পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা রচনা
জাতীয় পতাকা আমাদের স্বকীয়তার প্রতীক, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতীক
সবুজ চৌধুরী
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সহকারী শিক্ষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মোহাম্মদপুর, ঢাকা
জাতীয় পতাকা
ভূমিকা
জাতীয় পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রতিটি বাঙালির গর্ব ও অহংকার। সুদীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এ পতাকা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ পতাকা আমাদের সব মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্য চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। এ পতাকাতলে দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা শপথ গ্রহণ করেছিলেন দেশ স্বাধীন করার। বীর শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা ও স্বাধীন পতাকা আমাদের প্রত্যেক বাঙালির কাছে সমান শ্রদ্ধার ও সম্মানের।
জাতীয় পতাকা কী
জাতীয় পতাকা একটি দেশের নিজস্বতার স্মারক। প্রত্যেক দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহৃত হয়। এটি একখণ্ড বস্ত্রবিশেষ, যা গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠন তার পরিচায়ক হিসাবে ব্যবহার করে। পতাকার এক প্রান্ত কোনো দণ্ডের সঙ্গে বেঁধে ওড়ানো হয়। যাতে কোনো বিশেষ রং, চিহ্ন, প্রতীক, আদর্শ বা বার্তা চিত্রিত থাকে।
জাতীয় পতাকার মাপ
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মাপ হলো ১০:৬। এর মাঝের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ দৈর্ঘ্যরে পাঁচ ভাগের এক ভাগ। পতাকার দৈর্ঘ্যরে কুড়ি ভাগের বামদিকের নয় ভাগের শেষ বিন্দুর অঙ্কিত লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরল রেখার ছেদবিন্দু হবে বৃত্তের কেন্দ্র। যেমন, পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট।
পতাকা ব্যবহারের নিয়ম
বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ভবন, মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তা ছাড়া কার্যদিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও রাষ্টীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবনে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এক্ষেত্রে পতাকা পূর্ণ তুলে দৈর্ঘ্যরে এক-তৃতীয়াংশ নামিয়ে রাখতে হয়। এবং নামানোর সময় আবার পূর্ণ তুলো পুনরায় নামাতে হয়। ভবনে ব্যবহারের জন্য জাতীয় পতাকার আকার হবে ১০:৬ ফুট বা ৫:৩ ফুট। আর গাড়িতে ব্যবহারের জন্য হবে ১০:৬ ইঞ্চি। আন্তর্জাতিক বৈঠকে টেবিলে ব্যবহারের জন্য হবে ১০:৬ ইঞ্চি।
পতাকা তৈরির ইতিহাস
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য প্রথম জাতীয় পতাকা তৈরি করা হয়। যেখানে লালবৃত্তের মাঝে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র। প্রথম পতাকাটি এঁকেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের ১০৫ নং রুমে বসে শিব নারায়ণ দাশ। বর্তমান পতাকাটির চূড়ান্ত নকশা করেন শিল্পী কামরুল হাসান।
পতাকা উত্তোলনের ইতিহাস
জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর ভিপি আ. স. ম. আব্দুর রব ১৯৭১ সালের ২ মার্চ। এদিনটিকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম পতাকা ওড়ানো হয় ১৯৭১ সালে ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে। বিদেশের মাটিতে প্রথম ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনে জাতীয় সংগীত গেয়ে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
চেতনায় জাতীয় পতাকা
জাতীয় পতাকা আমাদের স্বকীয়তার প্রতীক, আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতীক। যখন জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় তখন আমাদের হৃদয়ে আনন্দ আর উদ্দীপনার এক শিহরণ সৃষ্টি হয়। শৈশব থেকে জাতীয় পতাকা আমাদের দেশেপ্রেম ও দেশের প্রতি অবিচল আস্থা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের চেতনা জাগায়। তাই আমরা জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করি দেশের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের চিহ্ন হিসাবে।
উপসংহার
কবি বলেছেন,
“হয় যদি হয় জীবন দিতে
হব আগুয়ান
প্রাণ দিয়ে বাঁচাবো মোরা
লাল-সবুজের মান”
এই লাল-সবুজের পতাকা আমাদের প্রত্যেকের জাতীয়তাবোধকে সমুন্নত রাখে। দেশের প্রতি অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়। লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ পতাকা স্মরণ করিয়ে দেয় তাজা রক্তে সিক্ত সবুজ জমিনের কথা। তাই এ পতাকা আমাদের হৃদয়ে দেশপ্রেমের দীক্ষা দেয়, দেশের জন্য নিজকে উৎসর্গ করার প্রেরণা দেয়।
