এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয়পত্র
আবদুল কুদ্দুস
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রভাষক
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা
যৌক্তিক সংজ্ঞা
উদ্দীপক
যুক্তিবিদ্যার ছাত্র সাকিব ও সিফাত ক্লাসে প্রতিদিন পড়া শিখে আসে। একদিন তারেক স্যার বাংলা ক্লাসে সাকিবকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ব্যাকরণ মানে কী?’ সাকিব জবাব দেয়, ‘ব্যাকরণ মানে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ।’ তখন সিফাত দাঁড়িয়ে বলল, ‘ব্যাকরণ মানে ভাষা শেখার বিভিন্ন নিয়ম-কানুন জানা ও নিয়মগুলো বিভিন্ন বাক্যে প্রয়োগ করার কৌশল জানা। সুন্দর ভাষায় কথা বলার জন্য ব্যাকরণ জানা প্রয়োজন।’
ক) যৌক্তিক সংজ্ঞা কাকে বলে?
খ) দুর্বোধ্য সংজ্ঞা কেন হয়?
গ) সাকিবের সংজ্ঞায় কোন ধরনের অনুপপত্তি ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) সিফাতের কথাগুলোয় কি সংজ্ঞার প্রতিফলন ঘটেছে? মন্তব্য দাও।
উত্তর : ক.
কোনো পদের জাত্যর্থের সুস্পষ্ট বিবৃতিকে যৌক্তিক সংজ্ঞা বলে।
উত্তর : খ.
সংজ্ঞার দ্বিতীয় নিয়ম লঙ্ঘন করলে দুর্বোধ্য সংজ্ঞা হয়। দ্বিতীয় নিয়মটি হচ্ছে- ‘যে পদের সংজ্ঞা দিতে হবে সে পদ থেকে সংজ্ঞা স্পষ্টতর হবে; সংজ্ঞায় কোনো দুর্বোধ্য বা রূপক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না’। এ নিয়ম লঙ্ঘন করলে দুর্বোধ্য ও রূপক সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটে। যেমন, বৃক্ষ হল সবিতাতপ নিরোধক পাদপ। এখানে বৃক্ষের সংজ্ঞায় যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হল তা বৃক্ষের অর্থ স্পষ্ট করার চেয়ে বরং আরও দুর্বোধ্য ও জটিল করে ফেলেছে। তাই এটি দুর্বোধ্য সংজ্ঞা।
উত্তর : গ.
উদ্দীপকে সাকিব ব্যাকরণের যে সংজ্ঞা দেয় তা হল- ব্যাকরণ মানে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। এটি মূলত ব্যাকরণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ। এখানে চক্রক সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটেছে।
সংজ্ঞার তৃতীয় নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে চক্রক সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটে। তৃতীয় নিয়মটি হচ্ছে- যে পদের সংজ্ঞা দিতে হবে সংজ্ঞায় সে পদ বা তার কোনো সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়মের ব্যতিক্রম করলে মূলত জাত্যর্থের প্রকাশ ঘটে না। জাত্যর্থ হল পদের আসন্নতম জাতি ও বিভেদকে লক্ষণের সমন্বয়। সমার্থক শব্দে তা থাকে না। যেমন- শিক্ষক হচ্ছেন তিনি, যিনি শিক্ষাদান করেন। এখানে শিক্ষক পদটির জাত্যর্থ আসেনি বরং একই শব্দ দিয়ে অন্যভাবে শব্দটির অর্থ করা হয়েছে। সাকিবের উক্তি, ‘ব্যাকরণ মানে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ’- এখানেও সমার্থক শব্দের মাধ্যমে শব্দটিকে স্পষ্ট করা হয়েছে, জাত্যর্থ উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং আমরা বলতে পারি সাকিবের সংজ্ঞায় চক্রক সংজ্ঞাজনিত অনুপপত্তি ঘটায় সংজ্ঞাটি যথার্থ সংজ্ঞা হয়নি।
উত্তর : ঘ.
উদ্দীপকে সিফাত ব্যাকরণ সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছে সেগুলোতে ব্যাকরণের সংজ্ঞা আসেনি বরং ব্যাকরণ সম্পর্কে একটি বর্ণনা এসেছে। নিচে এর কারণ উল্লেখ করা হল-
১. সংজ্ঞায় কোনো পদের জাত্যর্থের সুস্পষ্ট বিবৃতি থাকে কিন্তু বর্ণনায় ওই পদ সম্পর্কে জাত্যর্থের বাইরে যে কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকতে পারে। যেমনটি এখানে ব্যাকরণ সম্পর্কে জাত্যর্থ উল্লেখ না করে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। তাই সিফাতের কথাগুলো সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।
২. এখানে ব্যাকরণ সম্পর্কিত কথাগুলোকে যৌক্তিক সংজ্ঞার ৫টি নিয়মের কোনোটির অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয় তাই এগুলোকে সংজ্ঞা বলা যায় না। কারণ সংজ্ঞা হতে হলে নিয়মের অনুসরণ করতে হয়।
৩. সংজ্ঞা হচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া। অথচ উদ্দীপকের কথাগুলো একাধিক বাক্যের সমন্বয়। সুতরাং এটি একটি বর্ণনা, সংজ্ঞা নয়।
৪. সংজ্ঞায় আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ থাকতে হয়, কিন্তু সিফাতের কথায় সে ধরনের কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। তাই একে সংজ্ঞা বলা যায় না।
৫. সুতরাং আমরা বলতে পারি সিফাতের কথাগুলোয় সংজ্ঞার নিয়মের অনুসরণ হয়নি তাই তাকে সংজ্ঞা বলা যায় না।
