দীর্ঘ প্রতীক্ষা, প্রত্যাশাও দীর্ঘ
তারেক রহমান। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র, আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকারের জ্যেষ্ঠ পুত্র। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর জন্মভূমির মাটিতে পা রাখবেন তিনি। এ দিনটিতে দলের নেতাকর্মীদের পুঞ্জীভূত আবেগ-অনুভূতির জোয়ার বইবে।
২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক দিনকালে প্রকাশিত আমার একটি লেখার শিরোনাম ছিল ‘এক দিনের আবেগ-অনুভূতির শেষ পরিণতি শুভ হোক’। সেদিন যে প্রত্যাশা নিয়ে লিখেছিলাম, এবার তা পরিপূর্ণ হতে যাচ্ছে, সুদূর লন্ডন থেকে রাজনৈতিক সংগ্রামের নেতৃত্ব দেওয়ার পর বাংলাদেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তার নেতৃত্বে ইনশাআল্লাহ জনগণের ভোটে সরকার গঠন করবে। আর এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি।
ওই লেখাটির প্রাসঙ্গিকতা এখনো রয়েছে। সেই সময়ের ‘এক-এগারো মইন-ফখরুদ্দিন’ সরকার পরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জেনারেল মইন-ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারের সময়ে আদালতের আদেশে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তারেক রহমান।
২০০৮ সালে ৪ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতাল ঘিরে থাকা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী উৎসুক মানুষের আবেগ দেখেছি। রোজাকাতর একটি হাতের সামান্য ইশারা থেকে উঁচু জানালা দিয়ে নিশ্বাস নেওয়ার মতো মুহূর্ত। ৫৪৬ দিন প্রতীক্ষার পর সন্ধ্যায় ইফতার ও নামাজ শেষে নেতাকর্মীরা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ নেতাকে এক নজর দেখার প্রহর গুনছেন। অসুস্থ নেতা দীর্ঘসময় বিরতিহীনভাবে কর্মীদের আবেগ গ্রহণ করে কেবল দোয়া চাইলেন। এ ছিল ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮-এর নিখুঁত দৃশ্যপট। তারেক রহমান আদালত থেকে জামিন পাওয়ার সব কাগজপত্র নিয়ে আসেন ডিআইজি প্রিজন মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী ও তার আইনজীবী।
তারেক রহমান তার পিতা জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি, অমিত সম্ভাবনাময় তরুণ নেতা হিসাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশব্যাপী দল গোছানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তার কর্মকাণ্ডে সাধারণ নেতাকর্মী উজ্জীবিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচির সফলতায় সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড মজবুত করেছিল। সরকারের সফল কর্মসূচির পাশাপাশি তারেক রহমানের দলীয় কর্মসূচি তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিপক্ষ সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে ঈর্ষাকাতর হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দেশে-বিদেশে প্রচার-প্রোপাগান্ডায় সহযোগী হয় কিছু বুদ্ধিজীবী, সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মী। তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার চালায়। বিশেষ করে কয়েকটি বাংলা-ইংরেজি দৈনিক, স্যাটেলাইট টিভি এবং সুশীল সমাজ পরিচয়ধারী কিছু বুদ্ধিজীবী প্রতিবেশী ও পশ্চিমা দেশের সাবকন্ট্রাক্টর হিসাবে কাজ করে। তাদের মূল কাজ ছিল বাংলাদেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে প্রচার করা।
আমাদের মনে আছে, ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পল্টনের সংঘর্ষে নিরীহ মানুষ হতাহত হয়। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে-এমন প্রোপাগান্ডা শুরু হয়। দেশ বাঁচানোর নামে জরুরি আইন জারি করে ১১ জানুয়ারি ২০০৭ ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। শুরু হয় গভীর ষড়যন্ত্রের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। দুই বৃহৎ দলের শীর্ষ নেত্রীসহ অসংখ্য রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের ভেতরে ‘সংস্কার’ নামে কার্যক্রম শুরু হয়, যা দেশ ও জনগণের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বস্তি-ফুটপাত উচ্ছেদ, হাটবাজার উচ্ছেদ, অবৈধ স্থাপনা ভাঙা, ব্যবসায়িক সময় সীমিত করা, ট্যাক্স আদায়-এসব অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডে অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়। দলের ভেতরে ভাঙন সৃষ্টি করা হয়। জরুরি আইনে মূল স্রোতোধারা আক্রমণের শিকার হয়। দলীয়প্রধান কারাগারে থাকলেও কর্মীরা অফুরন্ত আবেগ প্রকাশ করেন।
দীর্ঘদিনের আবেগ-অনুভূতি পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ পায় ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে জনসমুদ্রে আসেন। তারেক রহমানের বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিদায়লগ্নে হাসপাতাল ও বিমানবন্দরে মানুষের চোখের পানি দেখা যায়।
হাজার হাজার মানুষের চোখের পানি, লাখ লাখ মানুষের আবেগ-অনুভূতির শেষ পরিণতি শুভ হওয়ার জন্য দরকার ছিল দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব। তিনি মুক্তির অল্প সময়েই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পূরণ করেছেন। তিনি সার্থক মা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ১১ সেপ্টেম্বরের পর চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন।
২০২৫ সালে, অর্থাৎ ২০০৮ থেকে প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরে তারেক রহমান দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন-জাতি সেটাই দেখতে চায়।
শায়রুল কবির খান : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী

