তৃতীয় মত
করোনার কারাগারে চুয়াল্লিশ দিন
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
করোনার কারাবাসে আমার বন্দিজীবনের চুয়াল্লিশ দিন কাটল। যেহেতু আমার আশি ঊর্ধ্ব বয়স এবং শরীরে নানা ব্যাধির আবাস, সেহেতু ডাক্তার আমার কারাবাসের মেয়াদ চার মাস বেঁধে দিয়েছেন। এই গৃহবন্দি জীবন খারাপ লাগত না যদি এটা সলিটারি অর্থাৎ নির্জন বন্দিদশা না হতো।
বই পড়ি, কলাম লিখি, টেলিভিশন দেখি, টেলিফোনে কথা বলি বন্ধুদের সঙ্গে। তাতেও একাকিত্ব ঘোচে না। দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে?
এই সময় কলকাতার এক দৈনিকে চোখে পড়ল এক বিখ্যাত কলামিস্টের রাজনৈতিক কলাম। কিন্তু এদিন তিনি রাজনীতি নিয়ে লেখেননি। লিখেছেন করোনায় তার করুণ বন্দিদশার কথা।
সব কথা তার সত্য কিনা জানি না; কিন্তু তার লেখার এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘যে সতীসাধ্বী প্রিয়তমা স্ত্রীর সঙ্গে আমি ৪৫ বছর এক বিছানায় কাটিয়েছি, সেদিন তিনি এসে বললেন, ওগো শুনছো, করোনার এ ক’টা মাস আমরা আলাদা বিছানায় শুলে কেমন হয়! মনে মনে ভাবলাম, করোনা স্বামী-স্ত্রীকেও পৃথক করে। মুখে বললাম, তথাস্তু।’
অরাজনৈতিক লেখা। কিন্তু করোনা নিয়ে তার দশটা রাজনৈতিক লেখার চেয়েও চিত্তাকর্ষক। নিজের বন্দিজীবনের দিকে তাকালাম। আগে আমার ঘরে রোজ আড্ডা বসত, এখন বসে না। ছেলেমেয়ে, নাতি খুব কাছে ঘেঁষে না।
সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূর থেকে কথা বলে। মুখে মাস্ক। ঘন ঘন হাত ধুই। কিন্তু এই একাকিত্ব আমাকে একটা নতুন জীবনও দান করেছে। রাজনীতি নিয়ে লিখতে লিখতে রাজনীতির বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, তা ভুলেই গিয়েছিলাম। করোনা আমাকে সেই অচেনা জগতে ফিরিয়ে এনেছে।
অবশ্য কারাগারে আগেও আমাকে দু’মাস কাটাতে হয়েছে। সেটা গত বছরের কথা। বন্দিশালাটাও ছিল হাসপাতাল। লন্ডনের হাসপাতাল। এমনিতেই এমেনেটিজ বেশি, তার ওপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে একেবারে ভিআইপি স্টেটাস দিয়ে বেডের বদলে একটা কেবিন ছেড়ে দিয়েছিলেন।
এই কেবিনে চমৎকার সব ব্যবস্থা। কিন্তু ডাক্তার, নার্স ছাড়া সারা দিনের নিঃসঙ্গতা আমায় পীড়া দিত। বিকেলের ভিজিটার্স আওয়ারের জন্য অপেক্ষা করতাম, কখন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আসবেন।
আমার অবস্থা দেখে একদিন এক ডাক্তার বললেন, তোমার হাতে তো মোবাইল ফোন আছে। তাতে ছবি দেখে অথবা গান শুনে অবসর সময়টা কাটাও না কেন? ডাক্তারের পরামর্শ আমার মনে ধরল, ঠিক করলাম, গত চল্লিশ বছর ধরে যেমন ইংরেজি ছবি দেখে দিন কাটিয়েছি; এবার ঢাকা আর কলকাতা দুই বাংলার ছবির সঙ্গেই পরিচিত হব।
ফোনের ইউটিউব খুলে কলকাতার সিনেমা দেখতে গিয়ে বুঝলাম, আমি এ যুগের দর্শক নই। বাসি যুগের দর্শক। আমার যুগে যারা দর্শকদের হার্টথ্রব নায়ক-নায়িকা ছিলেন তারা কেউ নেই। তাদের স্থান নতুনেরা পূর্ণ করে ফেলেছে। পুরনোদের অধিকাংশকে আমি চিনতাম অথবা জানতাম।
এ যুগের কাউকে চিনি না। তারাও আমাকে চেনে না। একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার গাইতে ইচ্ছে করছিল, ‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়।’
সে যুগের কলকাতায় দাপুটে নায়ক-নায়িকা ছিলেন- কানন দেবী, যমুনা দেবী, চন্দ্রাবতী, জহর গাঙ্গুলি, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, অরুন্ধতী, উৎপল দত্ত, শোভা সেন আরও কত কে! এদের অধিকাংশের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। এমনকি উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেনের সঙ্গেও। উত্তম কুমার আমাকে ঢাকাতেও টেলিফোন করেছিলেন।
