নিউইয়র্কের চিঠি
অবাধ বাকস্বাধীনতার দেশে আওয়ামী তাণ্ডব!
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ অধিবেশনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর নিউইয়র্ক সিটি সরগরম হয়ে ওঠে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য এ সময়টি বছরের অন্য সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কখনো মারমুখী হয়ে ওঠে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি, বরং এতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিগত আড়াই দশকের মধ্যে ১/১১ খ্যাত ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের দুটি বছর ছাড়া ব্যতিক্রমহীনভাবে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরকারপ্রধানের নিউইয়র্কে আগমনের দিনে জন এফ কেনেডি (জেএফকে) বিমানবন্দরে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তারা যার যার দলীয় স্লোগানের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের প্রতি উসকানিমূলক ধ্বনি তুলতেও কখনো ভুল করেননি। কখনো কখনো হাতাহাতি ও পরস্পরকে লক্ষ করে পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলের প্রবাসী নেতাকর্মীদের জন্য এটা যেন ধর্মীয় গোঁড়ামির মতো আবশ্যিক কর্তব্যে পরিণত হয়েছিল।
দেশে যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন; তখন তিনি দলবল নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদান করতে এলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। স্বল্প দূরত্বে অবস্থান নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে নিউইয়র্কে স্বাগত-শুভেচ্ছার উচ্ছ্বাসমূলক স্লোগান দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদ ছাড়াও ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত টানা ১৫ বার অর্থাৎ বাংলাদেশের যে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের চেয়ে রেকর্ডসংখ্যক সফরসঙ্গী নিয়ে রেকর্ডসংখ্যক বার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে এসেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা রীতিমাফিক গাঁটের অর্থে নিজ নিজ গাড়ির তেল পুড়িয়ে এবং টোল ও পার্কিং ফি দিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র আগমনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে। একইভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাজির হয়েছেন তাদের নেত্রীকে স্বাগত জানাতে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বিধিমালায় তাদের নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না বলে শর্ত থাকলেও প্রায় প্রতিটি দলের যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের যেসব দেশে যথেষ্টসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করে-সর্বত্র শাখা রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দলগুলোর প্রধানের ব্যক্তিগত পছন্দের অথবা কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ও আশীর্বাদপুষ্ট কমিটিও আছে।
বাস্তবে, বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের নিউইয়র্ক আগমনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে আগত বিক্ষোভকারীরা অথবা উচ্ছ্বসিতভাবে তাকে স্বাগত জানাতে ভিড় জমানো নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে তাকে, তিনি খালেদা জিয়া হোন অথবা শেখ হাসিনা, এক নজর দেখার বা তাদের উদ্দেশে খালেদা বা হাসিনা হাত নাড়াচ্ছেন, এমন দৃশ্য দেখারও সুযোগ পান না। তবুও উভয়পক্ষ বিমানবন্দরে যায় এবং নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের বেঁধে দেওয়া বেষ্টনীর মধ্যে থেকে হট্টগোল করে মূলত তাদের শোডাউন করতে এবং পরস্পরের প্রতি আস্ফালন ও উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া ছাড়াও নানা অঙ্গভঙ্গি করতে। এর বেশি কিছু নয়। বিদেশি যাত্রীরা অবাক বিস্ময়ে দেখে, অনেকে বিরক্তি বোধ করে। বিমানবন্দরের এ হম্বিতম্বির পর উভয়পক্ষের ক্লান্ত নেতাকর্মীরা বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিপণন কেন্দ্র কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকা বা ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডে গিয়ে একই রেস্টুরেন্টে, অনেক সময় একই টেবিল ঘিরে বসে চা-শিঙারা খান। সেখানে তারা ভদ্র থাকেন।
