নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি
পরের ধনে পোদ্দারি!
ড. আর এম দেবনাথ
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘উপরওয়ালা পাহাড়কে দরিয়া করে, দরিয়াকে পাহাড় করে, ফকিরকে বাদশাহ করে, বাদশাহকে ফকির করে।’ মুখে মুখে এ কথা চালু। এর আসল অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে, সবার দিন সব সময় সমান যায় না। মুশকিল হচ্ছে, এ কথা জেনেও আমরা সব সময় তা মনে রাখি না। এটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি সত্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও। এ মুহূর্তে খুবই সত্য কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে।
একটি কাগজে দেখলাম কোনো কোনো ব্যাংক এখন তারল্যের (লিকুইডিটি) ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যে নেই। অর্থাৎ তাদের তারল্যে অস্বস্তি দেখা দিচ্ছে। তাদের হাতে যে পরিমাণ ‘ক্যাশ’ বা ক্যাশের সমকক্ষ অর্থ থাকার কথা, তা নেই। আমরা জানি, ‘তারল্য’ যথাযথ পরিমাণ থাকা দরকার ব্যাংকের।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধান রয়েছে। এটা অবশ্য পালনীয়। নইলে দণ্ড গুনতে হয়। এজন্যই ব্যাংকের ক্ষেত্রে ক্যাশ, তারল্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে, অনেক ব্যাংকে এতদিন ছিল প্রচুর ক্যাশ, প্রচুর তারল্য। এর অর্থ, তারল্যে ছিল তাদের স্বাচ্ছন্দ্য।
খবরে প্রকাশ, এ মুহূর্তে বেশকিছু ব্যাংক তারল্য স্বাচ্ছন্দ্যে নেই। বোঝা যায়, এক সময় ওইসব ব্যাংকে প্রচুর আমানত আসছিল। মানুষ টাকা রাখার জায়গা না পেয়ে ব্যাংকে আমানত (ডিপোজিট) রাখার জন্য আসছিল। টাকায় টাকায় ব্যাংকগুলো সয়লাব। সমস্যা আরও প্রকট হয়, কারণ ব্যাংকগুলো টাকা বিনিয়োগের কোনো জায়গা পাচ্ছিল না। তাই অনেক ব্যাংক জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণে অস্বীকৃত জানায়।
যারা নেয়, তারা সুদ দিতে রাজি নয়। সুদের হার করে ২-৩ শতাংশ, যেখানে তা হওয়ার কথা কমপক্ষে ৬ শতাংশ। কোনো কোনো ব্যাংক প্রতারণা শুরু করে গ্রাহকদের সঙ্গে। তারা ১২ মাসের স্থলে ১৩ মাসে বছর গণনা শুরু করে। অর্থাৎ ব্যাংকে আমানত থাকবে ১৩ মাস, অথচ ব্যাংক সুদ দেবে ১২ মাসের। এর শেষ নেই। নানা রকমের সার্ভিস চার্জ করা শুরু করে। এসব ব্যাংকের সুদিনের কথা।
সুদিনে তারা আমানতকারীদের ব্যাংকমুখো হতে দেয়নি। অথচ তারা জানত না যে, আমানতকারীরা ব্যাংকের জন্য ‘লক্ষ্মী’, আমানত ছাড়া ব্যাংক হয় না। এক সময় হতো। সে অনেক দিন আগের কথা। তখন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা নিজেদের টাকা পুঁজি হিসাবে খাটিয়ে ব্যাংকিং করত, মানুষকে টাকা ধার দিত। তারা কারও কাছ থেকে আমানত বা ডিপোজিট নিত না। এখন তা হয় না।
এখন জনসাধারণের কাছ থেকে ‘ডিপোজিট’ নিয়ে ব্যাংকিং করতে হয়। পরের ধনে পোদ্দারি। এ অবস্থায় আমানতকে ‘লক্ষ্মী’ বলা যায়, কাস্টমার যেমন ‘লক্ষ্মী’। এ ‘লক্ষ্মী’ আমানতকারীদের কোনো কোনো ব্যাংক বিনা ভদ্রতায় বিদায় করতে থাকে। তাদের টাকার দরকার নেই। তাদের সুদিন। কাউকে তারা চেনে না।
কিন্তু আজ? এখনকার খবর থেকে বোঝা যায়, অনেক ব্যাংকের সুদিন শেষ। যারা আমানতকারীদের ঠকিয়েছে কোনো সুদ না দিয়ে, যারা আমানতকারীদের ফিরিয়ে দিয়েছে, তাদের এখন ওই সুদিন নেই। তাদের এখন কলমানি মার্কেট (আন্তঃব্যাংক লেনদেন) থেকে উচ্চ সুদে ঋণ (আমানত) নিতে হচ্ছে। খবরে প্রকাশ, কেউ কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ‘রেপোর’ মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে। কেউ কেউ নিচ্ছে ‘অ্যাশির্উড লিকুইডিটি সাপোর্ট’ (এএলএস)।
