Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা : বিজ্ঞান

Icon

মো. নূরুল আমিন

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা

পরিবেশ দূষণ

প্রশ্ন : পরিবেশ সংরক্ষণ কী? আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি?

উত্তর : পরিবেশের সব উপাদান যেমন- মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদির সঠিক ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখাই হলো পরিবেশ সংরক্ষণ। জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। পরিবেশের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশকে নষ্ট না করে মানুষের সব ধরনের পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডকে রহিত করে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেষ্ট হওয়া এখন সময়ের দাবি মাত্র।

উপায় :

* বিদ্যুৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সবুজ শক্তি বা গ্রিন এনার্জি যেমন- সূর্য বা বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।

* গাড়িতে চড়ার পরিবর্তে হেঁটে বা সাইকেল ব্যবহার করে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি ও পরিবেশ দূষণ কমাতে পারি।

* প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে, পুনঃব্যবহার করে ও রিসাইকেল করেও আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।

* মাটি, পুকুর বা নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে এবং গাছ লাগিয়ে, বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।

* অপরিকল্পিত বাড়িঘর বা কল-কারখানা নির্মাণ বন্ধন করে, নদী শাসন ও খাল-বিল ভরাট বন্ধ করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : মাটিদূষণ কেন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

উত্তর : মাটিদূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যানসারসহ নানা প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয় ও অকালে প্রাণ হারায়।

প্রশ্ন : জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কেন পরিবেশ দূষিত হয়?

উত্তর : পরিবেশন দূষণ : বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করি। ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয়, তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি।

কারণ : ‘সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নানাভাবে পরিবেশ দূষিত হয়। কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো-

* অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে।

* বাড়তি জনসংখ্যার নানা চাহিদার জন্য কুটির শিল্পের পরিবর্তে প্রসারিত হচ্ছে শিল্পায়ন, আর পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে শিল্পায়ন।

* জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে।

* বনজঙ্গল ধ্বংসের ফলে খাদ্য-শৃঙ্খল নষ্ট বা ধ্বংস হচ্ছে।

* অনেক জীব ধ্বংস হয়ে পরিবেশের স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট হচ্ছে।

* পরিবেশের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশের স্বাভাবিক জলবায়ু তথা পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

* জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ে। ফলে জীবাণু দ্রুত ছড়ায়। বায়ু তথা পরিবেশ দূষিত হয়।

সুতরাং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের নানা কর্মকাণ্ডই পরিবেশ দূষণের মূল কারণ। প্রাকৃতিক পরিবেশের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের পরিবেশ দূষিত হয়।

প্রশ্ন : মাটি ও পানি দূষণের সাদৃশ্য কোথায়?

উত্তর : পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হলো মাটি ও পানি। মানুষের নানা কর্মকাণ্ড পরিবেশের এ উপাদান দুটি নানাভাবে দূষিত হয়। মাটি ও পানি দূষণের সাদৃশ্য বা মিল নিচে দেওয়া হলো-

* যেখানে সেখানে আবর্জনা যেমন- চিপসের প্যাকেট ও গৃহস্থালির বর্জ্য, অপচনশীল দ্রব্য যেমন- প্লাস্টিক, পলিথিন ইত্যাদি ফেলে মাটিকে দূষিত করে। অনুরূপভাবে পানিতে বিভিন্ন ভাসমান, পচনশীল দ্রব্যাদিসহ নানা ময়লা-আবর্জনা ছুড়ে প্রতিদিন পানিকে দূষিত করে।

* কৃষি ক্ষেত্রে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ- প্রয়োগের ফলে মাটি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। এ রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক দ্রব্য বৃষ্টির পানিতে মিশে বিভিন্ন জলাশয়ের পানি দূষিত হয়।

* কলকারখানার বর্জ্য, বিষাক্ত ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে মিশে মাটি দূষিত হয়। অনুরূপভাবে, পানিতে কল-কারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক পদার্থ ও বিভিন্ন নৌযানের তেল পানিতে ছড়িয়ে পানি দূষিত হয়। জলজ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সুতরাং, মাটি ও পানি দূষণের প্রধান কারণ হলো মানুষের নানা অসচতেন কর্মকাণ্ড। তাই মাটি ও পানিদূষণ নানা সাদৃশ্য বিদ্যমান।

প্রশ্ন : শব্দদূষণ কী? শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কী কী?

উত্তর : শব্দদূষণ : উচ্চ শব্দকেই শব্দদূষণ বলে।

ক্ষতিকর প্রভাব : শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব নিচে দেওয়া হলো-

* শব্দদূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

* শব্দদূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।

* মনের অবসন্নতা দেখা দেয়।

* শ্রবণ শক্তি হ্রাস করে।

* ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

* কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।

সুতরাং বিভিন্ন উচ্চশব্দ আমাদের নানা রকম ক্ষতি করে।

প্রশ্ন : রাফিয়াদের গ্রামের বাড়িতে নানাভাবে নলকূপ, নদী ও পুকুরের পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে পরিবেশের পানি দূষণের প্রভাবে কী কী ঘটতে পারে লিখ।

উত্তর : খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে তা জলাশয়ের পানিকে দূষিত করে। কল-কারখানার বর্জ্য, বাড়ির ব্যবহৃত আবর্জনা ইত্যাদির মাধ্যমেও নানাভাবে পানি দূষিত হচ্ছে। দিন দিন পরিবেশে পানি দূষণের ফলে নানা সমস্যা ঘটতে পারে। যেমন-

* দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে মানুষ নানা পানিবাহিত রোগ- ডায়রিয়া, কলেরা, যক্ষ্মা, জন্ডিস, আমাশয় ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

* মানুষ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়।

* আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে মানুষ আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

* নানা পানিবাহিত রোগে ভুগে মানুষ একসময় অকালে প্রাণ হারাতে পারে।

* বিভিন্ন জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানির বিষক্রিয়ায় অনেক সময় এরা মারা যায়।

* সুপেয় পানীয় জলের অভাব দেখা যায়।

* জলজ উদ্ভিদগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি জলজ পরিবেশও বিনষ্ট হয়।

* জলাশয়ের তলদেশের মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়।

সুতরাং পরিবেশে পানি দূষণের প্রভাবে গোটা জীব জগৎ ও জলাশয়ের মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম