উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি : আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও সক্ষমতা
মুনতাকিম আশরাফ
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সর্বশেষ বৈঠকে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে বের করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল করার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
সিডিপির এলডিসিসংক্রান্ত্র উপগ্রুপের প্রধান টেফেরি টেসফাসো এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। এ চূড়ান্ত সুপারিশের ফলে ২০২৬ সালে এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করলেন।
১৯৭১ সালে বিশ্বে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। জাতিসংঘের মান অনুসারে সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ তুলনামূলক দুর্বল, সেসব দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ১৯৭৫ সালে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী পাঁচ বছর পর ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিপিডি) এবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওসও এলডিসি থেকে বের হওয়ার সুপারিশ পেয়েছে। সিডিপির পরপর দুবারের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে নির্দিষ্ট মান অর্জন করলে এ ধরনের সুপারিশ করা হয়। ২০২১ সালের সিডিপির এ মূল্যায়নে বাংলাদেশের পাশাপাশি লাওস ও মিয়ানমার নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে।
স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে কোন কোন দেশ বের হবে, তা যাচাই করতে প্রতি তিন বছর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করে সিপিডি। এলডিসিগুলোর মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এ তিনটিকে সূচক ধরে এ সূচকগুলোর কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের মাধ্যমে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কিনা, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করে তারা। কোনো স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হতে গেলে যে কোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় অথবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। সূচক তিনটির মান হলো মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ১২৩০ মার্কিন ডলার, মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা এর নিচে। উন্নয়নশীল দেশ হতে গেলে কোনো দেশের মাথাপিছু আয় অবশ্যই ১২৩০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি হতে হবে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। জাতিসংঘের সাধারণ মানের চেয়ে যা অনেক বেশি; মানদণ্ডের প্রায় ১.৭ গুণ।। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; যেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৪। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার তিন নম্বর সূচক অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়। মান কমে পয়েন্ট ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। এখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২। দেখা যাচ্ছে, তিনটি সূচকেই কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বিশ্বে ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে। এ পর্যন্ত মালদ্বীপ, বতসোয়ানা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, সামোয়া ও কেইপ ভার্দেই এ পাঁচ দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও এবার সেই দ্বার চূড়ান্তভাবে উন্মুক্ত হলো। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত প্রথমবারের মতো পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিপিডির বিগত সভায় সেই চূড়ান্ত সুপারিশই লাভ করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এ এক বিরাট সুখবর। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতির সময় ভোগ করতে পারে। করোনাভাইরাসের মহামারির বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়। বাংলাদেশের এ আবেদনে সাড়া দিয়েছে সিপিডি। এবার পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসাবে জায়গা করে নেবে। বাংলাদেশের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ। সফলতার সঙ্গে এ ধাপে পা রাখতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় জায়গা করে নেওয়ায় বিভিন্নমুখী সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে বাংলাদেশের সামনে। একই সঙ্গে বেশকিছু নতুন চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। এসব চ্যালেঞ্জ যথাযথভাবে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছি আমরা, তা বাস্তবে রূপ নেওয়া কঠিন কোনো কাজ হবে না। প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করায় বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সক্ষমতার পরিচয় ফুটে উঠল বিশ্ব দরবারে। ছোট অর্থনীতির দেশ হিসাবে এতকাল যে সাধারণ ইমেজ ছিল বাংলাদেশের, সেখান থেকে বেরিয়ে এখন সক্ষম ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ হিসাবে পরিচিত হবে দেশ। এতে করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট হবে। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঋণ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আরও বেশি মনোযোগী হবে। কারণ দেশের সক্ষমতা বাড়ায় ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে তাদের মনে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। এতে বাংলাদেশের ঋণপ্রাপ্তির সম্ভাবনা ও সুযোগ বিস্তৃত হবে। পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক ঋণের সহজলভ্যতা দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনবে। নতুন নতুন বিনিয়োগের দুয়ার উন্মুক্ত হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট হবে। দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবাসহ সব খাতের অগ্রগতির সম্ভাবনা বিস্তৃত হবে।
