Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

আপনার শ্রবণেন্দ্রীয় পরীক্ষা করুন

Icon

ডা. মনিলাল আইচ লিটু

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আপনার শ্রবণেন্দ্রীয় পরীক্ষা করুন

মানুষের জন্য শ্রবণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংবেদন ক্ষমতা, যার মাধ্যমে আমরা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি। শ্রবণক্ষীণতা ও বধিরতা মানুষকে সমাজে অগ্রহণযোগ্য করে ফেলে। শিশুর ভাষা শিক্ষা, লেখাপড়া ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি অপরিহার্য।

শ্রবণজনিত সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণ দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব শ্রবণ দিবস ২০১৯-এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- Check your hearing, অর্থাৎ ‘আপনার শ্রবণেন্দ্রীয় পরীক্ষা করুন’।

বধিরতার কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থাৎ ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মাত্রার শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন। ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ প্রায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী, তাদের দুই কানেই সমস্যা। ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ তীব্র বধিরতায় এবং শতকরা ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধিরতায় আক্রান্ত।

বধিরতা সমস্যা মূলত হয় জন্মগত কারণে অথবা বিভিন্ন রোগ বা সমস্যার কারণে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মধ্যকর্ণের প্রদাহ, আঘাতজনিত সমস্যা, উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে সৃষ্ট বধিরতা। শব্দ দূষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শব্দে হেডফোন দিয়ে গান শোনা, উচ্চমাত্রার হর্ন বাজানো, লাউডস্পিকারের শব্দ, কলকারখানার শব্দ ইত্যাদি। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তারা কানে ঠিকমতো শুনতে পারে কিনা। যদি শিশুদের শ্রবণজনিত সমস্যা অথবা কথা শিখতে দেরি হওয়ার মতো কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আর বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে শ্রবণক্ষীণতা দেখা দিলে প্রয়োজনে অপারেশন করা, শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার অথবা উভয় পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে।

সংক্ষেপে বধিরতার কারণগুলো

১. বংশগত।

২. প্রসবকালীন জটিলতা : কম ওজন, প্রিম্যাচুরিটি, বার্থ এসফ্যাক্সিয়া, নিউনেটাল জন্ডিস।

৩. সংক্রমণ : মায়ের গর্ভকালীন কিছু সংক্রমণ যেমন- সাইটোমেগালো ভাইরাস, রুবেলা। শিশুর মেনিনজাইটিস, মাম্পস, মিসেলস, মধ্য কর্ণের সংক্রমণ।

৪. উচ্চ শব্দ : দীর্ঘকাল উচ্চ ভলিউমে হেডসেট ব্যবহার, হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত শব্দ, আতশবাজির শব্দ।

৫. কানের জন্য ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার।

৬. কানের অন্যান্য অসুখ।

প্রতিরোধের কলাকৌশল

১. টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা।

২. শিশুদের শ্রবণ ক্ষমতা স্ক্রিনিং কর্মসূচি।

৩. স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষিত করা।

৪. হেয়ারিং ডিভাইস ও থেরাপি সহজলভ্য করা।

৫. শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, ওটোটক্সিক ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার।

৬. জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

কানের যত্নে যা করণীয়

১. কানে কোনোকিছুই ঢোকানো যাবে না। এমনকি কান পরিষ্কার করার জন্য কাঠি, মুরগির পালক বা কটন বাড ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ২. খৈল জমে কান বন্ধ ভাব হলে বা কানের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু প্রবেশ করলে অপসারণ করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ৩. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে তেল বা অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। ৪. কানে যাতে পানি না যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। ৫. আঘাতজনিত বা মধ্যকর্ণের প্রদাহ বা অন্য কারণে কানের সমস্যা মনে হলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ৬. গাড়ির হর্ন, লাউডস্পিকারের শব্দ, হেডফোন ব্যবহার ও কলকারখানার শব্দ সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। ৭. শিশুদের টনসিল/ এডেনইড/সাইনাসের প্রদাহ এবং নাক ও গলার এলার্জির চিকিৎসা করাতে হবে। ৮. শ্রবণমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।

বধিরতা সমস্যা সমাধানে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। বর্তমানে জন্মগতভাবে বধির শিশু ও বড়দের শ্রবণজনিত সমস্যার অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সীমিত পরিসরে বাংলাদেশে রয়েছে। তবে এসব জটিল চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য অত্যন্ত উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল প্রয়োজন, যা আমাদের দেশে অপ্রতুল। সুতরাং বধিরতা প্রতিরোধে ও নিরাময়ে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, সার্জারি, শ্রবণযন্ত্র, ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী সহজলভ্য করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন দক্ষ ও মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এদেশের মানুষ অত্যাধুনিক চিকিৎসা পেয়ে উপকৃত হবে।

ডা. মনিলাল আইচ লিটু : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, নাক, কান ও গলা বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা

dr-mani1234@yahoo.com

 

শ্রবণেন্দ্রীয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম