Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ কী ও কেন

Icon

ড. হাসনান আহমেদ

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ কী ও কেন

স্বাধীনতা অর্জনের তুলনায় কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত ও সমৃদ্ধ করা এবং জাতির উৎকর্ষসাধন বেশ প্রয়াসসাধ্য। জাতির উন্নয়নে অনেক ফ্যাক্টরের মধ্যে গুণগত ও মানসম্পন্ন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা এবং সামাজিক পরিবেশকে আমি বেশি জরুরি ভাবতে শিখেছি।

শিক্ষা অন্যান্য ফ্যাক্টরকে প্রভাবিত করে জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেক হয়েছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার হারও বেড়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত মান বাড়েনি। শিক্ষাব্যবস্থাপনা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মান, পরিবেশ ও সেবার সংকট বিদ্যমান।

শিক্ষা থেকে দেশীয় মূল্যবোধ, সততা, মানবিকতা, দেশপ্রেম, ন্যায়নিষ্ঠার মতো মানবিক গুণাবলি হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা থেকে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিযুক্ত হয়েছে; টেকনিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা খণ্ডিত শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। এভাবে জাতি হিসাবে আমরা ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। আবার শিক্ষা ও পরিবেশের অভাবে আমাদের সমাজে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলা, সামাজিক আয়-বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে।

জনগোষ্ঠীকে মানসম্মত শিক্ষা ও সেবা দিতে না-পারা আমাদের জাতীয় সমস্যারই একটা বড় অংশ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ফল আশানুরূপ নয়। কোনো সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা ও সমাজসেবার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করে, মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন অনেকটাই হয় না। সামাজিক শিক্ষা ও পরিবেশ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবেশহীনতা কুশিক্ষাকে ত্বরান্বিত করে। এটা একটা ভিসাস সার্কেল।

সেজন্য সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের এত অবক্ষয়। তাই সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা মানবসম্পদ গড়তে গেলে সামাজিক পরিবেশ গড়া ও সমাজসেবার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সামাজিক পরিবেশ ও মানবসম্পদ এবং শিক্ষা ও সেবা পরস্পর নির্ভরশীল ও রেসিপরোক্যাল। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার নিরঙ্কুশ উন্নতি আশা করা যায় না। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উন্নতি চাইলে সামাজিক শিক্ষা ও সামাজিক সেবার মানও উন্নত করতে হবে।

এজন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করা জরুরি। সুশিক্ষিত পরিবেশ গড়তে গেলে সমাজের অভ্যন্তর থেকে সুস্থ-চিন্তাশীল, কর্মোদ্যোগী লোকের সহযোগিতা নিতে হবে। তাদের একত্র করে কাজে লাগাতে হবে। তাই প্রয়োজন এ ধরনের সমাজ ও মানব-কল্যাণকামী মানুষদের খুঁজে বের করা, একত্র করা, তাদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।

এমন বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের ভূমিকা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের শুভাকাঙ্ক্ষী শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ শিক্ষিত সমাজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে একজোট হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এভাবে জোটবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবী সমাজ-সংগঠনের নাম ‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ (জাশিপ)।

‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ সমাজের ভালো লোকদের একত্রিত করবে। এলাকাভিত্তিক ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ তৈরি করবে। সমাজের কাউন্সিলরদের সমাজ উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। এক্ষেত্রে ‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ ও ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ দলমত নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে এবং শিক্ষা ও সেবা কার্যক্রমকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেবে।

এ প্ল্যাটফর্ম সরকারের শিক্ষা ও সমাজসেবা নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও কর্মকৌশল নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সামাজিক শিক্ষা বৃদ্ধি করতে সাধারণ মানুষকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া, ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া এবং জীবনমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই, যে দায়িত্ব ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ পালন করবে।

প্রতিটি এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষকে সুশিক্ষা দেবে, সমাজসেবা দেবে, প্রশিক্ষণ দেবে, তাদের শিক্ষা-সচেতন জনগোষ্ঠী হিসাবে গড়ে তুলবে। এভাবে সামাজিক শিক্ষাবলয় গড়ে তুলতে পারলে সমাজে শিক্ষার উন্নতি হবে, সামাজিক অপরাধ, রাজনৈতিক সংঘাত ও অপচিন্তা অনেকটাই কমে আসবে।

