শতফুল ফুটতে দাও
জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম : অপ্রস্তুত যাত্রা
ড. মাহবুব উল্লাহ্
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের প্রথা ছিল না। তবে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বিভিন্ন সময়ে জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার কথাবার্তা হচ্ছিল। কিন্তু এরকম একটি কাজ কত কঠিন হতে পারে এবং কত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে তা ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পাসপোর্ট তৈরি, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার তালিকা তৈরি, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স, গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতি, করদাতা শনাক্তকরণের নম্বর, ঠিকাদারি বা চুক্তির লাইসেন্স, ভবন নকশার অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং মোটরযানের নিবন্ধন পেতে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক।
এই ১৮টি সেবা কার্যত আমাদের জীবনকে মহা কঠিন করে তুলেছে। বস্তুত এই ১৮টি সেবার মধ্যে কমপক্ষে একটি সেবার প্রয়োজনীয়তা এদেশের মানুষ জীবনযাপনের জন্য অনুভব করবে। জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে এদেশের নাগরিকদের বড় একটি অংশ রুজি-রোজগারের পথে অগ্রসর হতে পারবে না।
জন্ম নিবন্ধন ছাড়া দেশটা তো চলছিল। শুধু তাই নয়, দেশটি অনুন্নত অবস্থা থেকে নিু মধ্যম আয়ের স্তরে প্রবেশ করেছে। জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার জন্য উন্নতমানের প্রশাসনিক অবকাঠামো প্রয়োজন। আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, অতি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না তুলে নাগরিকদের কাছ থেকে উল্লেখিত ১৮টি সেবা পাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ চাওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানারকম কাজকর্মে নিয়োজিত আছেন। তারা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠান। এ রেমিট্যান্সের অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে সহায়তা করছে। এসব মানুষ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। এমনিতেই নতুন পাসপোর্ট পেতে গিয়ে অথবা পুরাতন পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে পাসপোর্ট প্রার্থীকে নানা ধরনের ঝুট-ঝামেলায় পড়তে হয়।
যদি সেবাদানই প্রধান লক্ষ্য হতো, তাহলে সেবাপ্রার্থীকে নাকানি-চুবানি খেতে হতো না। এখন পাসপোর্ট পেতে অতিরিক্ত শর্ত হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সনদ। সমস্যা হলো, জন্ম নিবন্ধন সনদ পেরেশানিতে না পড়ে কিভাবে পাওয়া সম্ভব? এদেশের অনেক মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বসবাসের জন্য গমন করে। অনেক শহরবাসী আছে যারা গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে। অথচ এদের অনেকে গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছে। এদের জন্মগ্রহণের তথ্য কে প্রত্যয়ন করবে? এতদিন শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের এসএসসি কিংবা মেট্রিকুলেশন সার্টিফিকেটে যে জন্ম তারিখ দেওয়া থাকত, সেটাই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের নিবন্ধনের জন্য যে জন্ম তারিখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রত্যয়ন করতেন, সেটাই বোর্ডের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। শিক্ষকরা ছাত্রদের জন্য মনগড়া একটি জন্ম তারিখ নির্ধারণ করে দিতেন।
এ জন্ম তারিখ চাকরিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত বয়স প্রধান শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত বয়সের চেয়ে বেশি থাকত। নৈতিকতার দিক থেকে এ প্রথা গ্রহণযোগ্য নয়। তবুও এভাবেই চলছিল ব্রিটিশ শাসনামল থেকে জন্ম তারিখ নির্ধারণের এ প্রথা। বয়স কমিয়ে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসাবে বলা হতো, এ ব্যবস্থার ফলে প্রকৃত বয়স চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়সে উপনীত হলেও অতিরিক্ত দু-এক বছর চাকরি করা সম্ভব হতো সার্টিফিকেটে উল্লেখিত বয়সের কারণে। এখন বলা হচ্ছে, এসএসসি সার্টিফিকেট বয়স জানার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সবাই ছুটছেন জন্ম নিবন্ধন সনদ জোগাড়ের জন্য।
এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের মধ্যে চালু করার প্রয়াস জাতীয় অর্থনীতির গতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। সনদ দেওয়ার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হবে, তাদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে একটি দালাল শ্রেণি। বাংলাদেশে দালালের অভাব নেই। স্কুলে ভর্তি হতে, রেলের টিকিট পেতে, জমির দলিল করতে, হাসপাতালে রোগীর ভর্তি ও চিকিৎসা করাতে, জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে, পাসপোর্ট করতে, মোটরযানের এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে, জেলে একটু আরামদায়কভাবে দণ্ড ভোগ করতে, আইনশৃঙ্খলা জাতীয় সমস্যায় এবং আরও বহুবিধ কর্মকাণ্ডে দালালের দৌরাত্ম্য নাগরিকদের হজম করতে হয়। এখন এর সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হলো জন্ম সনদপত্র লাভের বিষয়টি।
যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় জন্ম সনদপত্র মোটামুটি নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব হয়, তার জন্য প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হবে। ইউরোপে জন্ম সনদপত্রের ব্যবস্থা শত শত বছর ধরে কার্যকর আছে। ইউরোপীয়রা প্রধানত খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী। এ ধর্মে এক সময় চার্চ বা গির্জার প্রভূত কর্তৃত্ব ছিল। খ্রিষ্টধর্মের নিয়ম অনুযায়ী নবজাতকের নামকরণের জন্য Christening অনুষ্ঠান করা হয়। এ অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য শিশুর জন্ম থেকে যথাসম্ভব কাছাকাছি সময় বেছে নেওয়া হতো। ফলে দালিলিকভাবেও জন্ম তারিখটি সঠিক হতো। ইউরোপের জীবনযাত্রায় একটি সময় পর্যন্ত খ্রিষ্টান পাদ্রীদের বিরাট ভূমিকা ছিল।
বস্তুত ইউরোপীয়দের দৈনন্দিন জীবনে চার্চের বিশাল প্রভাব ছিল। এ প্রভাব অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে চার্চ মানুষের ওপর অনেক অন্যায়-অত্যাচার করত। চার্চের এ প্রভাব অসহনীয় হয়ে ওঠার ফলে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়। খ্রিষ্টানরা ২টি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ দুটি ধারা হলো ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট। চার্চের প্রভাব শিথিল করার জন্য রাষ্ট্রকে চার্চ থেকে পৃথক করা হলো। এ ব্যবস্থাই সেক্যুলারিজম নামে পরিচিত হলো।
চার্চ অন্যায়-অত্যাচার করলেও কিছু সমাজ হিতকর কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করত। চার্চ তার নির্ধারিত এলাকার মধ্যে বসবাসরত বাসিন্দাদের জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ, রোগ-শোক এবং সামাজিক বিরোধের সঠিক রেকর্ড বজায় রাখার প্রয়াস পেত। এ কারণে ইউরোপীয় সমাজে জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থাটি একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন পেয়েছিল। চার্চ এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে এর অনুসারীরা কদাচই তথ্য বিকৃতির আশ্রয় নিত। এভাবে যুগ যুগ ধরে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি চার্চের দলিলে লিখিত থাকার ফলে ইউরোপের জনইতিহাস রচনা তুলনামূলকভাবে সহজসাধ্য হয়। ইউরোপীয় রাষ্ট্রাচারে এখনো চার্চের নৈতিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। অধিকাংশ ইউরোপীয় রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকায় যিশুখ্রিষ্টের ক্রুশের প্রতীক নানা ঢংয়ে অঙ্কিত হয়।
এখনো খ্রিষ্টান সমাজের ওপর পোপের নৈতিক প্রভাব বেশ শক্তিশালী। ভ্যাটিকান সিটির ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্রটিকে পরাশক্তিগুলোও সমীহ করে। জন্ম সনদের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ইউরোপের ইতিহাসের দৃষ্টান্ত আমাদের বুঝতে সাহায্য করে এ কাজটি কয়েক শতাব্দীর অভিজ্ঞতার ফসল। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে না, যার নজির টেনে আমরা জন্ম নিবন্ধন সনদের মতো একটি প্রয়োজনীয় কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারি। যারা ইতিহাস গবেষণায় নিয়োজিত তাদের অনেকে হয়তো ফরাসি ইতিহাসবিদ লীলয় লাদুরির ‘মন্তাইলু’ নামক গ্রন্থটি পাঠ করেছেন। ‘মন্তাইলু’ ফ্রান্সের একটি গ্রামের নাম। লাদুরি এ গ্রামের চার্চের পুরোনো দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সূচনাকালে মন্তাইলুর সমাজ ও জীবন কেমন ছিল তার আক্ষরিক ছবি এঁকেছেন।
১৬ নভেম্বর একটি দৈনিক জন্ম নিবন্ধন সনদের ওপর রিপোর্ট করতে গিয়ে শিরোনাম করেছে, ‘জন্মের ভোগান্তি জন্ম নিবন্ধনে’। এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ সরাসরি উদ্ধৃত করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। সুনামগঞ্জ শহরের জামতলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বাবুল মিয়া। ছোট দুই ছেলের জন্য জন্ম নিবন্ধন করাতে মাস দেড়েক আগে সুনামগঞ্জে পৌরসভায় যান তিনি। পৌর কর্মকর্তারা জানান, সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে হলে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই থাকতে হবে। এরপর বাবুল মিয়া সুনামগঞ্জ পৌরসভায় নিজের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। ১১ অক্টোবর ফি জমা দেন তিনি। অন্তত পাঁচদিন পৌরসভার সংশ্লিষ্ট শাখায় যান।
