Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

Icon

মো. নূরুল আমিন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা

ব্রিটিশ শাসন

প্রশ্ন : ১৮৫৭-এর সিপাহী বিদ্রোহের গুরুত্ব বর্ণনা কর? অথবা, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

উত্তর : সিপাহী বিদ্রোহ

পলাশী যুদ্ধের ঠিক ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বাঙালি সিপাহীরা স্ব স্ব ব্যারাকে যে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়েছিল তা-ই ইতিহাসে সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

গুরুত্ব : ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। যেমন :

* এ বিপ্লব স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

* বাংলায় শুরু হয়ে ইংরেজ অধিকৃত ভারতের অন্যান্য এলাকার সিপাহীদের মধ্যেও এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে সিপাহী ‘মঙ্গল পান্ডের’ নেতৃত্বে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। ইংরেজরা কঠোরভাবে দমন করল। বিদ্রোহীরা পরাজিত হলেও এ বিদ্রোহের ফলেই কোম্পানির শাসনের অবসান হয়। শুরু হয় ব্রিটিশ রাজ তথা রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন।

* ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ ওঠে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।

* সিপাহী বিপ্লবের পর মুসলমানদের প্রতি ইংরেজ সরকারের নীতির পরিবর্তন আসতে থাকে। মুসলমানদের একটি অংশ মনে করে, ইংরেজদের অসহযোগিতা করলে সব ক্ষেত্রে তারা পিছিয়েই থাকবে। তাই এ সিপাহী বিপ্লবের পর থেকে ভারতবর্ষে সবাই শিক্ষা বিস্তারে তৎপর হন। শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা, স্বকীয়তা ইত্যাদি বোধের উদয় হয়। ফলে পরে কংগ্রেস দল, মুসলিম লীগ, স্বরাজ পার্টিসহ নানা রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়।

সুতরাং ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত করতে, শিক্ষা বিস্তার করতে এ সিপাহী বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাপক।

প্রশ্ন : ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা ও ক্ষুদিরাম কী অবদান রেখেছিলেন?

উত্তর : বিদেশি ইংরেজ শাসনকে বাংলার মানুষ কিন্তু বিনা প্রতিরোধে মেনে নেয়নি। আঠারো শতকের শেষভাগ থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলায় একাধিক প্রতিরোধ আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তিতুমীরের বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, সাঁওতাল বিদ্রোহ ইত্যাদি। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা ও ক্ষুদিরামের অবদান উল্লেখযোগ্য।

তিতুমীর ইংরেজ ও জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে বর্তমান ভারতের পশ্চিমবাংলার চব্বিশপরগনা জেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি হলেন বাংলার সশস্ত্র সংগ্রামে স্বাধীনতার প্রথম শহিদ।

স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, সশস্ত্র যুব বিদ্রোহের একপর্যায়ে সশস্ত্র আন্দোলনে ক্ষুদিরাম, মাস্টার দা সূর্যসেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা চিরস্মরণীয়। ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়ার কারণে ক্ষুদিরাম ও মাস্টার দাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। সফল অভিযান শেষে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়া এড়ানোর জন্য প্রীতিলতা স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা ও ক্ষুদিরামের অসামান্য অবদান রয়েছে।

প্রশ্ন : বাংলায় নবজাগরণের ফলাফল কী ছিল?

উত্তর : ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর মুসলমানরা ইংরেজদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন করে। তারা মনে করে যে, ইংরেজদের সঙ্গে অসহযোগিতা করলে সবক্ষেত্রে তারা পিছিয়েই থাকবে। বিভিন্ন মুসলিম সমাজ সংস্কারক শিক্ষা বিস্তারে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। ফলে সমাজে দ্রুত শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটে।

* আধুনিক ও নবজাগরণের ফলে উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে।

* এরই ফলে এক সময় ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ নামক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।

* বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে তৎকালীন বাংলা প্রদেশকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

