পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান
মো. নূরুল আমিন
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা
জীবনের জন্য পানি
প্রশ্ন : পানিচক্র কী?
উত্তর : পানিচক্র : যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানিচক্র। সূর্যের কারণেই পানিচক্র হয়।
প্রশ্ন : পানিদূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ দাও।
উত্তর : পানিদূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ নিচে
দেওয়া হলো-
* কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার
কমিয়ে সবুজ সার ব্যবহার করে আমরা পানিদূষণ প্রতিরোধ করতে পারি।
* রান্না ঘরের নিষ্কাশন নালায় ও টয়লেটে রাসায়নিক বর্জ্য এবং তেল না ফেলে দূষণ রোধ করতে পারি।
* পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা সাগরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে অথবা সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা ময়লা এবং হ্রদ কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে আমরা পানি পরিষ্কার রাখতে পারি।
প্রশ্ন : অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার চারটি উপায় লিখ।
উত্তর : অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার চারটি উপায় নিচে দেওয়া হলো-
ছাঁকন পদ্ধতি : ছাঁকনি বা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানির ভাসমান বা অদ্রবীভূত ময়লা দূর করতে পারি।
থিতানো : নদী বা পুকুরের পানি অনেকক্ষণ রেখে দিলে পাত্রের তলায় তলানি জমে। উপরের পানি পরিষ্কার হয়। এভাবে পানিতে থাকা ময়লা যেমন কাদা বালি ইত্যাদি এ তিথানো পদ্ধতিতে নিরাপদ করা যায়।
ফুটানো : ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পানি ফুটালে তা জীবাণুমুক্ত হয়।
রাসায়নিক পক্রিয়ায় : অনেক সময় বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির কারণে পানি ফুটানো সম্ভব না হলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, পানি বিশুদ্ধকরণ হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে।
তবে আর্সেনিকযুক্ত পানি এ পদ্ধতিতে নিরাপদ করা
যাবে না।
প্রশ্ন : বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর সেই পানি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওই পানি কোথায় যায়
উত্তর : ভূপৃষ্ঠ দানা দানা মাটির কণা দিয়ে তৈরি। বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর ভূপৃষ্ঠের মাটির কণার ফাঁক দিয়ে তা থিতানো পদ্ধতিতে ভূগর্বে জমা হয়। ভূগর্ভের নিচে অদানাদার মিহি মাটির প্লেট রয়েছে। পানি তা ভেদ করে আর নিচে যেতে পারে না। বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠ ভেদ করে ভূগর্বে ভূগর্ভস্থ পানি হিসাবে জমা হয়।
সুতরাং, বৃষ্টির পানি ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে ভূগর্ভে পাঠিয়ে দেয়। তাই কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির পানি অদৃশ্য হয়ে ভূগর্বে জমা হয়।
প্রশ্ন : পানির তিনটি অবস্থা কী কী?
উত্তর : পানি একটি তরল পদার্থ। এটা পানির স্বাভাবিক অবস্থা। তাপে পানির অবস্থার পরিবর্তন হয়। পানির তিনটি অবস্থা নিুরূপ-
* বরফ- পানির কঠিন অবস্থা।
* পানি- পানির তরল ও স্বাভাবিক অবস্থা।
* জলীয়বাষ্প- এটা পানির বায়বীয় অবস্থা।
পানিকে ঠান্ডা করলে তা বরফে অর্থাৎ কঠিন অবস্থায় আর পানিকে তাপ দিলে তা জলীয়বাষ্পে অর্থাৎ বায়বীয় অবস্থায় পরিণত হয়।
প্রশ্ন : বরফসহ পানির গ্লাসের বাইরের পৃষ্ঠ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বরফ পানির কঠিন অবস্থা। পানিকে ঠান্ডা করলে তা জমে কঠিন পদার্থে অর্থাৎ বরফে পরিণত হয়। অন্যদিকে, পানিকে তাপ দিলে তা জলীয়বাষ্পে বা বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয়। বাতাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জলীয়বাষ্প। এ জলীয়বাষ্পকে ঠান্ডা করলে বা ঠান্ডা সংস্পর্শে আনলে তা জমে পানি বা তরল পদার্থে পরিণত হয়। তাই বরফসহ পানির গ্লাস ফ্রিজের বাইরে খোলা জায়গায় রাখলে বাতাসের জলীয়বাষ্প বরফসহ ঠান্ডা গ্লাসে এলে তা বরফসহ গ্লাসের ঠান্ডায় শীতল হয়ে জলীয়বাষ্প থেকে পানির ফোঁটায় পরিণত হয় ও গ্লাসের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি হয়ে জমে থাকে।
বায়ু যখন ঠান্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানির ফোঁটা হিসাবে জমা হয়। বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভবন পদ্ধতিতে জমে পানি হয়। তাই গ্লাসটি ভিজা থকে। বরফসহ পানির গ্লাসের
বাইরের অংশ বাতাসের জলীয়বাষ্প পানিতে পরিণত হয়ে তা ভিজে যায়।
প্রশ্ন : পানিচক্র ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পানিচক্র : যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানিচক্র।
ব্যাখ্যা : সাগর, নদী, পুকুর, খাল-বিলসহ যে কোনো জলাশয়ের পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্পীভূত পানি ওপরে উঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানির বিন্দুতে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দু একত্রিত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। এ মেঘের পানিকণা বড় হয়ে বৃষ্টিপাত ও শিলা বৃষ্টি রূপে আবার চক্রাকারে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। শীতপ্রধান দেশে সাধারণত মেঘ থেকে বৃষ্টি না পড়ে তুষার পৃথিবীতে পড়ে। বৃষ্টির পানি কিছুটা মাটিতে শোষিত হয়। আর বাকিটা নদীতে বা যে কোনো জলাশয়ে পড়ে। মাটিতে শোষিত পানি ভূগর্ভস্থ পানি হিসাবে মাটির তলদেশে জমা থাকে। নদীতে গড়িয়ে পড়া পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয় এবং বাষ্পীভূত হয়ে আবার বায়ুতে ফিরে আসে। সূর্যের তাপের কারণেই পানিচক্র সম্ভব হচ্ছে। পানিচক্র পরিবেশে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।
