Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩ : বাংলা প্রথমপত্র

Icon

ড. সনজিত পাল

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩ : বাংলা প্রথমপত্র

সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা

সোনার তরী

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অসামান্য প্রতিভার অধিকারী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ। তার সাহিত্যসাধনার একটি বৃহৎকাল বাংলা সাহিত্যের ‘রবীন্দ্র যুগ’ নামে পরিচিত। মানবধর্মের জয় ও সৌন্দর্য-তৃষ্ণা রোমান্টিক এ কবির কবিতার মূল সুর। কবিতা ছাড়াও তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি ও সংগীত রচনায় কালজয়ী প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণে নিরুৎসাহী হলেও ‘বিশ্বভারতী’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি স্বাপ্নিক ও প্রতিষ্ঠাতা। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়। বাংলা ছোটগল্পের তিনি পথিকৃৎ ও শ্রেষ্ঠ শিল্পী। ‘সোনার তরী’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের নাম-কবিতা। শতাধিক বছর ধরে এ কবিতা বিপুল আলোচনা ও নানামুখী ব্যাখ্যায় নতুন নতুন তাৎপর্যে অভিষিক্ত। একই সঙ্গে, কবিতাটি গূঢ় রহস্য ও শ্রেষ্ঠত্বেরও স্মারক। মহৎ সাহিত্যের একটি বিশেষ গুণ হলো কালে কালে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনার আলোকে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপিত হতে থাকে। বাংলা কবিতার ইতিহাসে ‘সোনার তরী’ তেমনি আশ্চর্যসুন্দর এক চিরায়ত আবেদনবাহী কবিতা। এ কবিতায় দেখা যায়, চারপাশের প্রবল স্রোতের মধ্যে জেগে থাকা দ্বীপের মতো ছোটো একটি ধানক্ষেতে উৎপন্ন সোনার ধানের সম্ভার নিয়ে অপেক্ষারত নিঃসঙ্গ এক কৃষক। আকাশের ঘন মেঘ আর ভারী বর্ষণে পাশের খরস্রোতা নদী হয়ে উঠেছে হিংস্র। চারদিকের ‘বাঁকা জল’ কৃষকের মনে সৃষ্টি করেছে ঘনঘোর আশঙ্কা। এরকম এক পরিস্থিতিতে ওই খরস্রোতা নদীতে একটি ভরাপাল সোনার নৌকা নিয়ে বেয়ে আসা এক মাঝিকে দেখা যায়। উৎকণ্ঠিত কৃষক নৌকা কূলে ভিড়িয়ে তার উৎপাদিত সোনার ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝিকে সকাতরে মিনতি জানালে ওই সোনার ধানের সম্ভার নৌকায় তুলে নিয়ে মাঝি চলে যায়। ছোট নৌকা বলে স্থান সংকুলান হয় না কৃষকের। শূন্য নদীর তীরে আশাহত কৃষকের বেদনা গুমড়ে মরে। এ কবিতায় নিবিড়ভাবে মিশে আছে কবির জীবনদর্শন। মহাকালের স্রোতে জীবন-যৌবন ভেসে যায়, কিন্তু বেঁচে থাকে মানুষেরই সৃষ্ট সোনার ফসল। তার ব্যক্তিসত্তা ও শারীরিক অস্তিত্বকে নিশ্চিতভাবে হতে হয় মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার।

‘সোনার তরী’ কবিতাটি পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালো করে খেয়াল করতে হবে :

‘সোনার তরী’ কবিতায় কোনো কোনো সমালোচক কবির জীবনদর্শনের প্রতিফলন দেখেছেন। তবে এ কবিতায় কবি শাব্দিক অর্থে যেভাব প্রকাশ করেছেন, ভাবার্থে অন্য ভাব বুঝাতে চেয়েছেন। এ জন্যই এ কবিতা নিয়ে সমালোচকদের মাঝে এত কৌতূহল দেখা দিয়েছে। কারও কারও মতে ঋষি রবীন্দ্রনাথ এ কবিতায় যে সত্য দর্শন তুলে ধরেছেন তা পৃথিবীর সব কীর্তিমান ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মহাকালের তরীতে কীর্তিমানের কীর্তি স্থান পেলেও ব্যক্তির স্থান সেখানে হয় না। এই চিরসত্যই যেন এ কবিতায় ধ্রব সত্য হয়ে উঠেছে। সোনার তরী কবিতায় যে দিকগুলো বিশেষ জোর দিয়ে পড়তে হবে তা তুলে ধরা হলো। কবিতায় বর্ণিত নদীর বর্ণনা এবং নদীকে এভাবে উপস্থাপনের কারণ, চারপাশের প্রকৃতির বর্ণনা, প্রকৃতির অবস্থা মূলত যে বিষয়কে প্রকাশ করেছে, কৃষক রূপী কবি নৌকার মাঝিকে যেন চিনেও চিনতে পারছেন না যে কারণে, মাঝি নির্মোহ হয়ে নৌকা চালিয়ে যাচ্ছেন যে কারণে, কৃষক রূপী কবি মাঝির কাছে যে প্রার্থনা করেছেন এবং কেন করেছেন, যে কারণে তরীতে কৃষকের ঠাঁই হয়নি, তরীতে ঠাঁই না পেয়ে কৃষকের মনোভাব যেমন হয়েছে, এ কবিতায় প্রকাশিত দার্শনিক সত্য ও ভাব সত্য ইত্যাদি।

অনুধাবন প্রশ্ন :

১. কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? কবি নদীর তীরে অপেক্ষা করছেন কেন?