এই যে স্বাচ্ছন্দ্য থেকে সংকট- তা কয়দিনের মধ্যে? খুব বেশিদিনের কথা নয়। তখন আমানতকারীদের বাঁচিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলো কাউকে ফেরায়নি। মোটামুটি পরিমাণের সুদ দিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে আমানত নিয়েছে। অথচ তাদের কত বদনাম। তারা অদক্ষ, তারা অনিয়মের ডিপো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মানুষের আস্থা তাদের ওপরই। তাদের এখন তারল্য উদ্বৃত্ত। খুব বেশি পরিমাণের উদ্বৃত্ত।
বলা যায়, তারা তারল্যের ওপর ভাসছে। তবু তারা কাউকে বিদায় করছে না। তারা আমানত গ্রহণ করে বাজারকে বাঁচিয়ে রাখছে। ‘অভাবী’ ব্যাংকগুলোকে তারা এখন ‘কলমানি মার্কেটের’ মাধ্যমে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। এক অর্থে তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ধার দিয়ে তারাই বাঁচিয়ে রেখেছে। এই যে ‘সুদিনে বিদায় করা’, ‘দুর্দিনে মানুষের কাছে হাত পাতা’- এটা কি নীতি হিসাবে অনুকরণীয়? যারা বিবেচক ব্যক্তি, তারা কখনো তা করবেন না। কারণ কারও দিন সব সময় সমান যায় না। আজ ধনী, কাল পথের ফকির। আজ প্রচুর সম্পদের মালিক, কাল দেউলিয়া।
তাই কী ব্যাংক, কী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সবাইকে সাবধানী নীতি অনুসরণ করতে হয়। অতিরিক্ত প্রাচুর্যও নয়, অতিরিক্ত অভাব-অনটনও নয়। সামঞ্জস্য রেখে চলা। সুদিনে-দুর্দিনের কথা মনে রাখা একান্তই কর্তব্য। দুদিনের জন্য সংরক্ষণ রাখা (রিজার্ভ) ব্যবসায়ীদের একটা রীতি, যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়। যাতে হাত পাততে না হয়। সুদিনে চোখ-কান খোলা রেখে চলা। গ্রাহকদের সঙ্গে সুদিনে-দুর্দিনে সমান আচরণ করা দরকার। দেখা যায়, এ কাজটি অনেক ব্যক্তি যেমন করেন না, করেন না অনেক ব্যবসায়ী ও ব্যাংকও। অথচ ব্যাংকারদের এটা করা উচিত নয়।
পরের ধনে পোদ্দারি করতে হলে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা দরকার। স্থিতিশীলতা ব্যাংকের জন্য অতীব জরুরি। কিন্তু দেখা যায় অনেক বেপরোয়া ব্যাংকার এ নীতি মানতে চায় না। তারা ‘যখন যেমন তখন তেমন’ নীতি অনুসরণে বেশি আগ্রহী। রিকশাওয়ালারা অফিসের সময় এক ভাড়া আদায় করে, স্কুলের সময় আরেক ভাড়া আদায় করে। অফিস ছুটির সময়, বৃষ্টি-ঝড়-রোদের সময় তারা ভিন্ন ভাড়া আদায় করে। তারা থাকে সুযোগের সন্ধানে। তাদের অবস্থা কি এতে খুব ভালো থাকে? ব্যাংকের বাজার দেখে মনে হয় কোনো কোনো ব্যাংকও ‘যখন যেমন তখন তেমন’ নীতি অনুসরণ করতে বেশি আগ্রহী।
এতে অনেক ব্যাংকই বিপদে পড়ে। গ্রাহক সংকটে পড়ে, আমানতের সংকটে পড়ে। সরকার না বাঁচালে তাদের বাঁচার কোনো পথ থাকে না। শুধু ব্যাংক নয়, অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও আজ এ ধরনের সমস্যায় পতিত। সুদিনে তারা ধরাকে সরা হিসাবে বিবেচনা করেছে, দুর্দিনের কথা মনেই রাখেনি। ভবিষ্যতের কোনো প্রস্তুতিই রাখেনি। ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করেনি। প্রযুক্তির পথে হাঁটেনি। উত্তরাধিকার তৈরি করেনি। সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি। যথেচ্ছভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। ঋণের টাকা ফেরত দিতে হবে এ কথা ভাবেইনি।
আবার ব্যাংকাররা, ব্যাংকের মালিকরা আপাত সফল ব্যবসায়ীকে হরেদরে ‘লোন’ দিয়েছে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য। গুণমানের চেয়ে তারা গুরুত্ব দিয়েছে পারিবারিক ব্যবসাকে। এখন এ নীতির ফলাফল কী? পুরোনো মালিকরা কেউ কেউ মারা গেছেন- তাদের ব্যবসার অবস্থা কী? কেউ কেউ অসুস্থ, তাদের ব্যবসার অবস্থা কী? কারও ছেলেমেয়ে বিদেশে পাকাপাকিভাবে বসবাস করছে- তাদের ব্যবসার অবস্থা কী?
