Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে মৃত্যু পর্যন্ত লড়ব

Icon

শহীদ ওসমান হাদি

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে মৃত্যু পর্যন্ত লড়ব

(জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। দীর্ঘ প্রায় ১ সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অকুতোভয় এ মানুষটি সার্বভৌমত্বের প্রতি ছিলেন অবিচল। তার একটি সাক্ষাৎকার থেকে নির্বাচিত অংশ যুগান্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।)

ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, এটি একটি সত্য। আমি যদি আপনার কাছে এটি উল্লেখ নাও করি, তবুও এটি যে ঘটেনি, এমন নয়। এটি ঘটেছে। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্ব।

প্রথম সত্যটি হলো : ভারতকে জুলাই অভ্যুত্থান স্বীকার করে নিতে হবে। ভারতকে খুনি, মাফিয়া আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ভারতের উচিত নয় বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের ভূখণ্ডে অস্থিরতা তৈরি করা। ভারতের উচিত নয় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কার্ড খেলা। ভারত যদি বারবার এটি করতে থাকে, তবে বাংলাদেশের মানুষের কী করা উচিত?

হ্যাঁ, যদিও এটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক শোনায়, কিন্তু আপনি যদি আমার সঙ্গে বারবার আপত্তিকর কাজ করেন, তবে আমার কী করা উচিত? আমার একটি নিরাপত্তা কবজ প্রয়োজন। আমি ভারতকে অনুরোধ করতে চাই, দয়া করে আমাদের ভূখণ্ডে আমাদের বিরক্ত করবেন না। ভারত আওয়ামী লীগের কাছ থেকে যে সুবিধাগুলো পেয়েছে, আসলে সেগুলো ভারতকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে অসহায় করে তুলেছে। কীভাবে? কিছু মানুষ বা কিছু সাংবাদিক আমাদের ভারতবিরোধী বলেন। আমি আপনাদের অনুরোধ করতে চাই, আসলে আমরা ভারতবিরোধী নই। আমরা যে কোনো ধরনের আগ্রাসনের বিরোধী। এ আগ্রাসন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন থেকেও হতে পারে। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিকভাবে আমরা ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ও নিবিড়ভাবে যুক্ত। তাই প্রথম আগ্রাসনটি ভারতের পক্ষ থেকেই আসে। সুতরাং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, দয়া করে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকার করে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুনভাবে সাজান, নতুন করে ভাবুন।

ভারত এটি কীভাবে করবে? অবশ্যই ভারতকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটি প্রমাণ করতে হবে যে, সে সীমান্তে মানুষ হত্যা করবে না। সীমান্তে আর ফেলানীকে হত্যা করবে না এবং ভারতকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না এবং এমন কিছু করবে না, যা বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করে না। বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া কোনো বাঁধ নির্মাণ করবে না। আপনারা জানেন, ভারত ও বাংলাদেশ ৫৪টিরও বেশি আন্তর্জাতিক নদী শেয়ার করে। কিন্তু ভারতীয় এলাকায় ভারত প্রতিদিন বা বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়াই বাঁধ তৈরি করছে। অথচ আন্তর্জাতিক আইনে, আপনি আপনার ভূখণ্ডে কোনো বাঁধ নির্মাণ করতে পারেন না, যদি সেই নদীটি একটি আন্তর্জাতিক নদী হয়। আপনাকে আপনার অন্য অংশীদারদের সঙ্গে তথ্য এবং সম্পদ শেয়ার করতে হবে। তাই আমি ভারতকে অনুরোধ করতে চাই, দয়া করে অতীত ভুলে যান, জুলাইকে স্বীকার করুন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।

বাংলাদেশের মানুষকে আপনার বন্ধু বানান। তারা শত্রু নয় এবং যখন আমরা ভারতের নাম উল্লেখ করি, দয়া করে মনে করবেন আমরা ভারত সরকারকে বোঝাচ্ছি, ভারতের জনগণকে নয়। কারণ জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছি যে, কিছু ভারতীয় মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানের সমর্থনে মিছিল করেছে। তারা আমাদের অনেক সমর্থন করেছে। তাই ভারতীয় জনগণ, তারা আগ্রাসী নয়। তারা আমাদের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে না। সুতরাং ভারত সরকারকে আবার ভাবতে হবে, নতুন করে সাজাতে হবে এবং তারা যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মানবিক মর্যাদাকে শ্রদ্ধা করে, তবে তাদের রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু আপনারা যদি ক্রমাগত আমাদের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করতে থাকেন, তবে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করতে হবে।

শহীদ ওসমান হাদি : জুলাই যোদ্ধা ও মুখপাত্র,

ইনকিলাব মঞ্চ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম