একাদশ শ্রেণির যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্র
আবদুল কুদ্দুস
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রভাষক, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা
যুক্তিবিদ্যার প্রায়োগিক দিক
অর্ণব ও জয়দেব দুই ভাই। উভয়ই মেধাবী শিক্ষার্থী। অর্ণব যে কোনো বিষয় যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে। এইচএসসিতে পড়ার সময় সে যুক্তিবিদ্যা নেয়। তখন থেকেই সে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে অপছন্দ করে। অন্যদিকে জয়দেব তার চেয়ে জুনিয়র। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। কারণ খুব সহজেই এর মাধ্যমে সে তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারে।
ক. নীতিবিদ্যা কাকে বলে?
খ. যুক্তিবিদ্যার চেয়ে দর্শনের পরিধি বেশি কেন?
গ. অর্ণবের প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ্যার কোন দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জয়দেবের বিষয়টির সঙ্গে যুক্তিবিদ্যার কি কোনো সম্পর্ক আছে? আলোচনা কর।
উত্তর : ক. : যে বিজ্ঞান মানুষের আচরণের ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতির নৈতিক মূল্য বিচার করে তাকে নীতিবিদ্যা বলে।
উত্তর : খ. : যুক্তিবিদ্যার চেয়ে দর্শনের পরিধি অনেক বেশি। দর্শনের একটি প্রধান শাখার নাম মূল্যবিদ্যা। মূল্যবিদ্যার তিনটি অংশ; নীতিবিদ্যা, নন্দনত্ত্ব ও যুক্তিবিদ্যা। তাই স্বাভাবিকভাবেই যুক্তিবিদ্যার চেয়ে দর্শনের পরিধি বেশি। দর্শন মানব জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলোর তাত্ত্বিক ও যৌক্তিক সমাধানের চেষ্টা করে। অন্যদিকে যুক্তিবিদ্যা মানুষকে যৌক্তিক ও বিশুদ্ধ চিন্তার নিয়মনীতি সরবরাহ করে, এখানে জীবন সমস্যার আলোচনা হয় না। বার্ট্রান্ড রাসেল যুক্তিবিদ্যাকে দর্শনের সারসত্তা বলে উল্লেখ করেন।
উত্তর : গ. : উদ্দীপকে অর্ণব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে সে যৌক্তিক চিন্তা করে এবং যুক্তিবিদ্যা পড়ার পর তার মনের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর হয়। এখানে মূলত বাস্তব জীবনে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো।
(১) যুক্তিবিদ্যা মানসিক ব্যায়াম : যুক্তিবিদ ওয়েলটনের মতে, যুক্তিবিদ্যা একটি অতি প্রয়োজনীয় মানসিক ব্যায়াম। দেহকে সুস্থ রাখার জন্য যেমন শরীর চর্চার প্রয়োজন তেমনি মনকে সজীব রাখার জন্য যুক্তিবিদ্যার চর্চা প্রয়োজন।
(২) যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক : যুক্তিবিদ্যা মানুষকে বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। যৌক্তিক সিদ্ধান্ত না হলে সমাজে অনাকাক্সিক্ষত বিভেদ সৃষ্টি হয়। যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান সম্পন্ন কোনো ব্যক্তি অযৌক্তিক কাজ ও চিন্তা করতে পারেন না।
(৩) মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে : মানুষ আবেগ দিয়ে যেমন ভালোবাসা ও হৃদ্যতা গড়ে তুলতে পারে তেমনি অন্ধ আবেগের কারণে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও হানা-হানিরও সৃষ্টি হয়। যুক্তিবিদ্যা মানুষের আবেগকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং অযৌক্তিক আবেগ পরিহার করতে নির্দেশনা দেয়।
(৪) অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করে : যুক্তিবিদ্যা পাঠ করলে সমাজে চলমান কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে সঠিক ও যৌক্তিক বিশ্বাসের পথ পাওয়া যায়। যেমন পরীক্ষার সময় কালো বিড়াল দেখলে পরীক্ষা খারাপ হয়, ধূমকেতুর আবির্ভাবে রাজার মৃত্যু হয়েছে ইত্যাদি। যুক্তিবিদ্যা বলবে ভালো পড়ালেখা ও প্রস্তুতি না থাকলে পরীক্ষা খারাপ হবে কিংবা রাজার মৃত্যুর সঙ্গে ধূমকেতুর আবির্ভাবের কোনো সম্পর্ক নেই।
উত্তর : ঘ. : উদ্দীপকে অর্ণব প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ্যা এবং জয়দেব প্রসঙ্গে কম্পিউটার বিজ্ঞানের আলোচনা করা হয়েছে। যুক্তিবিদ্যা ও কম্পিউটার বিজ্ঞান যদিও জ্ঞানের দুটি ভিন্ন শাখা তথাপি উভয় বিষয়ের সঙ্গে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। যেমন-
(১) যুক্তিবিদ্যা চিন্তা সম্পর্কীয় একটি বিজ্ঞান যা বৈধ যুক্তি ও অবৈধ যুক্তির মধ্যে পার্থক্যনির্দেশকারী নীতিমালা সরবরাহ করে। বাস্তব জীবনে আমাদের অযৌক্তিক কাজ পরিহার করতে শেখায়। অন্যদিকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো সংরক্ষণ করে এবং যথাস্থানে প্রয়োগ করে, গণনার মাধ্যমে যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় জটিল হিসাব সহজতর ও নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করে। তাই সহজেই বোঝা যায় যুক্তিবিদ্যা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রক্রিয়া একই ধরনের। তা ছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক চার্ল্স ব্যাবেজ একজন যুক্তিবিদও ছিলেন।
(২) যুক্তিবিদ্যা যেহেতু সব বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিমালা সরবরাহ করে তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানের মৌলিক নীতিমালাও যুক্তিবিদ্যায় রয়েছে। যুক্তিবিদ্যার চর্চার জন্য যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না কিন্তু কম্পিউটার নিজেই একটি যন্ত্র এবং যান্ত্রিকভাবেই এখানে যুক্তির সঠিকতা খুব সহজে যাচাই করা যায়। তাই বলা যায়, যুক্তিবিদ্যা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের কাজও একই প্রকৃতির শুধু পার্থক্য যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে।
(৩) কম্পিউটারের বিভিন্ন লজিক গেইট যুক্তিবিদ্যার সঙ্গে জড়িত। যুক্তির বৈধতা নির্ণয়ের জন্য কম্পিউটারের সত্যক সারণি ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার সত্য সারণি একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে। এভাবে কম্পিউটারের কাজ ও যুক্তিবিদ্যার কাজও প্রায় এক।
(৪) এ ছাড়া কম্পিউটার অটোমেশনের জন্য মডেলিংয়ের কাজে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োজন হয়। কম্পিউটার-সিস্টেম ও প্রটোকলগুলোর সঠিকতা যাচাই, হার্ডওয়্যারের বর্ণনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কম্পিউটার যুক্তিবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল।
(৫) কম্পিউটার মূলত গাণিতিক হিসাব নিকাশের জন্য প্রথম তৈরি হয়। আর গণিতের নিয়মাবলি একান্তভাবে যুক্তিবিদ্যার আরোহ ও অবরোহ নীতির ওপর নির্ভরশীল। এভাবে গণিতের সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যমে কম্পিউটার যুক্তিবিদ্যার সঙ্গেও সম্পর্কিত।
