পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
মো. নূরুল আমিন
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চবিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা
জলবায়ু ও দুর্যোগ
প্রশ্ন : ১। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলগুলোতে নদীভাঙনের প্রবণতা রয়েছে? কেন?
নদীভাঙন :
বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে নদীভাঙন অন্যতম।
এলাকা :
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। শত শত নদী জালের মতো এ দেশকে জড়িয়ে রয়েছে। তাই এ দেশের অনেক জায়গায়ই নদীভাঙনের প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণত নদীসমৃদ্ধ এলাকাগুলোতেই বাংলাদেশের নদীভাঙনের প্রবণতা রয়েছে।
কারণ :
* বন্যা নদীভাঙনের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক কারণ। বন্যার অতিরিক্ত পানির স্রোত ও ঢেউ নদীর পাড়ে আঘাত হানে, ফলে বন্যার সময় নদীভাঙন শুরু হলে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে।
* নদী থেকে বালি উত্তোলনের ফলে নদীভাঙন দেখা দেয়।
* নদী তীরবর্তী গাছপালা কেটে ফেলার কারণেও নদীভাঙন দেখা দেয়।
* যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি তৈরির সময় নদীর দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নদীশাসন করা হয়। এতেও নদীভাঙন হয়।
* বন্যা ছাড়াও জোয়ার-ভাটা, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে নদীভাঙন বৃদ্ধি পায়।
* বন্যা প্রাকৃতিক নিয়মে হলেও মানুষের পরিবেশবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড এর তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মারাত্মক বন্যা নদীভাঙনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সরকারি হিসাব মতে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি নদীভাঙনের শিকার হয়।
সুতরাং, ফারাক্কা বাঁধসহ, বন্যা ও নানা কারণে নদীভাঙন বাড়ছে। ফলে কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, জনবসতি এমনকি গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে স্বাভাবিক জনজীবন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। নদীভাঙন রোধে সরকার ও জনগণ- সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন : ২। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলগুলোতে খরা বেশি হয়?
উত্তর : বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম হলো খরা। দীর্ঘকাল ধরে শুষ্ক আবহাওয়া এবং অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ও ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে জনজীবনে নেমে আসে নানা দুর্ভোগ। এটাই খরা। খরা বেশি দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেমন : দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী ইত্যাদি অঞ্চলে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে শুষ্ক আবহাওয়া এবং অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও অল্প সংখ্যক নদী থাকার কারণে এসব অঞ্চলে খরা বেশি দেখা দেয়। ফলে ‘মঙ্গা’ তথা খাদ্য ও কাজের অভাব এসব এলাকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। প্রতিকূলতার সঙ্গে, বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে এদের বেঁচে থাকতে হয়।
প্রশ্ন : ৩। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ?
উত্তর : বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম হলো ভূমিকম্প। এ দুর্যোগে প্রকৃতিগত কারণে ভূমি কেঁপে ওঠে। ফলে পৃথিবীর বুকে তৈরি নানা স্থাপনা ভেঙে পড়ে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। ভূমিকম্প পাহাড়ি এলাকার দুর্যোগ হলেও সাম্প্রতিককালে বালাদেশে প্রায়ই মৃদু ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে সরকার ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের নিশ্চিত ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
এলাকা-১ :
এ অঞ্চলের অন্তর্গত এলাকা হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত জেলাগুলো।
এলাকা-২ :
এলাকা-২-এ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের জেলাগুলো অর্থাৎ দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে দেশের মধ্যভাগের এলাকাগুলো এ অঞ্চলের অন্তর্গত।
এলাকা-৩ : এ অঞ্চলের অন্তর্গত এলাকা হলো বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের এলাকাগুলো।
ওপরের তিনটি এলাকাগুলোর মধ্যে ‘এলাকা-৩’ হলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এ এলাকায় অবস্থিত দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের এলাকার জেলাগুলো যেমন : বৃহত্তর সিলেট জেলা, শেরপুর জেলা, কুড়িগ্রাম ইত্যাদি মারাত্মক ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সুতরাং, ভূমিকম্পকে ভয় পেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ব-প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের তিনটি কারণ উল্লেখ কর।
উত্তর : অন্যতম কারণ হলো মানবসৃষ্ট দূষণ। যেমন : শিল্প করখানা এবং যানবাহনের দূষণ। ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে।
* বন-জঙ্গল কেটে সাফ করলে এবং গাছপালা কেটে ফেললে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয় ও জলবায়ুর পরিবর্তন হয়।
* নদীশাসনের ফলে নদী ধ্বংস হওয়া, জলাধার ভরাট করা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতির ক্ষতি হয় ও জলবায়ুর পরিবর্তন হয়।
সুতরাং, প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও পরিবেশবিরোধী মানুষের নানা কর্মকাণ্ডই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ।
