পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা রচনা
সবুজ চৌধুরী
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সহকারী শিক্ষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মোহাম্মদপুর, ঢাকা
মোবাইল ফোন
ভূমিকা :
আধুনিক সভ্যতার এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হলো মোবাইল। মোবাইল ছাড়া মানুষের এখন সামান্যতম মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে মোবাইল তার আশীর্বাদের বারিধারা বর্ষণ করেনি। আজকের যুগ মোবাইলের যুগ। মানবজীবনকে সবদিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিয়েছে এ যন্ত্রটি। আবিষ্কারের পর থেকে নানা ধরনের বিবর্তন মোবাইলকে তার উপযোগিতা ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।
নামকরণ :
মোবাইল ফোন, সেলুলার ফোন, হ্যান্ড ফোন বা মুঠোফোন হলো এক ধরনের তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমাণ বা ‘স্থানান্তরযোগ্য’। এ ফোন সহজে যে কোনো স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে একে ‘মোবাইল ফোন’ নামকরণ করা হয়েছে।
আবিষ্কার :
মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ড. মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। তারা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ১ কেজি ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন। মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে, ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x)।
কীভাবে কাজ করে :
মোবাইল অপারেটররা তাদের সেবা অঞ্চলকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেকগুলো ক্ষেত্র বা সেলে বিভক্ত করে ফেলেন। সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির সেলই বেশি দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মোবাইল সেবা সরবরাহ করা হয় কয়েকটি নেটওয়ার্ক স্টেশন দিয়ে। নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো আবার সাধারণত সেলগুলোর প্রতিটি কোণে অবস্থান করে। এভাবে অনেকগুলো সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি ‘সেলফোন’ নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে।
ব্যবহার :
শুধু কথা বলাই নয়, আধুনিক মোবাইল ফোন দিয়ে আরও অনেক সেবা গ্রহণ করা যায়। এর উদাহরণ হচ্ছে খুদে বার্তা -এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রারেড, ব্লু-টুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্ট ফোন নামে ডাকা হয়। অনেক মোবাইল ফোনই স্মার্ট ফোন হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কথা বলার পাশাপাশি এ ধরনের ফোনগুলো অন্যান্য বিষয়েও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ই-মেইল, এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা, প্রেরণ ও গ্রহণ; ক্যালকুলেটর, মুদ্রণ, সংকেত বিষয়ক কার্যাবলি; ইন্টারনেট; গেমস খেলা; ছবি ও ভিডিও তোলা; ঘড়ির সময় দেখা; কথা রেকর্ড করা; ট্রেনের টিকিট বুকিং করা; বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল দেওয়া; টাকার আদান-প্রদান করা ইত্যাদি।
ব্যবহারকারী :
১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ বিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭ শতাংশ মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় এসেছে।
বাংলাদেশের মোবাইল :
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে।
অপকারিতা :
মোবাইল ফোন আমাদের জীবনযাত্রাকে যেমন সহজতর করেছে তেমনি বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে এর। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে দিয়েছে বেগ কিন্তু অনেকক্ষেত্রে কেড়ে নিয়েছে জীবনের প্রাণশক্তি আবেগকে। মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার ঘাটতি হয়েছে মোবাইলের ফলে। মিথ্যা বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মশক্তি হ্রাস করে দিচ্ছে। তরুণ সমাজের মোবাইল আসক্তি বেশ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মোবাইলে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে অশ্লীল ও নগ্ন নানা ধরনের কনটেন্ট তরুণ সমাজকে অকৃষ্ট করছে। ফলে তারা জীবনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথে যাচ্ছে। মানুষের নৈতিকতাবোধের স্খলন ঘটছে মোবাইলের অবাধ ব্যবহারের ফলে। নানা ধরনের অপরাধ সংঘটনের মাত্রাও সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির পক্ষেও বেশ ক্ষতিকর। তাই মোবাইল ব্যবহারে আরও সতর্কতা প্রয়োজন।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, মোবাইল ফোন সুফল না কুফল বয়ে আনবে তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর নিজস্ব চিন্তা-চেতনার উপর। কেউ এটিকে খারাপ কাজে ব্যবহার করতে পারে আবার ভালো কাজেও ব্যবহার করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণের এ যুগে মোবাইল বিশ্ব জগৎকে মানুষের হাতের মুঠোয় বন্দি করেছে। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা বেশ সহজতর ও আয়েশপূর্ণ হয়েছে।