১০টা, ২০টা, ৩০টা, ৪০টা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা ক্লেশে উদারভাবে পারিবারিক পরিচয়ে ঋণ নিয়ে যারা ২০টা, ৩০টা, ৪০টা প্রতিষ্ঠান খুলে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, তাদের অবস্থা কী? অনেক প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর নেই। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর এখন মাঝে মাঝে খবরে পাওয়া যাচ্ছে। এর কোনোটাই ভালো খবর নয়। বিষয়টা বোঝার জন্য দুয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুরু করি চট্টগ্রাম দিয়ে। পরে আসব ঢাকায়। চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্য কেন্দ্র। ব্যবসার স্থল। আমদানি-রপ্তানির জায়গা। বড় বড় ব্যবসায়ীদের শহর চট্টগ্রাম। অনেক বড় ব্যবসায়ীর শুরু চট্টগ্রামে। এক সময় সেখানে সব সফল ব্যবসায়ীর খবর পাওয়া যেত। ব্যাংকাররা, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানরা ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের পেছনে পেছনে ঘুরতেন। ঘুরতেন আমানতের জন্য, আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) জন্য, ব্যবসার জন্য।
এখনো তারা তাদের পেছনে ঘোরেন। তবে যতটুকু না ব্যবসার জন্য, তার চেয়ে বেশি ঋণের টাকা আদায়ের জন্য। বহু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির বিরুদ্ধে এখন ডজন ডজন ব্যাংকের মামলা অর্থঋণ আদালতে; তারা ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। অনেকেই ঋণখেলাপি। আশ্চর্যের বিষয়, তারা সবাই এ সময় চট্টগ্রামের সেরা ব্যবসায়ী ছিলেন।
গণমাধ্যমে একটা খবর দেখলাম ‘বাগদাদ গ্রুপ’ সম্পর্কিত। এ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খান আলমগীর এখন জেলে। কারণ? মামলায় তার জেল হয়েছে। চট্টগ্রামের এ ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর কাছে সব ব্যাংক মিলে পাবে ৩০০ কোটি টাকা। কারও টাকা তিনি ফেরত দিচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো এখন দলবেঁধে আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা করছে।
ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের মামলায় তার পাঁচ মাস করে পনেরো মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। অথচ সারের ডিলার এই ব্যবসায়ী একের পর এক ঋণ নিয়েছেন ব্যাংকগুলো থেকে। ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতা করে তাকে ঋণ দিয়েছে। প্রথম প্রথম ভালো ‘কাস্টমার’ হিসাবে তিনি সব ব্যাংকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছেন, টাকা শোধ করেছেন। আস্থা অর্জন করে তিনি ঢোকেন ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়।
ঢোকেন ফিশিং, আবাসন, পরিবহণসহ নানা খাতে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। ব্যাংকগুলো উদারভাবে প্রশ্ন ব্যতিরেকে তাকে ঋণ দেয়। অথচ এখন তার স্ত্রী ও তিনি নিজে জেলে। ডজন ডজন কোম্পানি অচল, ঋণখেলাপি। আবার তার পরিবারের একাধিক লোক কানাডায় বাড়িঘর করে দিব্যি আছেন। কানাডা মজার দেশ। তারা ডলার চায়, বিনিয়োগ চায়, ডলারের উৎস কী তা তারা জিজ্ঞেস করে না। বাংলাদেশ কিন্তু টাকা-পয়সার পাই পাই হিসাব চায়।
এ কারণেই হয়তো হাজার হাজার বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, আধা-ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা কানাডার বাসিন্দা এখন। তাদের সহায়-সম্পত্তি, বাড়িঘর তারা এখন ‘ইউটিউবে’ দেখায়। কী আরাম-আয়েশের জীবন, তাই না?
এ বছরের প্রথমদিকের একটি খবরে অনেকেই অবাক হয়ে যান। খবরের শিরোনাম : ‘ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কারখানা এখন নিভু নিভু’। উল্লেখ্য, বছর শেষে এখন আর তা নিভু নিভু নয়। কারখানাটি দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়েছে। অথচ কাঁচপুরে অবস্থিত বিশাল এ কারখানায় এক সময় ৪৫ হাজার শ্রমিক কাজ করত। আনিসুর রহমান সিনহা ঋণী ও খেলাপি হয়ে এক সময় তা বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ক্রেতা পাননি তিনি। বিশাল সম্পদের এ কারখানা কেনার টাকা কারও কাছে নেই। উলটো বরং এ টাকায় নতুন ভালো কারখানা করা যায়।
মালিকের কথামতে, তিনি এ কারখানায় বিনিয়োগ বেশি করে ফেলেছেন। সিনহা সাহেব তৈরি পোশাক শিল্পের একজন পথিকৃত। ১৯৮৪ সালে তিনি এ খাতে ব্যবসা শুরু করেন। পরে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রি করেন। ৪৩ একর জমির ওপর কারখানা। এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম উৎপাদন কারখানা। তার মতে, মানুষের অভ্যাস বদল হচ্ছে, প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে, পোশাকে মানুষ এখন কম খরচ করে।
সিনহার কাছে এখন তার কারখানা একটা বড় বোঝা। তিনি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার কোনো পথ পাচ্ছেন না। বিশাল তার ঋণের পরিমাণ। খেলাপি গ্রাহক তিনি। অতএব কোনো ব্যাংক তাকে ঋণ দিতে চায় না। শ্রমিকদের বেতন-ভাতার সমস্যা আছে। উদ্ভ্রান্ত সিনহা তার কারখানা বন্ধ করেছেন। তার উত্তরাধিকাররা কোথায়? তার একমাত্র মেয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন।
এবার যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলব, তা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। গ্রুপটির নাম ‘নাভানা’। নামেই তার পরিচয়। অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে নাভানা গ্রুপ ব্যবসা করছিল। বাংলাদেশের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ ধনী জহুরুল ইসলামের ছোটভাই শফিউল ইসলাম কামাল গড়ে তুলেছেন এ গ্রুপটি। জহুরুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর তার ভাই এবং ছেলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। একজন পান ‘ইসলাম গ্রুপ’, একজন ‘আফতাব গ্রুপ’ এবং কামাল পান ‘নাভানা গ্রুপ’।
পাঠকরা কি বিশ্বাস করবেন, এ বিশাল গ্রুপটি এখন প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা দেনা নিয়ে হাবুডবু খাচ্ছে? গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৪০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ঋণ নিয়েছেন। সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করে নাভানাকে ঋণ দিয়েছে। যখন যা করতে চেয়েছে, তাতেই ঋণ দিয়েছে। কোনো প্রশ্ন কেউ তোলেনি।
কারণ তিনি জহুরুল ইসলামের ছোট ভাই। উদার ঋণ পেয়ে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, নির্মাণ, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা, ফার্নিচার, খাদ্য, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, প্লাস্টিকসহ নানা খাতে ব্যবসা সম্প্রসারিত করেন। বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানির লোকাল এজেন্টও তারা। এখন শফিউল ইসলাম কামাল অসুস্থ। তিনি ঠিকমতো কাউকে চেনেন না। বয়স ৭০-এর ওপরে। ‘গৃহবন্দি’ জীবন।
একের পর এক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়ে পড়ায় কোনো ব্যাংক আর ঋণ দেয় না। প্রণোদনার টাকাও বেশকিছু পেয়েছেন। তবু কিছুই হয়নি। গ্রুপটি দেউলিয়া হওয়ার পথে। এটা আন্দাজ করে কামাল সাবেক অর্থমন্ত্রীর কাছে তার সব ঋণ সরকারি ব্যাংকে স্থানান্তরের চেষ্টা করেন। তা আজও বিবেচনার মধ্যে আছে। এর মধ্যে তিন ছেলের এক ছেলে কানাডায় বসবাস করে। দুই ছেলে ঢাকায়- তাদের মধ্যে বিরোধ। স্ত্রী চেষ্টা করছেন প্রতিষ্ঠানটি ধরে রাখতে। কী আছে ‘নাভানার’ ভাগ্যে? কী আছে ব্যাংকগুলোর ৯ হাজার কোটি টাকার ভাগ্যে?
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