প্রটোকল অনুযায়ী সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে ‘রাষ্ট্রীয়’ ও ‘সরকারি’ সফরে আসেন, তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইনে নির্ধারিত সুবিধার অংশ হিসাবে দু’একজন আমেরিকান সরকারি অফিসার কর্তৃক সাধারণ অভ্যর্থনা ও নিরাপত্তা লাভ করেন। বিমানবন্দর থেকে সাধারণ যাত্রীরা যে বহির্গমন পথ দিয়ে বের হন, তারা সেদিক দিয়ে বের না হয়ে ভিন্ন বহির্গমন পথ দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ পান। তাদের সফরসঙ্গী কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী ও তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনের ‘এ-১’ এবং ‘এ-২’ ভিসায় আসেন তারা বিশেষ অনুমোদনে তাদের সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে যেতে পারেন।
এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আশিতম অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে সরকারি সদস্যরা ছাড়াও তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয়জন নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নানা কথা শুরু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কোমর বেঁধে নেমেছিল বিমানবন্দরে বাংলাদেশের জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে হেনস্তা করতে। তারা তাদের ভাষায় ‘ভয়ংকর’ ঘটনা ঘটানোর হুমকিসহ আগাম মহড়াও দিয়েছে বাঙালি পাড়া জ্যাকসন হাইটসে সমাবেশের মাধ্যমে। তাদের বিশেষ ক্ষোভ ছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) থেকে প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত দুজন সদস্যের প্রতি, সংগঠনটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। সময় স্বল্পতার কারণে তারাসহ প্রতিনিধিদলের রাজনৈতিক দলীয় সদস্যদের সাধারণ পর্যটন ভিসায় আসতে হয়েছে বলে তারা বিমানবন্দরে কূটনৈতিক ইমিউনিটি পাননি। ইমিগ্রেশনের আবশ্যিক প্রক্রিয়া শেষে সাধারণ যাত্রীদের বহির্গমন পথ দিয়ে বের হলে তাদের আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। তারা বিশেষ করে এনসিপির আখতার ও ডা. জারাকে লক্ষ করে অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করে। দীর্ঘপথের ক্লান্তিতে অবসন্ন অসহায় একজন নারীর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাশীল থাকার ঔচিত্যের সব সীমা লঙ্ঘন করেছিল তারা।
এক বছর আগে তাদের দলের সরকারের ন্যক্কারজনক পতন ঘটানোর আন্দোলনের অন্যতম কারিগর আখতার হোসেনকে নাগালের মধ্যে পেয়ে তারা তাকে নানা আপত্তিকর অভিধায় গালি দিয়ে তার পিঠ লক্ষ করে একাধিক ডিম ছোড়ে। জারা ও আখতার তাদের জন্য নির্ধারিত গাড়িতে গিয়ে ওঠার পর গাড়ি চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগারদের গালিগালাজের তাণ্ডব অব্যাহত থাকে। গালিগালাজ যারা করতে পারে, তারা মূলত গালি দেয় তাদের অসহায়ত্ব থেকে। তারা পারিবারিক শিষ্টাচারবঞ্চিত এবং সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বহু দূরে অবস্থান করে। গালি দেওয়াকেই তারা মোক্ষম অস্ত্র ভাবে। অপরদিকে যাদের লক্ষ করে গালিবর্ষণ করা হয়, তারা গালির ব্যাপারে নির্বিকার থাকেন এবং কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে তাদের মানসিক স্থৈর্য, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার যে পরিচয় দিয়েছেন, সে জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার।
তবে ঘটনাটি আমেরিকার মাটিতে না ঘটে যদি বাংলাদেশে ঘটত, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, এমন ঘটনায় অনিবার্যভাবে খুন-জখম ঘটত। কিছু লোক গ্রেফতার হতো, কয়েকটি মামলা হতো। যুক্তরাষ্ট্রে গালিগালাজ করা যে কারও বাকস্বাধীনতার অংশ। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ কারও ওপর হাত না তুলবে, আঘাত না করবে বা গুরুতর শৃঙ্খলাভঙের কারণ না ঘটাবে, ততক্ষণ পুলিশ কোনো পক্ষের কাউকে গ্রেফতার করবে না। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে। এ ব্যাপারে আইন তাদের হাত বেঁধে দিয়েছে এবং শক্তি প্রয়োগের এখতিয়ার দেয়নি। বিবদমান পক্ষের একে অন্যের ওপর হাত তোলার ক্ষেত্রেও বিষয়টি যদি অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও পুলিশি তদন্তের পর আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে আদালত পুলিশের কাছে তদন্ত রিপোর্ট এবং বাদীর আইনজীবীর কাছে দায়েরকৃত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাদীর শরীরে অভিযুক্ত কর্তৃক হামলার ফলে শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্তপাত ঘটেছে কিনা, কোনো স্থান ফুলে গেছে কিনা, আঘাতজনিত কারণে শরীরের কোনো স্থান লালচে হয়ে গেছে কিনা, ইত্যাদি সম্পর্কিত মেডিকেল রিপোর্ট পেশ করতে বলবে। