ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা
মো. মুজাম্মেল হক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক
মিরপুর বাংলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা
ইবাদত
প্রশ্ন : একজন ভালো শিক্ষক কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসা সম্পন্ন হবেন?
উত্তর : পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মান ও মর্যাদার পেশা হলো শিক্ষকতা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশার লোকের বৈশিষ্ট্যগুলো শ্রেষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন।
একজন ভালো শিক্ষক ছাত্রদের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসা সম্পন্ন হবেন নিুোক্তভাবে- ১. স্নেহ-মমতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করবেন। ২. সব শিক্ষার্থীকে সমান চোখে দেখবেন। ৩. শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান লাভের উৎসাহ তৈরি করবেন। ৪. প্রয়োজনে একটি বিষয় বার বার বলবেন। ৫. শিক্ষার্থীদের একান্ত আপনজন হবেন। ৬. শিক্ষার্থীদের অহেতুক ধমক দেবেন না অথবা শাসন করবেন না।
প্রশ্ন : ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ইসলাম হাক্কুল ইবাদ হিসাবে মানুষের জন্য যে দায়িত্ব পালন করা অনিবার্য করেছেন তার মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অন্যতম। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বলতে বোঝায়, একজন ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক কীরূপ।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হল আত্মার সম্পর্ক। এটি পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতো। পিতা যেমন সর্বদা পুত্রের কল্যাণ কামনা করেন ও তাকে কল্যাণের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করেন, শিক্ষকও তেমনি তার ছাত্রের কল্যাণ কামনা করেন ও তাকে সৎপথ দেখান। পুত্র তার পিতার থেকে সম্পদের উত্তরাধিকারী হন পক্ষান্তরে ছাত্র ও তার শিক্ষক থেকে জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হন।
প্রশ্ন : নৈতিকতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : নৈতিকতা হলো ব্যক্তির মৌলিক মানবীয় গুণ এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা অর্জন করলে তার জীবন সুন্দর ও উন্নত হয়। নৈতিকতা বলতে সততা, সদাচার, সুন্দর স্বভাব, মিষ্টি কথা ও উন্নত চরিত্র এসব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। নৈতিকতা হলো ব্যক্তির মৌলিক মানবীয় গুণ এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা অর্জন করলে তার জীবন সুন্দর ও উন্নত হয়। একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাল-চলন, ওঠা, বসা, আচার-ব্যবহার, লেনদেন সবকিছুই যখন প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য হয় তখন তাকে নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তি বলা হয়। তাই বলা যায়, নৈতিকতা হলো উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি।
প্রশ্ন : ইসলামী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কী? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : একজন মুসলমানের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর বিধিবিধান মেনে নেওয়া ও তার সন্তুষ্টি অর্জন করাই হল ইসলামি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিপূর্ণরূপে ইসলামকে তুলে ধরা হয়েছে। ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আল্লাহতায়ালার ইবাদ ও আনুগত্য শিখতে পারি। কল্যাণমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করতে পারি। পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় জানতে পারি। সুতরাং বলা যায়, দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও সফলতার দিক নির্দেশনা লাভ করাই ইসলামি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন : জিহাদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : জিহাদ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পরিশ্রম, সাধনা, কষ্ট, চেষ্টা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় জানমাল, ইলম, আমল, লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর দীনকে (ইসলামকে) সমুন্নত করাই হলো জিহাদ। অনেকেই জিহাদ বলতে (শুধু) রক্তপাত ও কতল (হত্যা) বোঝেন। এটা সঠিক নয়। কেননা জিহাদ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। পৃথিবীর যা কিছু উত্তম তাতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই শুধু জিহাদ হতে পারে। আল্লাহর পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।’ বস্তুত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব ধরনের চেষ্টা, শ্রম ও সাধনাই হলো জিহাদ।
প্রশ্ন : জিহাদে আকবর বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ইসলামের দৃষ্টিতে জিহাদ তিন প্রকার। স্বীয় নফসের (প্রবৃত্তির) সঙ্গে জিহাদ করা, জ্ঞানের সাহায্যে জিহাদ করা, ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। স্বীয় নফসের (প্রবৃত্তির) সঙ্গে যে জিহাদ তাকেই জিহাদে আকবর বলা হয়। এরূপ জিহাদকে মহানবী (সা.) সবচেয়ে বড় জিহাদ বলে অভিহিত করেছেন। এ জিহাদ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রকৃত মুজাহিদ সে ব্যক্তি, যে আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে নিজের নফসের সঙ্গে জিহাদ করে।’
প্রশ্ন : জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। এটি হলো জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর। ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম বা যুদ্ধকে জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর বলে। কেউ ইসলামের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ালে এ যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। এ যুদ্ধ মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পরিচালনা করা হয় এবং এর মাধ্যমে মানবতা মুক্তির স্বাদ পায়।
প্রশ্ন : সন্ত্রাসবাদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : সন্ত্রাসবাদের আরবি প্রতিশব্দ ইরহাব। সন্ত্রাসবাদের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়। সন্ত্রাসবাদ বলতে আমরা বুঝি পার্থিব কোনো স্বার্থ লাভের আশায় বিশৃঙ্খলা ও তাণ্ডবলীলার মাধ্যমে জনসাধারণের মতে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ও তাদের ক্ষতি করা। অর্থাৎ অন্যায়ভাবে রক্তপাত করে রাজ্যজয়, ক্ষমতা দখল, সম্পদ অর্জন করা এবং লুটতরাজ ও খুন-খারাবির মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
