পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান
মো. নূরুল আমিন
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা
পরিবেশ দূষণ
প্রশ্ন : পরিবেশ দূষণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পরিবেশ দূষণ : বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করি। ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের জন্য যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয়, তখন তাকে পরিবেশ দূষণ বোঝায়। বিভিন্ন ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশলে পরিবেশ দূষিত হয়।
প্রশ্ন : বায়ুদূষণের ফলে কী হয়?
উত্তর : বায়ুদূষণ : * যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা এবং মলমূত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। * বায়ুদূষণের ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। * পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। * এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। * দূষিত বায়ু মানুষের শ্বাসকার্যে ব্যাঘাত ঘটায় এবং দেহে নানা রোগ সৃষ্টি করে। দূষিত বায়ুর কারণে মানবদেহে এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যানসার ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে।
মোট কথা বায়ুদূষণ বাড়তে থাকলে সে স্থানটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই বায়ুদূষণের ফলে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন : পরিবেশ দূষণগুলো কী কী?
উত্তর : পরিবেশ দূষণ নিম্নরূপ-
* বায়ুদূষণ * পানিদূষণ * মাটিদূষণ * শব্দদূষণ ইত্যাদি
প্রশ্ন : পরিবেশ দূষণের উৎসগুলো কী?
উত্তর : পরিবেশ দূষণের উৎস নিচে দেওয়া হলো-
* পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্প কারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান কারণ। * জনসংখ্যা বৃদ্ধি দূষণের আরও একটি বড় কারণ। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে। * পরিবেশের বেশিরভাগ দূষণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড আর অসচেতনতার কারণেই হচ্ছে।
প্রশ্ন : পরিবেশ সংরক্ষণের ৫টি উপায় লিখ।
উত্তর : পরিবেশ সংরক্ষণের ৫টি উপায় নিচে দেওয়া হলো :
* বিদ্যুৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সবুজ শক্তি বা গ্রিন এনার্জি যেমন- সূর্য বা বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি। * গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে হেঁটে বা সাইকেল ব্যবহার করে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি ও পরিবশে দূষণ কমাতে পারি। * প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে, পুনঃব্যবহার করে ও রিসাইকেল করেও আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।
* মাটি, পুকুর বা নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে এবং গাছ লাগিয়ে, বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি। * অপরিকল্পিত বাড়িঘর বা কল-কারখানা নির্মাণ বন্ধন করে, নদী শাসন ও খাল-বিল ভরাট বন্ধ করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
মোট কথা, বিদ্যুৎ, পানি, অপচয় রোধ করাসহ পরিবেশবিরোধী সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে, পরিবেশবান্ধব শক্তি ও পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়িয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।
প্রশ্ন : পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো : * দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। * দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন- ক্যানসার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। * দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। * খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস হচ্ছে। * ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্যও হ্রাস পাচ্ছে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হীমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।
সুতরাং পরিবেশ দূষণ ক্ষতিকর প্রবাহ খুবই ভয়াবহ ও মারাত্মক। এখনই যদি পরিবেশ দূষণ রোধ না করা যায় তবে খুব শিগ্গির আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
প্রশ্ন : শব্দদূষণ রোধে তুমি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পার সংক্ষেপে লিখ। আমরা কীভাবে শব্দদূষণ রোধ করতে পারি?
উত্তর : শব্দদূষণ রোধে আমি নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারি : * যখন তখন যে কোনো স্থানে মাইকের ব্যবহার সীমিত করব। * উচ্চৈঃস্বরে গান বাজানো বন্ধ করতে পারি। * অযথা গাড়ির হর্ন বাজানো বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে পারি। * বসতি এলাকায় বিভিন্ন কল-কারখানা স্থাপনের বা বন্ধের জন্য এলাকাবাসীকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি। * লোডশেডিংয়ের কারণে উচ্চশব্দে জেনারেটর চলে। তাই বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে লোডশেডিংকে সহনশীল মাত্রায় নিয়ে এসে শব্দদূষণ কমাতে পারি। * উচ্চশব্দে রেডিও, টিভি ইত্যাদি শোনার অভ্যাস বদলাতে পারি। * লাউড স্পিকারের ব্যবহার বন্ধ বা কমাতে পারি। * পটকা বা আতসবাজি ফোটানো বন্ধ করতে পারি।
* শব্দদূষণের ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারি। মোটকথা, সদিচ্ছা ও সচেতনতার মাধ্যমেই আমি শব্দদূষণ রোধ করতে পারি।