এদের বদলে এসেছেন প্রসেনজিৎ, তাপস পাল (সদ্য প্রয়াত), শতাব্দী রায়, দেবশ্রী, ইন্দ্রানী হালদার (ইন্দ্রানীর সঙ্গে সম্প্রতি টেলিফোনে আলাপ হয়েছে), শুভশ্রী, পাওলি দাম প্রমুখ। এই অভিনয়শিল্পীদের মধ্যেও যুগভেদ আছে। অর্থাৎ একদল একেবারেই নতুন। আমি সেই সময়ের ভেদটা আর দেখালাম না।
ঢাকার বাংলা ছবির কথা আমার ছিল অজানা। গোটা পাকিস্তান আমলেও তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের সিনেমা হলগুলো ছিল মুম্বাইয়ের হিন্দি ছবি এবং কলকাতার বাংলা ছবির ওপর নির্ভরশীল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী, তখন তিনি মুম্বাইয়ের হিন্দি এবং লাহোরের উর্দু ছবির হামলা থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য ঢাকায় সরকারি ফিল্ম স্টুডিও এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকায় শুরু হয় বাংলা ছবি তৈরির তোড়জোড়।
আমার সহপাঠী বন্ধু জহির রায়হান, আলমগীর কবির ছায়াছবি নির্মাণে যুক্ত থাকায় আমিও দু-একদিন তাদের সঙ্গে ঘোরাফিরা করেছি। এহতেশামের ছবির শুটিং দেখতে গেছি।
শবনম, শাবানা, কবরীর নায়িকা হিসেবে আবির্ভাব আমার চোখের সামনে। ববিতার সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ও। পরিচালক সুভাষ দত্তের সঙ্গে ছিল বন্ধুত্ব। তাকে আমি ঠাট্টা করে ডাকতাম দত্তজিৎ দত্ত। ব্যস, এই পর্যন্ত। ছায়াছবির জগতের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। ঢাকার বাংলা ছবির প্রতিও নয়।
জহির রায়হানের জীবন থেকে নেওয়া, বেহুলাসহ দু-তিনটি ছবি, আলমগীর কবিরের দু-একটি ছবি ছাড়া তখন বাংলা ছবি আর দেখিনি। নিউইয়র্কে বেড়াতে গিয়ে তারেক মাসুদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা জন্মেছিল। তার ছবি আমি দেখেছি। তার মৃত্যুতে আমরা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলের ছবি ‘চিত্রা নদীর পারে’, ‘নদীর নাম মধুমিতা’, ‘হুলিয়া’, ‘কর্ণফুলীর কান্না’ ছবি অনেক পরে দেখে আমার হুঁশ ভাঙে যে ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলা ছবির বয়ো-প্রাপ্তি ঘটেছে। ‘চিত্রা নদীর পারে’ ছবিটিতে আফসানা মিমির অভিনয় দেখে আমি বুঝতে পারি, ঢাকাকেন্দ্রিক ছায়াছবিতে শক্তিশালী অভিনয়শিল্পীদের আবির্ভাব ঘটতে চলেছে।
লন্ডনে বাস করি। তবু চিত্রা নদীর পারে ছবির সূত্র ধরে ‘ইত্তেফাকে’ আমার কলামে এই ছবিটি এবং আফসানা মিমির অভিনয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। মিমি এ জন্যে আমাকে ধন্যবাদ জানান। মিমি এখন আমাকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান জানান।
লন্ডনে বাস করতে গিয়ে আমি ঢাকা ও কলকাতার বাংলা ছবি তেমন দেখিনি। নতুন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীর সবার নামও আমার জানা ছিল না।
জার্মানিতে বেড়াতে গেছি। বন্ধুরা ধরে নিয়ে গেল বাঙালি কমিউনিটির এক সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে শুনি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ ছবিটি দেখানো হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি। ইউসুফ বাচ্চুর আগের ‘একাত্তরের যীশু’ ছবিটি আমি দেখেছি। তিনি শক্তিশালী পরিচালক। আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাই ‘গেরিলা’ দেখলাম।
দেখে বুঝতে পারলাম ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলা ছবি যে টেকনিক্যালি এত দিনে এতটা এগিয়েছে, ‘গেরিলা’ তার প্রমাণ। মুগ্ধ হয়েছি জয়া আহসানের অভিনয়ে। ছবিটা দেখার সময় মনে হয়েছিল আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা শহরে ফিরে গেছি। জয়া আহসান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নারী প্রতীক।
