Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা: বাংলা

Icon

সবুজ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ মে ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সহকারী শিক্ষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মোহাম্মদপুর, ঢাকা

পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত অনুচ্ছেদের প্রশ্নোত্তর

শখের মৃৎশিল্প

১. মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে আমরা বলি মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হল মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। দোঁআশ মাটি তেমন আঠালো নয়। আর বেলে মাটি তো ঝরঝরে- তাই এগুলো দিয়ে মাটির শিল্প হয় না। এঁটেল মাটি হলেই যে তা দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে তাও নয়। এজন্য অনেক যতœ আর শ্রম দরকার। দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। কুমারদের কাছে এসব খুব সহজ। কারণ তারা বংশ পরম্পরায় এ কাজ করে আসছে।

২। ক) মৃৎশিল্প বলতে কী বোঝ?

খ) মৃৎশিল্পের উপকরণ সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ।

গ) মৃৎশিল্পের জন্য হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন হয় কেন?

২। উত্তর :

ক) মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্মকে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প বলে।

মৃৎশিল্প বাংলার প্রাচীন শিল্পকর্ম। এর প্রধান উপকরণ হল মাটি। পরিষ্কার এঁটেল মাটি দিয়ে দক্ষ হাতের নিপুণ কারুকার্যে যে শিল্পকর্ম তৈরি হয় তাকেই মৃৎশিল্প বলে। মাটির তৈরি শখের হাঁড়ি, টেরাকোটা, পুতুল, মাছ, পেয়ালা, সুরাই, ফুলদানি- এ সবই মৃৎশিল্পের নিদর্শন।

খ) মৃৎশিল্প তৈরিতে নানা ধরনের উপকরণ ব্যবহৃত হয়।

মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি, তবে সব ধরনের মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। এর জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ মাটি বেশ আঠালো, তাই যে কোনো জিনিস তা দিয়ে তৈরি করা যায়। এছাড়া কাঠের চাকা, চুলা, ছোটখাটো কিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম এ কাজে ব্যবহৃত হয়। এসবের পাশাপাশি কুমোরদের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি দক্ষতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। মৃৎশিল্প তৈরিতে এর কারিগরদের অনেক যতœ ও শ্রমের দরকার হয়।

গ) মৃৎশিল্পের জন্য হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন হয় কারণ এর জন্য সৌন্দর্য ও কারুকার্য উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলার অতি প্রাচীন শিল্প হল মৃৎশিল্প। এর প্রধান উপকরণ পরিষ্কার এঁটেল মাটি। কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এ ধরনের মাটি দিয়ে বিভিন্ন তৈজসপত্র ও ঘর সাজানোর উপকরণ তৈরি করেন। এ কাজের মধ্যে শৈল্পিক ছোঁয়া থাকে। মানুষের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি এগুলো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই এর কাজের জন্য নিপুণ হাতের দক্ষতার দরকার হয়। হঠাৎ করে যে কেউ-ই এ মৃৎশিল্পের কাজ করতে পারে না। এর জন্য বহুদিনের শ্রম ও যতেœর দরকার হয়। কারিগরি জ্ঞানের পরিপক্বতা না থাকলে মৃৎশিল্প সৃষ্টি করা যায় না। কারণ মৃৎশিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল এর শৈল্পিক সৌন্দর্য।

২. মামা বললেন, তোমাদের কাল কুমারপাড়ায় নিয়ে যাব। পরদিন আমরা দেখতে গেলাম কুমারপাড়া। আনন্দপুর গ্রামের উত্তর দিকে আট-দশ ঘর বসতবাড়ি। এই নিয়ে কুমারপাড়া। এখানে সবাই ব্যস্ত। কেউ মাটির তাল চাক করে সাজিয়ে রেখেছেন। কেউ-বা কাঠের চাকায় মাটি লাগিয়ে নানা আকারের পাত্র বানাচ্ছেন। কেউ-বা এগুলো সারি সারি করে শুকাতে দিচ্ছেন রোদে। পাশেই রয়েছে মাটির জিনিস পোড়ানোর চুলা। উঁচু ছোট্ট ঢিবির মতো এই চুলা। মাটির পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। আর ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও এ কাজ করছে। মামা বললেন, হাঁড়ি কলসি ছাড়াও আমাদের দেশে এক সময় সুন্দর পোড়ামাটির ফলকের কাজ হতো। এর অন্য নাম টেরাকোটা। বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে এই টেরাকোটার কাজ রয়েছে। মাটির ফলকে ছবি এঁকে শুকিয়ে পোড়ানোর পর এগুলো এমন সুন্দর হয়ে ওঠে! ছোট ছোট ফলকের পাশাপাশি জোড়া দিয়ে বড় করা যায়। পোড়ামাটির এই ফলক বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প। মামা বললেন, টেরাকোটা বা পোড়ামাটির এসব কাজ এ দেশে শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে।

প্রশ্ন : ২। ক) টেরাকোটা কী?

খ) কীভাবে টেরাকোটা তৈরি করা হয়? কোথায় এর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়?

গ) অনুচ্ছেদের আলোকে একটি কুমারপাড়ার বর্ণনা দাও।

উত্তর : ২। ক) টেরাকোটা হল পোড়ামাটির ফলকের কারুকার্য। টেরাকোটা আমাদের দেশের অনেক প্রাচীন একটি মৃৎশিল্প। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে টেরাকোটা তৈরি করা হয়। এরূপ একটার পরে একটা ফলক জোড়া দিয়ে বড় আকারের নকশা বা ছবি তৈরি করা হয়। যা আমাদের দেশে প্রাচীন সভ্যতায়ও প্রচলিত ছিল।

খ) নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হয় টেরাকোটা।

পোড়ামাটির এই ফলক বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প। মাটির ফলকে ছবি এঁকে তা শুকিয়ে পোড়ানোর পর এগুলো খুব সুন্দর হয়ে ওঠে। ছোট ছোট ফলকগুলো পাশাপাশি জোড়া দিয়ে বড় করা হয়। তাতে বিভিন্ন ধরনের বড় আকারের নকশা, লতাপাতা, ছবি প্রভৃতি ফুটে ওঠে। শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে এই টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়। হাজার বছর আগে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির এসব কাজ এ দেশে শুরু হয়েছিল।

গ) কুমারপাড়া হল যেখানে মৃৎশিল্পের কারিগররা একত্রে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বাস করে ও বিভিন্ন মৃৎ উপকরণ তৈরি করে এমন জায়গা।

কুমাররা গ্রামের কোনো একটা অংশে একত্রে বাস করে। যাকে কুমারপাড়া বলে। এখানে সবাই খুব ব্যস্ত থাকে। কেউ মাটির তাল চাক করে সাজিয়ে রাখে। কেউ-বা কাঠের চাকায় মাটি লাগিয়ে নানা আকারের পাত্র বানানোর কাজ করে। কেউ-বা এগুলো সারি সারি করে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। প্রত্যেক ঘরের পাশেই থাকে মাটির জিনিস পোড়ানোর চুলা। উঁচু ছোট্ট ঢিবির মতো এই চুলা। সেখান থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। মাটির পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও অনেক সময় সেখানে কাজ করে। কুমারপাড়ায় বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্প সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। কিছু থাকে কাঁচা অবস্থায়, কিছু থাকে পোড়ানো। হাঁড়ি, কলস, সানকি, পেয়ালা, সরা, পুতুল, মটকা, জালা প্রভৃতি মৃৎশিল্প কুমারপাড়ায় দেখতে পাওয়া যায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম