পড়াশোনার পাশাপাশি গুরুত্ব দেবে যেসব বিষয়ে
মেহেদী হাসান
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রভাষক, গণউদ্যোগ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ লাকসাম, কুমিল্লা
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের সময়টা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়টাতে শিক্ষার্থীরা জীবনের নতুন একটি অধ্যায় সূচনা করে। এসময়ে শিক্ষার্থীদের মনে নতুন নতুন স্বপ্ন হাতছানি দেয়। ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার ভিত্তি তৈরি হয় এ সময়ে। এ সময়টা আবার ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সময়! তাই গুরুত্বপূর্ণ এ সময়টাতে পড়াশোনার পাশাপাশি কী করলে বা কীভাবে এ সময়টা কাজে লাগালে ভবিষ্যৎ জীবনে এক ধাপ এগিয়ে থাকা যাবে তা নিয়ে থাকছে কিছু পরামর্শ-
সৃজনশীল চর্চা : একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল চর্চা অব্যাহত রাখা জরুরি। কারণ অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ভালো ফলাফল করতে প্রয়োজন কিন্তু মেধা বিকাশের জন্য সৃজনশীলতার চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা, বিজ্ঞান চর্চা, নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করা, জীবনযাত্রার বিভিন্ন কলাকৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা করা ইত্যাদি সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে।
মেন্টর নির্বাচন : উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ সময়ে তাদের চিন্তা ভাবনার প্রসার ঘটতে থাকে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। থাকে ভুল পথে পা বাড়ানোর শঙ্কা। ভাঙা-গড়ার এ সময়টাতে শিক্ষার্থীদের দরকার একজন ভালো মেন্টর বা কোচের সান্নিধ্যে থাকা। তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার পরামর্শদাতা হিসাবে ভালো মেন্টর নির্বাচন করা জরুরি। এ মেন্টর হতে পারে তাদের শিক্ষক, বাবা-মা, বড় ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী যে কেউ।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা : বড় হওয়ার স্বপ্নই মানুষকে বড় করে তুলে। শিক্ষার্থীদের এ সময়টা বড় স্বপ্ন দেখার সময়। জীবনে বড় হতে হলে এখান থেকেই শুরু করতে হবে। ভালো ফলাফল, বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন, বড় কোনো চাকরি, জীবনে উচ্চ কোনো পর্যায়ে অবস্থান করার মানসিকতা এখনই তৈরি করতে হবে। এসব কিছুই উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রয়াস।
সমসাময়িক বিষয় : পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে স্মার্ট করে না। তথ্যবহুল এ সময়ে যে যত বেশি তথ্য ধারণ করতে পারবে সে-ই তত বেশি স্মার্ট। তাই স্মার্ট হতে হলে পুঁথিগত বিদ্যার বাহিরের জগতের খোঁজখবর রাখতে হয়। তাই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দরকার সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়তে ও জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, আত্মোন্নয়নমূলক বই, সাধারণ জ্ঞানের বই ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের চিন্তার জগতকে আরও বেশি শানিত করে।
দক্ষতা অর্জন : শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে একধাপ এগিয়ে থাকবে। পড়াশোনার পাশাপাশি যে দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীরা চাইলেই অর্জন করতে পারে তা হলো- ইংলিশ, জাপানিজ, চাইনিজ, হিন্দি, আরবি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় যোগাযোগ করতে পারার দক্ষতা, কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা, সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা, নেতৃত্ব দানে দক্ষতা, সৃজনশীল লেখার দক্ষতা ইত্যাদি।
অর্থ উপার্জনের চেষ্টা : পড়াশোনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করাটা দোষের কিছু না। এতে যেমন পরিবারের আর্থিক চাপ কমে তেমনি নিজের উপার্জন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক আনন্দ পাওয়া যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের একটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে প্রাইভেটলি টিউশন করান। এতে অর্থ উপার্জনের সঙ্গে জ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে যেমন- শাক-সবজি চাষ, গৃহপালিত পশু-পাখি পালন, নার্সারি, হস্তশিল্প, ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, কন্টেন্ট রাইটিং, ব্লগিং, ফেসবুক মার্কেটিং, ইউটিউবে কন্টেন্ট তৈরি, সৃজনশীল লেখালেখি ইত্যাদি।
অগ্রগামীদের সঙ্গে সেতুবন্ধন : সিনিয়র শিক্ষার্থী বা যারা ভালো ফলাফল করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে অথবা ভালো কোনো অবস্থানে রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদের কাছ থেকে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ করা যায়। পড়াশোনার বিভিন্ন উপকরণ যেমন-পাঠ্যবই, নোট খাতা, লেকচার শিট, টেস্ট পেপার ইত্যাদি সংগ্রহ করার পাশাপাশি ভালো ফলাফলের জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল বা টিপস জানা যায়। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়াসহ ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
শরীর চর্চা : সুষম খাবার ও শরীর চর্চা এ দুয়ে মিলে সুস্থ দেহ। সুস্থ দেহ মানে সুস্থ মন। আর সুস্থ মন মানেই ভালো কিছু করার প্রত্যয় গড়ে ওঠা। পড়াশোনার পাশাপাশি শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়াটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শরীর ভালো না থাকলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ আসে না। তাই পড়াশোনায় ভালো করার পাশাপাশি দরকার সুস্থ দেহ। নিয়মিত শরীরচর্চা যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, খেলাধুলা, সাইক্লিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরের সুস্থতা ধরে রাখা যায়।
ধ্যান করা : ধ্যান শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও কল্পনা শক্তিকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে মনোজগতকে প্রসারিত করে এবং পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সম্ভব হলে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে নিয়মিত ধ্যান করা বা মাঝে মাঝে ধ্যান করা। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করা, ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা, সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে চিন্তা করা, নিজের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা করা ধ্যানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ধ্যান করার ফলে আত্মশুদ্ধি ও পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়। এতে মানসিক প্রশান্তি আসে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ধ্যানের গুরুত্ব রয়েছে।
