পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
আফরোজা বেগম
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক
স্থান ও নিদর্শন
প্রশ্ন : সোমপুর মহাবিহারে কী কী নিদর্শন পাওয়া গেছে।
উত্তর : সোমপুর মহাবিহার :
বাংলার অন্যতম পুরাকীর্তি হলো সোমপুর মহাবিহার। এটি পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবিস্থত। এটা পাল রাজাদের একটি প্রত্নস্থল। এটি প্রায় ২৪ মিটার উঁচু ও ০.১০ বর্গকিলোমিটার বা ১০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি রাজা ধর্মপালের শাসনামলে (৭৮১-৮২১ খ্রি.) এটি নির্মিত হয়।
নিদর্শন :
* বিহারটির চারদিকে ১৭৭টি কুঠুরি রয়েছে। মাঝখানে সুউচ্চ একটি মন্দির রয়েছে। তার চারপাশে রয়েছে অনেক ছোট মন্দির এবং পুকুর।
* এ ছাড়া রন্ধনশালা, ভোজনশালা, পাকা নর্দমা ও চিত্র পাওয়া গেছে। এগুলোর বেশিরভাগ বাংলার জীবজন্তুর মূর্তি।
* এ ছাড়া চুনাবালি ও ধাতব মূর্তি পাওয়া গেছে।
* পাহাড়পুরের পুরাকীর্তি প্রাচীন বাংলার ধর্ম ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম।
আমরা এসব নিদর্শন স্বচক্ষে ঘুরে দেখব ও প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করব।
প্রশ্ন : সোনারগাঁয়ে কোন আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে?
উত্তর : বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের অন্যতম হলো সোনারগাঁ। ঢাকা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে সোনারগাঁ অবস্থিত। বর্তমানে এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত।
মধ্যযুগে মুসলিম শাসন আমলে বেশ কিছুকাল এখানে বাংলা সুলতানদের রাজধানী ছিল। মুঘল আমলের বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঈসা খাঁ এবং তার পুত্র মুসা খাঁর রাজধানী ছিল এখানে। সে সময়ের গৌরবময় দিনের কিছু নিদর্শন বর্তমান সোনারগাঁয়ে- এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিরাট আকারের দীঘি, মাটির স্তূপ, ধ্বংসপ্রাপ্ত কেল্লা, মসজিদ এবং পানাম নগরের ধ্বংসাবশেষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সুতরাং সোনারগাঁয়ে মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলের নিদর্শন রয়েছে।
প্রশ্ন : লালবাগ দুর্গের নিদর্শনগুলোর বর্ণনা দাও।
উত্তর : লালবাগ দুর্গ :
এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এটি বর্তমান পুরান ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে অবস্থিত।
১৬৭৮ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আযম ঢাকার সুবেদার থাকাকালে এটি তৈরির কাজ শুরু হয়। তাকে ঢাকা ত্যাগ করতে হয় বলে এটির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যেতে হয়। তাই এটি আর সম্পন্ন হয়নি।
নিদর্শন :
* এটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি।
* এর চারদিকে ইটের তৈরি উঁচু প্রাচীর রয়েছে।
* এ দুর্গটির মাঝখানে খোলা জায়গা আছে।
* মাঝখানে দোতলা ছোট্ট সুরম্য প্রাসাদ ছিল। বর্তমানে সেখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
* এ দুর্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি প্রবেশপথ রয়েছে।
* দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে গোপনে বের হওয়ার জন্য অনেক সুড়ঙ্গ পথ ছিল।
* এ দুর্গের ভেতরে ‘দিওয়ান-ই-আম’ নামক দরবার হল, তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও একটি পুকুর রয়েছে।
* বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মাজার রয়েছে।
সুতরাং লালবাগের কেল্লা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। আমরা তা পরিদর্শন করে জ্ঞান অর্জন করব।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন কেন?
উত্তর : বাংলাদেশের পুরোটাই যেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের এক উন্মুক্ত জাদুঘর। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহনকারী নানা নিদর্শন। এসব নিদর্শন আমাদের অতীত সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। আমরা এসব ঐতিহ্যে গৌরব বোধ করি। এসব নিদর্শন আমাদের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করে। তাই এগুলোর প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল হব। আমরা এ স্থান পরিদর্শন করব, জানব ও এদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করব। কারণ এগুলো আমাদের অতীত ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করছে।