* নবজাগরণের ফলে পূর্ববাংলা ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়।

* বাংলা প্রদেশের রাজধানী ঢাকায় করা হয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়।

* মুসলমানদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে ১৯০৬ সালে ঢাকায় ভারতীয় মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে।

* বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় স্বদেশি চেতনার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। যার ফলে স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, সশস্ত্র যুব বিদ্রোহ ঘটে।

মোটকথা, আধুনিক শিক্ষা ও নবজাগরণের ফলে জনগণের রাজনৈতিক অধিকারবোধ তীব্র হয় এবং পরবর্তীতে এরই হাত ধরে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন

প্রশ্ন : দুটি প্রাচীন নিদর্শনের নাম লিখ।

উত্তর : বাংলাদেশ হলো প্রাচীন সভ্যতা তথা প্রাচীন নিদর্শনের পীঠস্থান। দুটি প্রাচীন নিদর্শনের নাম নিচে দেওয়া হলো-

* মহাস্থান গড় * উয়ারী-বটেশ্বর

প্রশ্ন : অষ্টম শতকে কোন ধর্ম পালিত হতো?

উত্তর : অষ্টম শতক বলতে ৭০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮০০ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১০০ বছর সময়কালকে বুঝায়। অষ্টম শতকে বৌদ্ধ ধর্ম পালিত হতো। সে সময়কালের প্রাচীন নিদর্শন কুমিল্লার ময়নামতি নামক স্থানের বিভিন্ন নিদর্শন ও বৌদ্ধ সভ্যতার নানা নির্দশন থেকে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে এখানে হিন্দু ও জৈন ধর্মের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

প্রশ্ন : প্রাচীন নিদর্শনগুলো কারা আবিষ্কার করেন?

উত্তর : প্রাচীন নিদর্শনগুলো নানা কারণে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। কালের করাল গ্রাসে ঐতিহ্যবাহী জনপদগুলো হয়ে পড়ে জনশূন্য। বহুকাল পর আবার লোকবসতি তথা লোকের আনাগোনা শুরু হয়। নতুনভাবে লোকজন তাদের বসতি স্থাপন করতে গিয়ে কখনো কখনো প্রাচীন মাটি সরে গিয়ে লোকচক্ষুর সামনে চলে আসে প্রাচীন নিদর্শনগুলোর ধ্বংসাবশেষ। আবার কখনো জনগণের আয়োজনে রাস্তা, রেলপথ ইত্যাদি নির্মাণকালে মাটি খুঁড়তে গিয়ে স্থানীয় জনগণের চোখেই সর্বপ্রথম প্রাচীন নিদর্শনগুলোর পরিচয় বা নমুনা ধরা পড়ে। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্ন বিভাগ বা স্থানীয় জনপ্রশাসক যেমন : পুলিশ বা জেলা প্রশাসককে খবর দেয়।

স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বা সরকারের প্রত্নবিভাগের লোকজন প্রাচীন নিদর্শনগুলো আবিষ্কার করে।

প্রশ্ন : ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো কোথায় রাখা হয়?

উত্তর : বাংলাদেশ প্রাচীন সভ্যতায় পীঠস্থান। যুগে যুগে কালে কালে অনেক সমৃদ্ধ সভ্যতায় জন্ম হয়েছে এ প্রাচীন জনপদে। কালক্রমে হারিয়ে যাওয়া এসব ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সভ্যতা বা স্থান থেকে বহু নিদর্শন পাওয়া যায়। এসব নির্দশন প্রাচীনকালে ঐতিহ্যের পরিচায়ক। তাই ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন এসব নিদর্শনগুলো স্থানীয় প্রত্ন জাদুঘরে বা ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়। দেশ-বিদেশের সব দর্শনার্থীর জন্য এগুলো সেখানে যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়।

সুতরাং, ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো স্থানীয় প্রত্ন জাদুঘরে বা বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়।

পঞ্চম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম