Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান

Icon

আফরোজা বেগম

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা

জীবনের জন্য পানি

[পূর্বে প্রকাশিত অংশের পর]

প্রশ্ন : আর্সেনিক দূষণের কারণ কী?

উত্তর : আর্সেনিক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বা বিষ। মাটির নিচে আর্সেনিকের খনি থাকে। আর্সেনিক যদি ভূগর্ভের পানির স্তরের সংস্পর্শে আসে তাহলে তা পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করে। কারণ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে মানুষের দেহে আর্সেনোকোসিস রোগ দেখা দেয় ও মানুষ এ রোগে মারাও যেতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের খনি থাকলে ও ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করলে তা পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করে। ফুটালেও পানি আর্সেনিকমুক্ত করা যায় না।

প্রশ্ন : পানি দূষণের প্রধান কারণগুলো লিখ।

উত্তর : পানি দূষণ : পানিতে ক্ষতিকর কোনো কিছু মিশে থাকলে তাকে দূষিত পানি বলে। আর পানির এ অবস্থাকেই পানি দূষণ বলে।

পানি দূষণের কারণ : মানুষের অসাবধান কাজের ফলে পানিতে নানা কিছু মিশে পানি দূষিত হয়। নিচে পানি দূষণের প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-

* পুকুর বা নদীর পানিতে বাসন-কোসন মাজা, গোসল করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ গোসল করান, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব করা, মৃতদেহ ফেলা প্রভৃতি উপায়ে নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি দূষিত হয়।

* কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র, বিছানাপত্র ও জামাকাপড় পুকুর, খাল-বিল বা নদীর পানিতে ধুলে রোগ জীবাণু মিশে পানি দূষিত করে।

* কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে ফেললে পানি দূষিত হয়। কারণ এ বর্জ্য পদার্থে ক্ষতিকর পদার্থ মিশে থাকে।

* কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে খাল-বিল ও নদীর পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে।

* বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় গ্রামগঞ্জের অঞ্চল ডুবে যায়। এতে মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখির মলমূত্র পানিতে মিশে পানযোগ্য পানিকে দূষিত করে তোলে।

* এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে আর্সেনিক দূষণ হয়ে থাকে। মাটির নিচে আর্সেনিকের খনিজ থাকে। আর্সেনিক ভূগর্ভের পানির স্তরের সংস্পর্শে এলে তা পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে।

সুতরাং, জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এবং পানি দূষণের ব্যাপারে জনসচেতনতার অভাবকেই পানি দূষণের প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : পানি দূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?

উত্তর : পানি দূষণ রোধ বলতে পানি দূষণের কারণগুলো দূর করা বোঝায়। নানাভাবে পানি দূষণ রোধ করা যেতে পারে। যেমন-

* পুকুর বা নদীর পানিতে বাসন-কোসন মাজা, গোসল করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ গোসল করান, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব করা, প্রাণীর মৃতদেহ ফেলা ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে।

* বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ যেমন- কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র, বিছানাপত্র ও জামাকাপড় পুকুর, খাল-বিল বা নদীর পানিতে ধোয়া যাবে না।

* কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে যাতে না মিশে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

* কৃষিকাজে কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

* বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় নলকূপগুলোর মুখ পলিথিন দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে।

* জলজ যানবাহনের তেল, ময়লা-আবর্জনা থেকে যেন পানি দূষিত না হয় সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা জলযান কর্তৃপক্ষকে গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রথমে জনসচেনতা গড়ে তুলতে হবে। পরে ইউরোপের মতো কঠিন জল আইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পানি দূষণ রোধ করতে হবে।

সুতরাং ওপরের উপায়ে পানি দূষণ রোধ করা যায়।

প্রশ্ন : কাচের গ্লাসে বরফের টুকরা রাখলে গ্লাসের বাইরের গায়ে পানি জমে কেন?

উত্তর : আমরা জানি, বরফ হলো পানির কঠিন অবস্থা। আর জলীয়বাষ্প হচ্ছে পানির বায়বীয় অবস্থা। পানিকে তাপ দিলে তা বাষ্পে পরিণত হয়। আর পানিকে ঠাণ্ডা করলে তা বরফে পরিণত হয়। জলীয়বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে তা জমে পানি হয়। কাচের গ্লাসে বরফের টুকরা রাখলে গ্লাসের বাইরে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি জমে। গ্লাসের ভেতর থেকে পানি বাইরে আসতে পারে না। তাই গ্লাসের বাইরের পানি গ্লাসের বরফ থেকে আসেনি। বরফের ঠাণ্ডার কারণে গ্লাসটি ঠাণ্ডা হয়েছে। সে ঠাণ্ডার পরশে বায়ুর জলীয়বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে পানি কণায় পরিণত হয়েছে ও গ্লাসের বাইরের গায়ে পানি জমে।

প্রশ্ন : পানি দূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ দাও।

উত্তর : পানি দূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ-

* কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে সবুজ সার ব্যবহার করে আমরা পানি দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি।

* রান্না ঘরের নিষ্কাশন নালায় ও টয়লেটে রাসায়নিক বর্জ্য এবং তেল না ফেলে দূষণ রোধ করতে পারি।

* পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা সাগরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে অথবা সমুদ্র সকৈতে পড়ে থাকা ময়লা এবং হ্রদ কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে আমরা পানি পরিষ্কার রাখতে পারি।

সুতরাং, আমরা আমাদের সচেতনতা বাড়িয়ে আমাদের কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন করে পানি দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম