এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বাংলা প্রথমপত্র
ড. সনজিত পাল
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সিনিয়র শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা
প্রতিদান -জসীমউদ্দীন
বাংলা সাহিত্যে কবি জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬) ‘পল্লি-কবি’ হিসাবে সমধিক পরিচিত। কলেজে অধ্যয়নকালে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন এবং ছাত্রাবস্থায়ই কবিতাটি স্কুল পাঠ্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যাপনা করেছেন। পল্লিজীবন তার কবিতার প্রধান উপজীব্য। বাংলার গ্রামীণ জীবনের আবহ, সহজ-সরল প্রাকৃতিক রূপ উপযুক্ত শব্দ উপমা ও চিত্রের মাধ্যমে তার কাব্যে এক অনন্য সাধারণ মাত্রায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। তার বিখ্যাত ‘নকসী কাঁথার মাঠ’ কাব্যটি বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘প্রতিদান’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। এ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা। কেননা ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর, বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।
‘প্রতিদান’ কবিতাটি পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালো করে খেয়াল করতে হবে-
কবি জসীমউদ্দীন নিজের সাহিত্য ভান্ডারকে গ্রামীণ উপমায় যেমন সাজিয়েছেন, তেমনি গ্রামীণ নর-নারীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। গ্রামীণ শব্দ, ভাব-ভাষা, উপমা ও তুলনা তার সাহিত্যকে করেছে প্রাণময়। প্রতিদান কবিতাও এর ব্যতিক্রম নয়। কবিতায় বর্ণিত হয়েছে- প্রাপ্তিতে নয়, পরোপকারের মধ্যেই রয়েছে সত্যিকারের সুখ ও মানব জীবনের সার্থকতা। এমনকি যে বা যারা কবির ক্ষতি করেছে, কবি প্রতিদানে তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে এগিয়েছেন। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে তাদের সুখী করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ‘প্রতিদান’ কবিতা পড়ার সময় যে দিকগুলো বেশি করে পড়তে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো। কবি কার জন্য কেঁদে বেড়ান এবং কেন, কবিতায় কবির পরার্থপরতা যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, কবি কাকে বুকভরা গান দেন এবং কেন, কবিতায় প্রতিদান কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে, আঘাতের বিপরীতে কবি কেন ভালোবাসা দিতে চেয়েছেন, কবিতায় প্রতিদানের মাধ্যমে প্রীতিময় পৃথিবী যেভাবে সৃষ্টি করা যেতে পারে ইত্যাদি।
অনুধাবন প্রশ্ন
১. প্রতিদান বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
২. কবি কার ঘর বেঁধেছেন এবং কেন?
৩. কবি কার জন্য কেঁদে বেড়ান এবং কেন?
৪. পথের বিবাগী বলতে কী বোঝায়?
৫. কবি কার তরে দীঘল রজনী জেগেছেন এবং কেন?
৬. কবি কাকে বুকভরা গান দিয়েছেন এবং কেন?
৭. ‘কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৮. ‘মোর বুকে যেবা কবর ... ফুল মালঞ্চ ধরি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
৯. ‘যে মুখে সে কহে... সাজাই নিরন্তর’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
১০. ‘আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
১১. অনিষ্টকারীর প্রতি কবির প্রতিদান কী? ব্যাখ্যা কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের দিক
১. কবির নিঃস্বার্থপর মনোভাবের পরিচয়।
২. মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
৩. কবির ক্ষমার মনোভাব।
৪. প্রীতিময় ও প্রেমময় পৃথিবী গড়ার গুরুত্ব।
৫. হিংসার বিপরীতে মানবীয় ভালোবাসার জয়।
৬. উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়।
মূলভাব : হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানির বিপরীতে নিঃস্বার্থ মানবীয় ভালোবাসার জয়গান।
নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন : ১
সকলের মুখ হাসি ভরা দেখে
পার না মুছিতে নয়ন ধার?
পরহিত ব্রতে পার না রাখিতে
চাপিয়া আপন বিষাদ-ভার?
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।
ক. কবি জসীমউদ্দীনের কবিতার প্রধান উপজীব্য কী?
খ. কবি কাকে বুকভরা গান দেন এবং কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ দুই চরণকে আলোচ্য কবিতার মূলভাবনারই প্রতিফলক বলা যায় কি? যুক্তি দাও।
নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন : ২
স্বার্থ-সুখ চাহি না কো, আত্মনিষ্ঠ কেহ মোরা নয়;
পরার্থে করিব বিশ্বে সর্ব বিসর্জন
আমাদের আত্মত্যাগে প্রতিগৃহে নামিবে অভয়
মর্ত্যরে মাটিতে হবে স্বর্গের সৃজন।
ক. বিবাগী শব্দের অর্থ কী?
খ. কবি কার জন্য পথে পথে ঘুরেন এবং কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘প্রতিদান’ কবিতার যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের কবি আর আলোচ্য কবিতার কবির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন বলে তুমি মনে কর কি? যুক্তি দাও।