ছবিটা এবং জয়ার অভিনয় দেখে এতটাই অভিভূত হয়েছিলাম, ঢাকার একটি দৈনিকে আমার কলামে ছবিটা নিয়ে আলোচনা লিখেছিলাম এবং জয়ার অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলাম। জয়া লেখাটা পড়ে আমাকে ঢাকা থেকে টেলিফোন করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আপনি ঢাকায় এলে জানাবেন।
আপনাকে আমি বাসায় নিয়ে আসব।’ আমার তখন ঢাকায় যাওয়া হয়নি এবং যাওয়া হয়নি জয়া আহসানের বাসায়। এখন তো জয়া আহসানের প্রতিভা সীমান্ত পেরিয়েছে এবং সহজ-ধরাছোঁয়ার বাইরে।
করোনার এই বন্দিশালায় বসে দেশের আর্থসামাজিক অথবা রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা না করে ছায়াছবি নিয়ে আলোচনায় মাতলাম এ জন্যে যে, নাটক, ছায়াছবির দ্বারা একটি জনগোষ্ঠীর সচেতনতা যত দ্রুত ও সাফল্যজনকভাবে জাগিয়ে তোলা যায়, শিল্পের আর কোনো মাধ্যম দ্বারা তা পারা যায় না।
বাংলাদেশের অভিনয় শিল্প আজ উন্নত। শিল্পীরা পারেন হলোকাস্টের মতো ছবি করতে, যা ইহুদি জাতিকে জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
হাসপাতালে দু’মাস এবং এখন করোনার বন্দিশালায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দি হয়ে ল্যাপটপ-কোলে ঢাকার নাটক, টেলিফিল্ম দেখে দেখে মনে হয়েছে অভিনয়ের বিশ্বমানের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারেন নতুন প্রজন্মের এমন অভিনয়শিল্পীদের দেখা পেয়েছি।
তারা যদি সুযোগ দেখা দিলেই হলোকাস্ট বা নাইটগার্ডের মতো করোনা-পরবর্তী মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সাহস জোগানোর মতো ছবি করেন এবং তাতে অভিনয় করেন, তা হবে দেশ ও জাতির জন্য সবচেয়ে বড় অবদান।
গত বছর ডিসেম্বরে যখন ঢাকায় গেছি, তখন খ্যাতিমান দুই অভিনেতা ফেরদৌস ও রিয়াজ এবং অভিনেত্রী শমী কায়সার দেখা করতে এসেছিলেন। তার আগে লন্ডনে দেখা হয়েছে শাওনের সঙ্গে। আমারই আমন্ত্রণে আবুল হায়াত, বিপাশা এসেছিলেন ‘নতুন ঘর’ নাটকে অভিনয়ের জন্য।
বিপাশা তখন লাক্স বিউটি। বিলাতে এসে বাংলা ছবি বহুবছর না দেখলেও বাংলা নাটক ও ছায়াছবির অগ্রগতি সম্পর্কে একটা ধারণা মনে মনে পোষণ করেছি।
নাটক ও ছায়াছবির শক্তি কতটা প্রবল তার প্রমাণ কি দূর অতীতে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ দেয়নি? অবিভক্ত বাংলায় এই নাটক কৃষক বিদ্রোহ ঘটিয়ে ইংরেজ নীলকরদের বর্বরতার অবসান ঘটিয়েছিল।
হুমায়ূন আহমেদ আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। তবু তাকে আমি শ্রদ্ধা করি বাংলাদেশে পতনশীল ও পচনশীল চলচ্চিত্রকে তিনি রক্ষা করেছিলেন এবং শিক্ষিত ও ভদ্র দর্শকদের জন্য পরিচ্ছন্ন নাটক ও ছায়াছবি তৈরি করেছিলেন।
দুঃখ হয়, তার এই শক্তিশালী ট্রেন্ডটি অনেক আনাড়ি চিত্রনির্মাতা ও পরিচালকের দ্বারা এখন এবিউজড হচ্ছে। বাণিজ্যিক লোভ সমাজ-বাস্তবতা নিয়ে তৈরি ছবিগুলোকেও গ্রাস করছে।
গত বছর ইউটিউবে কিছু বাংলা নাটক ও ছবি দেখছিলাম। এর মধ্যে একজনের অভিনয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তার নাম নুসরাত ইমরোজ তিশা। তখন আমি শেখ হাসিনার ওপর একটি পুরো আড়াই ঘণ্টার ডকুমেন্টারি তৈরি করছি। আমাকে সাহায্য করেছেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও বিবি রাসেল। পরবর্তী পরিকল্পনা করেছি বাংলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি ফিল্ম তৈরি করার।
যদিও তা এই অসুস্থ শরীরে পারব কিনা জানি না। কিন্তু তখন তিশার অভিনয় দেখে তাকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে গেলাম।
এ ব্যাপারে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা নিরুৎসাহিত করলেন। বললেন, ‘ওরা বিএনপিপন্থী। রাজি হবে না।’ আমি বললাম, ‘শিল্পীরা যেকোনো পন্থী হতে পারেন। কিন্তু শিল্পী হিসেবে কোনো পন্থী নন।
আমি মনে করি তিশা শক্তিশালী অভিনেত্রী। তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি হবেন।’ তিশার ঢাকার টেলিফোন নম্বর জোগাড় করে রিসিভার তুললাম। আমার ধারণা, ইনগ্রিড বার্গম্যান বেঁচে থাকতে তার মতো বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী আমার টেলিফোন ধরেছেন। সাক্ষাৎ দিয়েছেন। আর তিশা তো আমার নাতনির বয়সী অভিনেত্রী।
তিশা আমার টেলিফোন ধরলেন বটে, কিন্তু আড়ষ্ট কণ্ঠ। বিরক্তি প্রকাশ করলেন না। বললেন, ঢাকায় এলে কথা হবে। দ্বিতীয়বার ফোন করেছি, বললেন, শুটিংয়ে ব্যস্ত আছি। মনে হল, আমি কী জন্যে তাকে ফোন করছি, সৌজন্যের খাতিরেও তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেননি।
আমিও বলার সুযোগ পাইনি। অথচ এ সৌজন্য আমি লাভ করেছি কলকাতার অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদারের কাছ থেকে। তিনি আমাকে একেবারেই চেনেন না। দু’দুবার টেলিফোনে আলাপ করেছেন, আমি এর কারণ সম্পর্কে ঢাকার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাস করেছিলাম।
তিনি বললেন, ঢাকার মধ্যবিত্তদের কালচার মাত্র দু’জেনারেশনের। কলকাতার মধ্যবিত্তের কালচার পাঁচ জেনারেশনের।
দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকার পর বাসায় এসে তিশাকে আবার টেলিফোন করেছিলাম। তিনি প্রথমে আমাকে চিনতেই পারলেন না।
পরে বললেন, চিনেছি। কথা বাড়াতে চাননি। বললেন, আপনি ঢাকায় এলে কথা হবে। বলেই রিসিভার রেখে দিলেন। তিশা আমাকে অসৌজন্য দেখাননি। আবার সৌজন্যও দেখাননি, যে সৌজন্য পেয়েছি, শর্মিলা ঠাকুর, শাবানা অজেমি, ইন্দ্রানী হালদারের কাছ থেকে।
নুসরাত ইমরোজ তিশার বিরুদ্ধে আমার এটা কোনো অভিযোগ নয়। প্রসঙ্গক্রমে বলা, বয়স হয়েছে। সেজন্যে মনে কোনো আঘাতও পাইনি। দু’দিন আগেও ল্যাপটপে ছবি দেখব বলে নব ঘোরাতে ঘোরাতে একটা নাটক অথবা টেলিফিল্ম পেলাম ‘ভালোবাসার গল্প শুরু হলো’। তিশা নায়িকা, সত্য কথা বলতে কি তার অভিনয় দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। ছবির গল্প একেবারেই জোলো। সেই বস্তাপচা কাহিনী। মেয়ে প্রেমে পড়েছে। পরিবার তার বিরুদ্ধে। তারপর নানা সংঘাতের মধ্যে নায়ক-নায়িকার মিলন।
শুধু তিশার অভিনয়ের জন্য এ ছবিটা দেখেছি। নইলে ছবির কাহিনী এবং নায়কের ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের নামে ছটফটানির জন্য ছবি দেখা বন্ধ করতাম। কিন্তু তিশার দারুণ অভিনয়, চরিত্রটি পরিস্ফুটনের জন্য সময়মতো মুখের অভিব্যক্তি ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ইনগ্রিড বার্গম্যানের অভিনয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
কলকতায় তার জুড়ি মনে করি রচনা ব্যানার্জিকে। কোনো কারণে তিশাকে যদি না পাই তাহলে আমার ছবিতে রচনা ব্যানার্জিকেই বেছে নেব ভাবছি। অবশ্য তিনি যদি রাজি হন।
করোনার এই হামলা থেকে যদি বাঁচি, তাহলে আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর ওপর আমার ছবিটি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, সরকার বঙ্গবন্ধুর ওপরে পূর্ণদৈর্ঘ্যরে ছবি করছে। আমারটা হবে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ছবি এবং বাংলায়। এবার যেন স্বপ্ন সফল করতে পারি এজন্য আমার কলামের পাঠকদের কাছে শুভ কামনা চাই।
লন্ডন, ৩ মে, রবিবার, ২০২০