কিন্তু জন্ম নিবন্ধন পাননি। বাবুল মিয়ার মতো সারা দেশেই সাধারণ মানুষ জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার শর্তে জটিলতা রয়েছে। রয়েছে সনদ প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা। সরকারি ফির বাইরেও নেওয়া হচ্ছে অর্থ। পাসপোর্ট তৈরি, বিয়ে ও জমি রেজিস্ট্রেশন, শিশুদের করোনার টিকা এবং স্কুলে ভর্তিসহ ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু ‘বাধ্যতামূলক’ ও জরুরি এ সনদ পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
এমন একটি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রয়েছে জনবল সংকট। অদক্ষ জনবল, দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেটের ধীরগতি, কেন্দ্রীয় সার্ভারে ত্রুটি, সেবাদানকারীর দুর্ব্যবহার, তথ্য প্রদানে অনীহা এবং নাগরিকদের সচেতনতার অভাবে সারা দেশের জন্ম ‘নিবন্ধন সনদ’ কার্যক্রম অসহনীয় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে আধা আন্তরিকতা দিয়ে। অভিজ্ঞতা না থাকায় এ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
কার্যক্রমটির সূচনাপর্বে অতিরিক্ত শর্ত জুড়ে দেওয়ার ফলে এটির বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ কার্যক্রম শুরু করতে গিয়ে বেশি শর্ত যুক্ত করার ফলে কার্যক্রমটি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। কারণ নানা ভোগান্তির ফলে এর প্রতি জনগণের বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং কাজটি শুরু করতে হবে সু-সহনীয়ভাবে। ধীরে ধীরে জনগণ এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন তথ্য যোগ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে এ ধরনের কার্যক্রমের শুদ্ধতা নিশ্চিতকরণের জন্য বেশি করে শর্ত আরোপ করার ফলে কার্যক্রমটি ভণ্ডুল হতে চলেছে।
একেবারে শুরু থেকেই কঠিন শর্ত আরোপের ফলে দুর্নীতি এবং খাজনা আদায়ের মওকা দেখা দিয়েছে। এ ধরনের কাজকে যখন কঠিন করে তোলা হয় তখন দুর্ভোগ বাড়ে জনগণের। আর ফোকটে কিছু আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নেয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। শোনা যায়, জন্ম নিবন্ধন সনদ ঝামেলামুক্তভাবে পাওয়ার একটি রেট ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে টাকা বানানোর হরেক রকম মেশিন চালু হয়ে গেছে। এক সময় বলা হতো ঢাকার বাতাসে টাকা ওড়ে। যে কেউ ইচ্ছে করলে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করে এ টাকা নিজ পকেটে ভরতে পারে।
এজন্য অনেকের ধারণা হয়ে গেছে ঢাকায় আসতে পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টাকা হাতের মুঠোয় এসে যাবে। জন্ম নিবন্ধন সনদ কার্যক্রম দেশের সর্বত্র শুরু হয়ে গেছে। কার্যক্রমটির অগ্রগতি যতটুকুই হোক না কেন, দালাল সিন্ডিকেট অনেক টাকা হাতিয়ে নেবে। সনদের জন্য সরকারিভাবে নির্ধারিত ফি’র পরিমাণ খুবই সামান্য। এ অবস্থায় দালাল সিন্ডিকেট বা রেন্ট সিকাররা কৌশলে জনগণের জন্য যে অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত, সেটার ওপর ভিত্তি করেই টাকা আদায়ের খেলায় মত্ত হয়ে পড়েছে। দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে আলোচ্য প্রতিবেদনটি থেকে। বরিশালের কাহিনি তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, চরম ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) জন্ম নিবন্ধন শাখার বিরুদ্ধে।
ভোগান্তির কারণে অনেকেই জন্মসনদ নিতে যাচ্ছেন না। সনদ পেতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি শর্ত। এসব শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অনেকেরই হাঁসফাঁস অবস্থা। যাদের জন্ম ২০০১ সালের পর তাদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।
বিসিসির জন্ম নিবন্ধন শাখার চারটি কম্পিউটারের মধ্যে দুটি প্রায় সময়ই বিকল থাকে। এতে কাজের গতি কমে যায়। আটকা পড়ে হাজারও আবেদন। দুই সপ্তাহ আগে ফরম জমা দিয়েও সনদ হাতে না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে।
স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে আসা সালমা বেগম নামের এক নারী জানান, স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই জন্ম নিবন্ধন আছে। তবে একজনের ইংরেজিতে, আরেকজনেরটা বাংলায়। এ কারণে তারা আবেদনই করতে পারছেন না। সন্তানেরটাও হচ্ছে না।
সিটি করপোরেশনের জন্ম নিবন্ধনের আবেদনপত্র জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মী ইরানী বেগম বলেন, ‘মা-বাবার নিবন্ধন বাংলায় হলে সন্তানও বাংলায় জন্ম নিবন্ধন সনদ পাবে। আর মা-বাবার সনদ ইংরেজিতে হলে সন্তানেরটাও ইংরেজিতে হবে। আর মা-বাবারটা আলাদা হলে তারা আবেদনই করতে পারবেন না। দুজনেরটা এক ভাষায় করে নিতে হবে। এ ধরনের সমস্যা অনেক হচ্ছে।’ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমরা অনেক কাজ শুরু করি, কিন্তু শেষ করি না। রবীন্দ্রনাথের এ কথাগুলো প্রমাণ করার জন্যই কি ‘জন্ম নিবন্ধন সনদ’ কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ
