পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
আফরোজা বেগম
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা, ঢাকা
গণতান্ত্রিক মনোভাব
[পূর্বে প্রকাশিত অংশের পর]
প্রশ্ন : তোমার পাড়ায় গণতন্ত্রের চর্চা করা প্রয়োজন কেন?
উত্তর : গণতন্ত্র বলতে জনগণের শাসন বা মতামতকে বুঝায়। বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে পাড়ায়-পাড়ায় আজানের সঙ্গে বেজে ওঠে শঙ্খ ঘণ্টার ধ্বনি। এখানে বিভিন্ন ধর্ম, পেশার মানুষ একত্রে মিলেমিশে বসবাস করি। পাড়ায় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত থকা সত্ত্বেও আমরা একে অন্যের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে থাকি। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষের যুক্তিসঙ্গত মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
* পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে অধিকাংশের মতামতের প্রতিফলন থাকে বলে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। সর্বক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। * পাড়ার শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। * পাড়ায় মতভেদ কমে আসে। * পাড়ার উন্নয়ন ঘটে। * পাড়ার সবার মধ্যে সদ্ভাব থাকে। * পাড়ায় সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে। * পাড়ায় সবার অংশগ্রহণে স্কুল, কলেজ, রস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাজার ইত্যাদি গড়ে ওঠে, বৃক্ষরোপণসহ নানা সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাড়ার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উন্নয়ন ঘটে। * পাড়ায় গণতান্ত্রিক মনোভাব শক্তিশালী হয়। গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হয়। * গণতান্ত্রিক মনোভাব শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। গণতন্ত্র মানুষকে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়।
আমরা বাড়ি, বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় গণতান্ত্রিক আচরণ করব। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব ও পরস্পরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব। তাই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় শক্তশালী ও মজবুত করার জন্য, গণতন্ত্রের সুফল বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমার পাড়ায় গণতন্ত্রের চর্চা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী
প্রশ্ন ১ : ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পোশাকের উদাহরণ দাও।
উত্তর : ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পোশাকের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো-
* দকবান্দা দকসারি → গারো নৃ-গোষ্ঠীর মেয়েদের পোশাক।
* পিন → এক ধরনের ব্লাউজ। খাসি নারীরা পরেন।
* ফুংগ মারুং → পকেট ছাড়া শার্ট ও লুঙ্গি খাসি পুরুষদের পোশাক
* ওয়াংলাই → ম্রো নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক
* রিনাই ও রিসা → ত্রিপুরা মেয়েদের নিচের অংশ রিনাই ও ওপরের অংশকে রিসা বলে। সুতরাং শুধু নামেই নয়; পোশাকের গড়নেরও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য।
প্রশ্ন : পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উৎসবের উদাহরণ দাও।
উত্তর : সাধারণ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিভিন্ন উপলক্ষ্যে নানা উৎসব পালন করে। নিচে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উৎসবের উদাহরণ দেয়া হলো-
* ওয়াংগালা → গারোদের ফসল তোলার উৎসব। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পালন করা হয়।
* বৈসু বা বিশু → বাংলা বছরের শেষ দুদিন ও নববর্ষের প্রথম দিন ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠী এ উৎসব পালন করে।
* ফাগুয়া বা ফাল্গুন → ওঁরাও নৃ-গোষ্ঠীর উৎসব।
* বিজু উৎসব → চাকমা নৃ-গোষ্ঠী বাংলা নববর্ষের সময় তিন দিন ধরে উৎসব পালন করে।
* সাংগ্রাই → মারমা নৃ-গোষ্ঠী প্রতি বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ উৎসব পালন করে।
সুতরাং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানগুলোতেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য।
প্রশ্ন : পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর খাদ্যের উদাহরণ দাও :
উত্তর : পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খাদ্যের উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
নীপ্পি : মারমা নৃ-গোষ্ঠী শুঁটকি মাছ দিয়ে খাবারটি তৈরি হয়। এটি খুব সুস্বাদু ও মজাদার খাবার।
নালিতা : সাঁওতালরা পাটশাক দিয়ে এ খাবারটি তৈরি করেন।
সিঞ্জেদা : মণিপুরী নৃ-গোষ্ঠীরা নানা ধরনের শাকসবজি দিয়ে এ খাবারটি তৈরি করেন।
* গারো সমাজের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি হচ্ছে কচি বাঁশের কোড়ল দিয়ে রান্না করা খাদ্য।
* খাসিদের প্রধান খাদ্যগুলো হলো- ভাত, মাংস, শুঁটকি মাছ, মধু ইত্যাদি। তবে খাসিয়ারা পান-সুপারিকে খুবই পবিত্র মনে করে। অতিথিদের তারা পান, সুপারি ও চা দিয়ে আপ্যায়ন করেন।
সুতরাং প্রত্যেক নৃ-গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে।
প্রশ্ন : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি আমরা কীভাবে গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ করতে পারি?
উত্তর : গণতন্ত্রের অর্থ জনগণের শাসন। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন রকম কাজ করি। এসব কাজ করতে আমাদের অনেক সময় নানা রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং সম্মান করাকে বলে গণতান্ত্রিক মনোভাব।
অতি প্রাচীনকাল থেকে পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী যাদের জীবনযাপন পদ্ধতি পাহাড়কেন্দ্রিক তারাই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে ৪৫টির বেশি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে। যেমন : চাকমা, গারো, খাসি, ম্রো, সাঁওতাল, মণিপুরী, ত্রিপুরা ইত্যাদি।
এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আমাদের মূলধারার একটা বিশেষ অংশজুড়ে রয়েছে। এদের বাদ দিয়ে জাতি হিসাবে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। এরা অতি প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বিভিন্ন পাহাড়ে জীবনযাপন শুরু করে ও পাহাড় এবং গ্রামভিত্তিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এদের ভাষা, পোশাক-আশাক, সংস্কৃতি, জীবনধারা নিজস্ব ভাবধারায় গড়ে ওঠে। যে কোনো জাতীয় ইস্যুতে যেমন : শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে নানা জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাদের মতামত প্রকাশের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আর সব বাংলাদেশির মতো সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকারগুলোতে সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তাদের মতামতকে মূল্যায়ন করতে হবে। সবার সমান অংশগ্রহণে ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় সমাস্যার সমাধান করতে হবে। তারা বর্তমানে তাদের গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশের সম্পূর্ণ সুযোগ পাচ্ছে। আর এ সুযোগ পেয়ে বর্তমানে তাদের অনেকেই পাহাড়ভিত্তিক সমাজ ছেড়ে আমাদের সঙ্গে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জন করছে ও আমাদের মতোই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রকাশের সমান সুযোগ পাচ্ছে।
সুতরাং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি অন্যসব বাংলাদেশির মতো সমান গুরুত্ব ও সুযোগ দিয়ে গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ করতে পারি।
