুক্তির পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। তবে যিনি এ পার্থক্য করতে সক্ষম হবেন তার পক্ষে নির্ভুল যুক্তি প্রদানও সম্ভবপর হবে।
তাই বলা যায়, এরিস্টটলের সংজ্ঞার চেয়ে কপির সংজ্ঞাটি যুক্তিবিদ্যার পরিচয় প্রদানে অধিকতর উপযুক্ত।