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ ও তাকে লাঞ্ছনা করা থেকে রক্ষা করতে যারা তাকে নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করেছিল, তাদের একজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, ডিম নিক্ষেপকারী তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ অভিযোগের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে বিবেচনা করে পুলিশ কয়েক ঘণ্টা পর ডিম নিক্ষেপকারী মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে স্থানীয় প্রিসিঙ্কটে (থানা) নিয়ে যায়। মিজান প্রিসিঙ্কটে রাত কাটায় এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের যথার্থতা না পেয়ে পরদিন পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। মিজানকে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং দিল্লি থেকে স্বয়ং শেখ হাসিনা ভিডিও কলে মিজানকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এটাই আওয়ামী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। এখনো তাদের মাঝে শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি-কী কী কার্যকারণে তাদের পতন ঘটেছে এবং প্রধানমন্ত্রীসহ দলের সব শীর্ষ নেতাকে দেশ থেকে পলায়ন করতে হয়েছে। তাদের মাঝে কখনোই তাদের কোনো অপকর্ম, ভুলের কারণে অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি। তারা তাদের দ্বারা বিরোধী পক্ষের লোকজনের ওপর নিগৃহ চালানো, গুম করা, এমনকি হত্যাকাণ্ড চালানোকে পর্যন্ত বিজয়োৎসব হিসাবে উদ্যাপন করতে অভ্যস্ত।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট বিপ্লব চলাকালে আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসাবে ভূমিকা পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ক্যাডার বাহিনীর গুলিতে ও ধারালো অস্ত্রাঘাতে শিশু, তরুণ ও প্রবীণসহ দেড় সহস্রাধিক লোকের নিহত হওয়া এবং বহু সহস্র লোকের আহত ও চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণের ঘটনা তাদের কাছে বড় কোনো ব্যাপারই নয়। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিক্ষুব্ধ তরুণদের ওপর গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন করার নির্দেশ স্বয়ং সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রদান করেছেন এবং তার সহযোগী কয়েকজন তাতে সায় দিয়েছেন, এমন প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তার মুখে উচ্চারিত হয় ‘আমি কী করেছি!’ তার অনুগতরা তাকে বাহবা দিয়ে ততধিক জোরের সঙ্গে বলে, ‘আমরা কী করেছি?’ তারা হতাহতের সংখ্যা বিচার এবং কী আক্রোশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা বোঝার বিবেক হারিয়েছে। তারা নতুন করে যুক্তি দেয়, যে গুলিতে লোকজন মরেছে বা আহত হয়েছে, সেই গুলি বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবহার করে না। আন্দোলনকারীরাই তাদের ওপর গুলি চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে ‘জনগণের দ্বারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ মাধ্যমে গঠিত সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে খেপিয়ে তুলেছিল। তারা আন্দোলনকারীদের হাতে হাজার হাজার পুলিশ সদস্য নিহতের কথা বলে। অথচ গত বছরের অক্টোবরেই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ২১ জন কন্সটেবল, একজন নায়েক, সাতজন অ্যাসিষ্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, একজন অতিরিক্ত সাব-ইন্সপেক্টর, ১১ জন সাব-ইন্সপেক্টর এবং তিনজন ইন্সপেক্টর।
অপপ্রচারে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। কুতর্কে তারা বিশ্বসেরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তারা হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে। আওয়ামী লীগারদের হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর লুণ্ঠন করার পর জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রচার চালাচ্ছে। কোনোটারই সত্যতা নেই। যে কোনো দেশে কোনো বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানে সফলতা অর্জনের পর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর শৃঙ্খলা তিন বছরেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বলে শেখ মুজিবের মতো নেতাকেও দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছিল। তাতেও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে বাকশাল কায়েম করে সব ক্ষমতার অধীশ্বর হয়েছিলেন। লাভ হয়নি কিছুই, বরং ক্ষমতার দম্ভ খাটানোর পরিণতিতে তার জীবন গেছে এবং তার সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও অরাজক পরিস্থিতি থেকে দেশকে সঠিক পথে আনতে বহু সময় লেগেছে। আওয়ামী নেতৃত্ব এ বাস্তবতা মেনে নিলে তারা দেশ ও বিদেশে প্রতিপক্ষের ওপর পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক ও অনুবাদক
