এইচএসসি ২০২৫ : বাংলা প্রথমপত্র
ড. সনজিত পাল
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা
আমার পথ
-কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলা কাব্যজগতের এক অনন্য শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। সত্য-প্রকাশে দুরন্ত সাহস নিয়ে নজরুল আমৃত্যু সব অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার ও প্রতিবাদী। মাত্র আট বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি লেটোর দলে যোগ দেন। তখন থেকেই তিনি সৃষ্টিশীল সত্তার অধিকারী হয়ে ওঠেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯১৭ সালে তিনি বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন এবং করাচিতে যান। ১৯২০ সালে বাঙালি পল্টন ভেঙে গেলে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং পরিপূর্ণ সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। সাপ্তাহিক ‘বিজরী’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হলে চারদিকে তার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। আবার একই সঙ্গে কোমল দরদি মন নিয়ে ব্যথিত বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি। এক হাতে বাঁশি আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন নজরুল। বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে এসেই প্রচলিত শিল্পধারাগুলোকে পাল্টে দিয়ে নতুন বিষয় ও নতুন শব্দে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে করেছেন সমৃদ্ধতর। তিনি ‘লাঙল’, ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’-সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সম্পাদনার কাজে যুক্ত ছিলেন। দেশাত্মবোধক গান, শ্যামাসংগীত, গজল রচনায় তার জুড়ি মেলা ভার। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ‘রুদ্র-মঙ্গল’ থেকে সংকলিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক এখানে আত্ম-চেতনার আলোক বর্তিকা। তিনি নিজেই নিজের কর্ণধার। তিনি অকারণে কাউকে সমীহ করেন না। কোনো ভয়ের কাছে তিনি মাথা নত করেন না। নিজের চেনা পথ, চেনা বিশ্বাসেই তিনি চলেন। অকারণে কাউকে খুশি করতে তিনি বিনয় দেখাতেও রাজি নন। তিনি বিশ্বাস করেন নিজের আদর্শ ও সত্তাকে চিনলেই সব চেনা যায়। জাতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয়দের পরনির্ভরশীল মানসিকতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন আত্মনির্ভর না হলে ভারতবাসী কখনোই স্বাধীন হবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি মহাত্মাগান্ধীর উদাহরণ দিয়েছেন। ভারতবাসী নিজেরা নিষ্ক্রিয় থেকে শুধু মহাত্মাগান্ধীকে প্রাণপণে ভক্তি করলে ভারত কখনোই স্বাধীন হবে না। প্রাবন্ধিক আশা করেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য ভারতবাসীকে আত্ম-চেতনার পথে নামতে হবে। উদ্দেশ্য ঠিক করে আত্ম-শক্তিতে বলিয়ান হয়ে ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে এগিয়ে যেতে পারলেই ভারত ভারতবাসীর হবে। এ জন্য তিনি এ ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য নিজ হাতিয়ার নিজের সত্যকে, নিজের আদর্শকে আগুনের ঝাণ্ডার মতো ব্যবহার করতে চেয়েছেন। পচন ধরা সমাজে প্রলয় আনার দুর্দম সাহসিকতা একমাত্র তার সত্যের মধ্যেই রয়েছে। মিথ্যাই পারবে এ সত্যকে নিভাতে। যেহেতু প্রাবন্ধিক মিথ্যাকে ত্যাগ করেছেন, তাই তার আগুনের ঝাণ্ডা নেভানোর ক্ষমতা কারো নেই। তিনি বিশ্বাস করেন নিজের ধর্মে বিশ্বাসী ভারতীয় জাতি নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। মূলত এ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সত্য প্রকাশ এবং মিথ্যাকে ঘৃণার পাশাপাশি তার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে প্রকাশ করেছেন।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালো করে খেয়াল করতে হবে :
‘আমার পথ’ রচনাটি একটি প্রবন্ধ। প্রবন্ধ জাতীয় রচনায় লেখকের যুক্তিগ্রাহ্য ভাবনা প্রাধান্য পায়। সমাজ, দেশ ও জাতীয় সমস্যাকে কেন্দ্র করে রচিত প্রবন্ধে প্রাবন্ধিকের চেতনা চলমান যুগের চেতনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এ প্রবন্ধেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ রচনায় লেখক নিজের আত্ম-পরিচয়কে কীভাবে প্রকাশ করেছেন, কোন কোন উপমায় নিজেকে তুলে ধরেছেন এবং কেন এ ভাবে নিজের আদর্শকে ব্যক্ত করেছেন? তৎকালিন সমাজ ব্যবস্থার স্বরূপ, সামাজিক ধারণা ও সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে লেখকের মানস ও বিশ্বাসের পার্থক্য। প্রাবন্ধিকের আদর্শকে তিনি কীভাবে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজে লাগাতে চেয়েছেন তা জানতে হবে। কেন মহাত্মাগান্ধীর আন্দোলন বৃথা হচ্ছে? সেখানে ভারতবাসীর করণীয় কী? কেন প্রাবন্ধিক মিথ্যা তোয়াজ করতে চান না? কেন তিনি অসম্প্রদায়িক ভারতবর্ষ আকাক্সক্ষা করেছেন? মিথ্যা বিনয় কেন সমাজ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর? লেখক কেন আত্মাকে চিনতে বলেছেন?
অনুধাবন প্রশ্ন
১. আমার পথ দেখাবে আমার সত্য- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
২. যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৩. নিজেকে চিনলে/ নিজেকে চেনা- বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
৪. এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়- ব্যাখ্যা কর।
৫. এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৬. মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো- ব্যাখ্যা কর।
৭. অহংকারের পৌরুষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৮. অভিশাপ রথের সারথী বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৯. নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে- কীভাবে?
১০. এ পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে- ব্যাখ্যা কর।
১১. একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
১২. আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে- ব্যাখ্যা কর।
১৩. আগুনের সম্মার্জনা কেন প্রয়োজন?
১৪. আমি সে দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত- ব্যাখ্যা কর।