উদ্দেশ্য : ১. দেশে জাতীয় মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করা; ২. স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নির্বিশেষে প্রতিটি পর্যায়ে গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া; ব্যবসায়, কারিগরি ও বিজ্ঞানমুখী আধুনিক শিক্ষার সম্মিলনে সমন্বিত শিক্ষার ব্যবস্থা করে জীবনমুখী শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলি-সঞ্চারক শিক্ষা চালু করা; ৩. সমাজের প্রত্যেক মানুষের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য ব্যষ্টিক (জনে জনে) উন্নয়নের একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করা; মানবকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা করা; ৪. সমাজে দরিদ্র-দুস্থ-অসহায়, আর্ত-পীড়িত, খেটে-খাওয়া মানুষের টিকে থাকার জন্য, মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থিক সহায়তা ও দানের ব্যবস্থা করা।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের আয়-রোজগার বৃদ্ধিতে সক্ষম সম্পদ গড়তে সুদমুক্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান; ৫. শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম ও দেশসেবার মনোভাব জাগ্রত করা।

শিক্ষার মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবতা, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি মানবিক গুণ ছাত্রছাত্রীদের মনে জাগিয়ে তোলা; ৬. সাধারণ মানুষের জন্য জাতীয়ভাবে গণশিক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক সামাজিক শিক্ষা এবং জীবনমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; জনগোষ্ঠীর মানসিকতা ও জীবনমান উন্নয়নমুখী শিক্ষা, সমাজ উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ, সফ্টস্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া; ৭. শিক্ষা ও সেবার মানোন্নয়নে এবং জীবনমুখী, কর্মমুখী ও মানবিক গুণাবলি-সঞ্চারক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকার ও যে কোনো সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা।

শিক্ষানীতি তৈরিতে সরকারকে বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সহযোগিতা, শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা এবং শিক্ষা ও সমাজ-উন্নয়ন মূল্যায়ন প্রজেক্ট পরিচালনা করা; ৮. দেশব্যাপী ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ পরিচালনা, তাদের সামাজিক শিক্ষা-সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা, সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কিং প্ল্যান তৈরি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ের নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন এবং শিক্ষা-সেবা সমাজের কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করা।

শিক্ষা-সেবা সমাজ : প্রতিটি সমাজে বসবাসরত মানুষের একটা সুশিক্ষিত ও সুপ্রশিক্ষিত অংশকে দিয়ে সেই সমাজের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুললে এবং সমাজের অন্য সেবামূলক কাজ করলে সঠিক সময়ে সঠিক লোক দিয়ে সঠিক কাজটা করা সম্ভবপর হয়। সৎ, বিবেকবান, মানব ও সমাজদরদি মানুষের সংখ্যা এখন কম হলেও এমন মানুষ আমাদের সমাজে আছেন।

এখন প্রয়োজন এ ধরনের সমাজ ও মানব-কল্যাণকামী মানুষদের একত্র করা, তাদের নিয়ে দেশব্যাপী এলাকাভিত্তিক অসংখ্য সমাজ তৈরি করা, যার নাম ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’। তাদের বেছে আলাদা করে পরিবেশ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ একটি স্বশাসিত, অরাজনৈতিক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী, সেবাদানকারী সমাজ-সংগঠন হিসাবে কাজ করবে। এর প্রত্যেক সদস্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অহিংস মনোভাবে বিশ্বাসী হবেন। সমাজসেবার মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় তারা মর্যাদাপ্রাপ্ত হবেন। শিক্ষা-সেবা সমাজের সব কার্যক্রম ক্ষমতাভিত্তিক ও কর্তৃত্ববাদী না হয়ে পরামর্শমূলক হবে।

কার‌্যাবলি : সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ। সাধারণ মানুষকে জনে জনে সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে সুস্থ চিন্তাধারার বিকাশসাধন করা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্মিলনে শিক্ষার জন্য ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রতিটি পক্ষকেই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা। বিশেষভাবে অভিভাবকমহলে সন্তানদের ব্যাপারে শিক্ষা ও শিক্ষার মান নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো।

তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে উচ্চশিক্ষা বা টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বলা। স্কুল-মাদ্রাসাগুলোকে ‘ফুল-টাইম স্কুলিং’ ব্যবস্থার দিকে ক্রমে নিয়ে যাওয়া। ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়া বন্ধ করা। স্কুল-মাদ্রাসার অবকাঠামো ব্যবহার করে অভিভাবকদের ও সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তাদের সুপ্রশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত করা। গরিব, নিঃস্ব, পীড়িত, অসহায় ও মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্ত-মানবতার সেবায় আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা।

শ্রেণিভেদে, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে সুদবিহীন স্বল্প কিস্তিভিত্তিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা (ব্যক্তির আয়-রোজগার সৃষ্টিকারী সম্পদ তৈরি করে দেওয়া)। আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে মানুষকে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ সমাজের সচ্ছল সদস্যদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে তাদের দিয়ে এক বা একাধিক কৃষিভিত্তিক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করার পরামর্শক হিসাবে কাজ করবে। বর্তমানে সমাজে ড্রাগ-এবিউজ টিনএজারদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করেছে। ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।

কাউন্সিলরদের দায়িত্ব হচ্ছে, তাদের আওতাধীন বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় নিয়মিত যাওয়া। সেখানে কর্মরত মৌলভি-মাওলানাদের সঙ্গে সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। স্থানীয় সব মাদ্রাসায় জীবনমুখী, কর্মমুখী ও জীবনের উদ্দেশ্যভিত্তিক শিক্ষা চালু করার জন্য অনুরোধ করা।

কাউন্সিলররা প্রতিটি মসজিদের ইমামকে অনুরোধ করবেন নামাজের দিন খুৎবা দেওয়ার আগে বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় মুসলমানের বৈশিষ্ট্য কী হওয়া উচিত, প্রতিহিংসার পরিণতি, অজ্ঞতার পরিণতি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখার গুরুত্ব, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব, মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব, গরিব-দুঃখীকে দানের সওয়াব, সমাজসেবা সম্বন্ধে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা, সমাজসেবকের ইহকাল ও পরকালের প্রাপ্তি, দুনিয়ার সব ন্যায়-কাজ ও পেশাগত সব কাজও ইবাদতের অংশ ইত্যাদি বিষয়ে হৃদয়গ্রাহী করে বক্তৃতা দিতে।

শিক্ষা-সেবা সমাজ নিজ এলাকায় একটি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক ও একটা কমিউনিটি পাঠাগার তৈরি করবে। স্বাস্থ্যশিক্ষার জন্য সেমিনার, হাতে-কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে।

পরিচালনা : জাশিপ এ দেশের মানুষকে সুশিক্ষিত করা, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সামাজিক শিক্ষা, শিক্ষা ও সেবাসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণ, সমাজসেবা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে জাতীয় প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে। জাশিপ ও ‘শিক্ষা-সেবা সমাজের’ কেন্দ্রীয় কার্যক্রম এ পরিষদ পরিচালনা করবে। এ পরিষদ আদর্শ ও মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী প্ল্যাটফর্ম।

স্বীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে শুধু জনগোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষা, সেবা এবং সমাজ উন্নয়নের আদর্শকে কর্মে ধারণ করে পরিষদের নীতিমালা নির্ধারণ করবে এবং সে মতো কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এর বাস্তবায়নে পরিষদ প্রয়োজনানুযায়ী জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সাহায্য-সহযোগিতা অবশ্যই নেবে।

উন্নয়ন মডেল : দেশে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন জনসম্পদ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই, যাদের মানবিক মূল্যবোধের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে। এতে শিক্ষার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নও সহগামী হবে। এজন্য দেশব্যাপী জনসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ ও ‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’কে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।

‘শিক্ষা-সেবা সমাজ’ ও ‘জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ’ একটা পথ (অ্যাপ্রোচ) ও উন্নয়ন পদ্ধতি। এর কর্মকাণ্ড একটা জাতির লক্ষ্যে পৌঁছানোর পাথেয়। এজন্য দলমত নির্বিশেষে সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সবাইকে জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

(গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং ‘জাশিপ : মানবসম্পদ উন্নয়ন ও জাতীয় উৎকর্ষের রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনাসভা উপলক্ষ্যে পঠিত মূল প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ)

ড. হাসনান আহমেদ : প্রফেসর, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক; প্রেসিডেন্ট, জাশিপ

জাতীয় শিক্ষা সেবা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম