পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
মো. নূরুল আমিন
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন
প্রশ্ন : ঐতিহাসিক নিদর্শন পরিদর্শনের কারণগুলো লিখ।
উত্তর : প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডে উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো বিভিন্ন অঞ্চলে রয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, কুমিল্লার ময়নামতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জের অদূরে সোনারগাঁ ও পানাম নগরী এবং ঢাকার লালবাগের কেল্লা, নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বর, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এ দেশে সুলতানি ও মোগল শাসনামলের বহু মূল্যবান নিদর্শন বহন করছে। বাংলাদেশের পুরোটাই যেন প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনের এক উন্মুক্ত জাদুঘর। এ দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহনকারী নানা নিদর্শন। এসব নিদর্শন আমাদের অতীত সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। আমরা এসব ঐতিহ্যে গৌরববোধ করি। এসব নিদর্শন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, ইতিহাস কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারণ, লালন করে। এগুলো আমাদের গর্ব। তাই আমরা পারিবারিকভাবে বা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এসব নির্দশন সম্পর্কে জানব ও এগুলো পরিদর্শন করব। এগুলো পরিদর্শন করলে-
* আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে
* জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে।
* আমাদের জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে।
* অতীতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানা যাবে। সুতরাং, ওপরের কারণে আমরা প্রাচীন নিদর্শনগুলো পরিদর্শন করব ও সেগুলোকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্ন : ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো আমাদের সংরক্ষণ করা উচিত কেন?
উত্তর : বাংলাদেশ প্রাচীন সভ্যতার পীঠস্থান। যুগে যুগে কালে কালে অনেক সমৃদ্ধ সভ্যতার জন্ম হয়েছে এ প্রাচীন জনপদে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল বগুড়ার মাহস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, কুমিল্লার ময়নামতি, সোনারগাঁ, পানাম নগরী, লালবাগ কেল্লা, নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বর। এসব নির্দশন এ দেশের বিভিন্ন আমলের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করছে। আমরা এসব নিদর্শন থেকে অতীতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারি। বাংলাদেশের পুরোটাই যেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের এক উন্মুক্ত জাদুঘর। এসব ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ করলে এগুলো পরিদর্শন করে আমরা বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে পরব। এগুলো সংরক্ষণ করলে এগুলো সম্পর্কে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। এসব নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করলে আজীবন এগুলো সুপ্রাচীন অতীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে, এতে সমৃদ্ধ হবে আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।
প্রশ্ন : মহাস্থানগড়ের কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের বর্ণনা দাও?
উত্তর : বগুড়া শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
নিদর্শন :
* বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহৎ নগর ‘পুন্ড্রনগর’-এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এ নগর মৌর্য আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
* বাংলার প্রাচীনতম শিলালিপি ‘ব্রাহ্মী শিলালিপি’ পাওয়া গেছে।
* এখানে পোড়ামাটির ফলক ও ভাস্কর্য, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পাথর ও কাচের পুঁতি পাওয়া গেছে।
* এখানে ‘গোবিন্দ ভিটা’, ‘লখিন্দরের মেধ’ ও ‘গোকুল মেধ’ নামে ধর্মীয় পুরাকীর্তি রয়েছে।
* প্রাচীনকালের একটি দুর্গ ভাঙা অবস্থায় এখনো দেখতে পাওয়া যায়।
* দুর্গটির পূর্বদিকে করতোয়া নদী এবং অপর তিনদিকে চওড়া খাদের চিহ্ন রয়েছে।
* দুর্গের ভেতরে এখানে-সেখানে অনেক পাথরের খণ্ড রয়েছে। ‘খোদাই পাথর’ নামে পরিচিত এক টুকরা বিশেষ ধরনের পাথর পাওয়া গেছে। এ পাথর টুকরাটি প্রায় ৩.৩৫ মিটার লম্বা ও ০.৯১ মিটার চওড়া।
* মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মুঘল আমলে নির্মিত এক গম্বুজের একটি মসজিদ রয়েছে। এটি ‘মহাস্থান মসজিদ’ নামে পরিচিত।
সুতরাং মহাস্থানগড় নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ একটি নগরী।
মহাস্থানগড়ের নিদর্শনগুলো এখানকার জাদুঘর, রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর ও ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে।
প্রশ্ন : সোমপুর মহাবিহারে কী কী নিদর্শন পাওয়া গেছে?
উত্তর : সোমপুর মহাবিহার :
বাংলার অন্যতম পুরাকীর্তি হলো সোমপুর মহাবিহার। এটি পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবিস্থত। এটা পাল রাজাদের একটি প্রত্নস্থল। এটি প্রায় ২৪ মিটার উঁচু ও ০.১০ বর্গকিলোমিটার বা ১০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি রাজা ধর্মপালের শাসনামলে (৭৮১-৮২১ খ্রি.) নির্মিত হয়।
নিদর্শন :
* বিহারটির চারদিকে ১৭৭টি কুঠুরি রয়েছে। মাঝখানে সুউচ্চ একটি মন্দির রয়েছে। তার চারপাশে রয়েছে অনেক ছোট মন্দির এবং পুকুর।
* এ ছাড়া রন্ধনশালা, ভোজনশালা, পাকা নর্দমা ও চিত্র পাওয়া গেছে। এগুলোর বেশিরভাগ বাংলার জীবজন্তুর মূর্তি।
* এ ছাড়া চুনাবালি ও ধাতব মূর্তি পাওয়া গেছে।
* পাহাড়পুরের পুরাকীর্তি প্রাচীন বাংলার ধর্ম ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর অন্যতম।
আমরা এসব নিদর্শন স্বচক্ষে ঘুরে দেখব ও প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করব।