এসব সম্ভাবনার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দেশের অর্থনীতিকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, দেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যেসব সহযোগিতা ও ডোনেশন পাচ্ছে, তা কমে যাচ্ছে অনেকাংশেই। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি স্বল্পোন্নত দেশকে যেসব সাহায্য-সহযোগিতা করে, উন্নয়নশীল দেশকে তা করবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি), ডিউটি ফ্রি কোটা ফ্রি (ডিএফকিউএফ)সহ যে ধরনের ট্রেড ফ্যাসিলিটি পাচ্ছে, তার সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে যে পাঁচ বছর প্রস্তুতিমূলক সময় পেয়েছে বাংলাদেশ, এ সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে সঠিকভাবে। রপ্তানি বাজারে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) এলডিসি স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্টের (এসঅ্যান্ডডিটি) আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকে। এ ধরনের একটি চুক্তি হলো বাণিজ্যবিষয়ক মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস), যা এলডিসিগুলোর জন্য ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। এ ছাড়ের কারণে বিদেশি পেটেন্ট পাওয়া পণ্যসামগ্রী, বিশেষ করে বইপুস্তক আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধা পাচ্ছে। ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যাবে ২০৩২ সালের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেলে এসব সুবিধা আর বাংলাদেশ পাবে না। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রায় ১০০-র অধিক দেশে ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রপ্তানি করে থাকে। তখন এ রপ্তানি কঠিন হয়ে যাবে। কারণ অধিকাংশ ওষুধের পেটেন্ট বিদেশিদের। আমাদের তখন তাদের পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন করতে হলে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য প্রস্তুতির সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতিকালীন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধাভোগ করতে পারবে। কাজেই চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা পেরোনো অসম্ভব কিছু হবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব বাধা পেরিয়েই উন্নত দেশ হওয়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী পাঁচ বছর সময়টা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের প্রস্তুতির এ সময়টা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে যেসব সুবিধা বাংলাদেশ হারাবে, তা ওভারকাম করা কঠিন হবে না। এজন্য অর্থনীতির বৈচিত্র্যময়তা ও সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, দক্ষতার উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ, দক্ষ শ্রমশক্তির জোগান নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরও বিস্তৃত করতে হবে। প্রস্তুতির সময়টায় বাংলাদেশের জন্য ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা লাভের সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসারে শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, পরিবেশগত সুরক্ষা, সুশাসনের মতো বিষয়গুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা হারাবে এ সময় বাংলাদেশ, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যময়তা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি ও অংশীদারি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের রপ্তানিকে গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, তা মোকাবিলা করতে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক ঋণের উৎস খুঁজতে হবে। কারণ এ সময় বাংলাদেশ এখনকার মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না। বেশি সুদে স্বল্প সময়ে পরিশোধযোগ্য ঋণের দিকে যেতে হবে বাংলাদেশকে। এ কারণে বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আরও বেশি সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে, যাতে গ্র্যাজুয়েশন পিরিয়ড পার হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত গুটিয়ে না নেয় এবং যতদিন পর্যন্ত না বাংলাদেশ যথাযথভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত চলমান বাণিজ্য সুবিধাগুলো চালু রাখে।
বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, কোনো প্রতিবন্ধকতাই দেশের অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশের সামগ্রিক চিত্রই বদলে গেছে। অর্থনীতির সব সেক্টরে বিরাজ করছে ব্যাপক সম্ভাবনার জোয়ার। বার্ষিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে যে গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশের অর্থনীতি, তাতে ছোটখাটো কিছু প্রতিবন্ধকতা এলেও সেগুলো অতিক্রম করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন কিছু হবে না। আশা করা যায়, উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে দেশে, এ যাত্রায় সব বাধা পেরিয়েই ২০৩১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে বাংলাদেশ।
মুনতাকিম আশরাফ : সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই
