পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান
আফরোজা বেগম
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ
উত্তরা, ঢাকা
পরিবেশ দূষণ
প্রশ্ন : শব্দদূষণ কী? শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কী কী?
উত্তর : শব্দদূষণ (Sound Pollution) উচ্চ শব্দকেই শব্দদূষণ বলে।
ক্ষতিকর প্রভাব : শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব নিচে দেওয়া হলো-
* শব্দদূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
* শব্দদূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
* মনের অবসন্নতা দেখা দেয়।
* শ্রবণশক্তি হ্রাস করে।
* ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
* কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
সুতরাং বিভিন্ন উচ্চ শব্দ আমাদের নানা রকম ক্ষতি করে।
প্রশ্ন : রাফিয়াদের গ্রামের বাড়িতে নানাভাবে নলকূপ, নদী ও পুকুরের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে পরিবেশের পানি দূষণের প্রভাবে কী কী ঘটতে পারে লিখ।
উত্তর : খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে তা জলাশয়ের পানিকে দূষিত করে। কল-কারখানার বর্জ্য, বাড়ির ব্যবহৃত আবর্জনা ইত্যাদির মাধ্যমেও নানাভাবে পানি দূষিত হচ্ছে। দিন দিন পরিবেশে পানি দূষণের ফলে নানা সমস্যা ঘটতে পারে। যেমন-
* দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানুষ নানা পানিবাহিত রোগ- ডায়রিয়া, কলেরা, যক্ষ্মা, জন্ডিস, আমাশয় ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
* মানুষ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়।
* আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে মানুষ আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
* নানা পানিবাহিত রোগে ভুগে মানুষ একসময় অকালে প্রাণ হারাতে পারে।
* বিভিন্ন জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানির বিষক্রিয়ায় অনেক সময় এরা মারা যায়।
* সুপেয় পানীয় জলের অভাব দেখা যায়।
* জলজ উদ্ভিদগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি জলজ পরিবেশও বিনষ্ট হয়।
* জলাশয়ের তলদেশের মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়।
সুতরাং পরিবেশে পানি দূষণের প্রভাবে গোটা জীব জগৎ ও জলাশয়ের মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
জীবনের জন্য পানি
প্রশ্ন : পানিচক্র কী?
উত্তর : পানিচক্র : যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানিচক্র। সূর্যের কারণেই পানিচক্র হয়।
প্রশ্ন : পানি দূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ দাও।
উত্তর : পানি দূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো-
* কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে সবুজ সার ব্যবহার করে আমরা পানি দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি।
* রান্না ঘরের নিষ্কাশন নালায় ও টয়লেটে রাসায়নিক বর্জ্য এবং তেল না ফেলে দূষণ রোধ করতে পারি।
* পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা সাগরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে অথবা সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা ময়লা এবং হ্রদ কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে আমরা পানি পরিষ্কার রাখতে পারি।
সুতরাং, আমরা আমাদের সচেতনতা বাড়িয়ে আমাদের কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন করে পানিদূষণ প্রতিরোধ করতে পারি।
প্রশ্ন : অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার চারটি উপায় লিখ।
উত্তর : অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার চারটি উপায় নিচে দেওয়া হলো-
ছাঁকন পদ্ধতি : ছাঁকনি বা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানির ভাসমান বা অদ্রবীভূত ময়লা দূর করতে পারি।
থিতানো : নদী বা পুকুরের পানি অনেকক্ষণ রেখে দিলে পাত্রের তলায় তলানি জমে। উপরের পানি পরিষ্কার হয়। এভাবে পানিতে থাকা ময়লা যেমন কাদা বালি ইত্যাদি এ তিথান পদ্ধতিতে নিরাপদ করা যায়।
ফুটানো : ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পানি ফুটালে তা জীবাণুক্ত হয়।
রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় : অনেক সময় বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির কারণে পানি ফুটানো সম্ভব না হলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, পানি বিশুদ্ধকরণ হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে।
তবে আর্সেনিকযুক্ত পানি এ পদ্ধতিতে নিরাপদ করা যাবে না।
প্রশ্ন : বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর সেই পানি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওই পানি কোথায় যায়?
উত্তর : ভূপৃষ্ঠ দানা দানা মাটির কণা দিয়ে তৈরি। বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর ভূপৃষ্ঠের মাটির কণার ফাঁক দিয়ে তা থিতান পদ্ধতিতে ভূগর্ভে জমা হয়। ভূগর্ভের নিচে অদানাদার মিহি মাটির প্লেট রয়েছে। পানি তা ভেদ করে আর নিচে যেতে পারে না। বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠ ভেদ করে ভূগর্ভে ভূগর্ভস্থ পানি হিসাবে জমা হয়।
সুতরাং, বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে ভূগর্ভে পাঠিয়ে দেয়। তাই কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির পানি অদৃশ্য হয়ে ভূগর্ভে জমা হয়।
প্রশ্ন : পানির তিনটি অবস্থা কী কী?
উত্তর : পানি একটি তরল পদার্থ। এটা পানির স্বাভাবিক অবস্থা। তাপে পানির অবস্থার পরিবর্তন হয়। পানির তিনটি অবস্থা নিুরূপ-
* বরফ- পানির কঠিন অবস্থা।
* পানি- পানির তরল ও স্বাভাবিক অবস্থা।
* জলীয়বাষ্প- এটা পানির বায়বীয় অবস্থা।
পানিকে ঠান্ডা করলে তা বরফে অর্থাৎ কঠিন অবস্থায় আর পানিকে তাপ দিলে তা জলীয়বাষ্পে অর্থাৎ বায়বীয় অবস্থায় পরিণত হয়।
প্রশ্ন : বরফসহ পানির গ্লাসের বাইরের পৃষ্ঠ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বরফ পানির কঠিন অবস্থা। পানিকে ঠান্ডা করলে তা জমে কঠিন পদার্থে অর্থাৎ বরফে পরিণত হয়। অন্যদিকে, পানিকে তাপ দিলে তা জলীয়বাষ্পে বা বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয়। বাতাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জলীয়বাষ্প। এ জলীয়বাষ্পকে ঠান্ডা করলে বা ঠান্ডা সংস্পর্শে আনলে তা জমে পানি বা তরল পদার্থে পরিণত হয়। তাই বরফসহ পানির গ্লাস ফ্রিজের বাইরে খোলা জায়গায় রাখলে বাতাসের জলীয়বাষ্প বরফসহ ঠান্ডা গ্লাসে এলে তা বরফসহ গ্লাসের ঠান্ডায় শীতল হয়ে জলীয়বাষ্প থেকে পানির ফোঁটায় পরিণত হয় ও গ্লাসের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি হয়ে জমে থাকে।
বায়ু যখন ঠান্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানির ফোঁটা হিসাবে জমা হয়। বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভবন পদ্ধতিতে জমে পানি হয়। তাই গ্লাসটি ভিজা থকে। বরফসহ পানির গ্লাসের
বাইরের অংশ বাতাসের জলীয়বাষ্প পানিতে পরিণত হয়ে তা ভিজে যায়।