২. ভরা নদী ক্ষুরধারা/ খরপরশা- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বাঁকা জলকে কাল স্রোতের প্রতীক বলা হয়েছে কেন?

৩. কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা- ব্যাখ্যা কর।

৪. চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

৫. পরপারে দেখি আঁকা/ তরুছায়ামসী-মাখা- বলতে কী বোাঝানো হয়েছে?

৬. এপারেতে ছোটো খেত, আম একেলা- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

৭. দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে- কী বোঝানো হয়েছে?

৮. ভরা পালে চলে যায়,/ কোনো দিকে নাহি চায়- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

৯. বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে- কবি এ আহ্বান জানিয়েছেন কেন?

১০. শুধু তুমি নিয়ে যাও ... কূলেতে এসে- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

১১. এখন আমারে লহো করুণা করে- কবি এ আহ্বান জানিয়েছেন কেন?

১২. ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

১৩. শূন্য নদীর তীরে/ রহিনু পড়ি- কী বোঝানো হয়েছে?

১৪. যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী- ব্যাখ্যা কর। নদীর স্রোতে চলমান তরীকে মহাকালের প্রতীক বলা হয়েছে কেন?

১৫. কৃষক কেন সব ফসল নৌকায় তুলে দেন?

১৬. সোনার তরী কবিতায় কীভাবে কবির জীবনদর্শন বা দার্শনিক সত্য লুকিয়ে আছে- ব্যাখ্যা কর।

সৃজনশীল প্রশ্নের দিক :

১. কবির জীবন সত্যের, দার্শনিক সত্যের প্রকাশ।

২. মানুষের জীবনে কালের প্রভাব। কালের গতিময় অবস্থা বা গতিশীলতা।

৩. কীর্তিমানের কীর্তি কালের যাত্রায় ঠাঁই পেলেও ব্যক্তির ঠাঁই হয় না। মহাকাল শুধু কর্মের ধারক।

৪. মানুষকে অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

৫. কীর্তিমানের দৈহিক মৃত্যু হলেও তার কর্মের বা কীর্তির মৃত্যু হয় না। কালের প্রবাহে ব্যক্তির কীর্তি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

৬. পৃথিবীতে নির্মোহ হওয়ার শিক্ষা। জাগতিক মোহের প্রতি নির্মোহ হওয়ার শিক্ষা।

৭. প্রতীকের আশ্রয়ে জীবন সত্য বা দার্শনিক সত্যের প্রকাশ।

৮. ব্যক্তি জীবনের নশ্বরতা বা অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু।

৯. মানবসৃষ্টির মহিমা বা অমরতা প্রকাশ।

মূলভাব : কালের প্রবাহে ব্যক্তি নয়, তার সৃষ্টিই স্থান পায়। ব্যক্তিকে নিজের নির্মম পরিণতি মেনে নিতে হয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন-১ :

‘আমার নহে গো, ভালোবাস শুধু ভালোবাস মোর গান

বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হলে অবসান

চাঁদের কে চায়, জোছনা সবাই যাচে

গীত-শেষে বীণা পড়ে থাকে ধূলি-মাঝে।’

ক. সোনার তরী কবিতায় ‘বাঁকা জল’ কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

খ. এখন আমারে লহো করুণা করে- কবি কেন করুণ প্রার্থনা করেছেন?

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সোনার তরী’ কবিতার সাদৃশ্য বর্ণনা কর।

ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকে আলোচ্য কবিতার পূর্ণ প্রতিফলন হয়নি- বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল প্রশ্ন-২ :

এভারেস্ট হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, এটি প্রমাণিত হয় ১৮৫২ সালে। এর চূড়ায় উঠতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক অভিযাত্রী। অতঃপর ১৯৫৩ সালে অর্থাৎ ১০১ বছর পর নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথম পা রাখেন এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায়। অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা, অধ্যবসায় ও কষ্ট সহ্যের পর অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দুর্জয়কে জয় করেন তিনি। আজ তিনি নেই। কিন্তু মহাকাল তার কাছে হার মেনেছে। তিনি না থাকলেও মহাকাল তার নাম লিখে রাখতে বাধ্য হয়েছে।

ক. ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?

খ. কবিতায় ‘সোনার ধান’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে ‘সোনার তরী’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘উদ্দীপকের শেরপা তেনজিং ও আলোচ্য কবিতার কবি কর্মের গুণে যেন একে অপরের প্রতিচ্ছবি’- উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

এইচএসসি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম