ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব
ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ ভালোবাসা দিবস। এ নিয়ে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের মাঝে উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। এমনকি প্রৌঢ়-বৃদ্ধরাও হয়তো উদ্বেলিত। প্রেম-ভালোবাসার অনুভূতি চিরন্তন। এ দুর্বার আকর্ষণ সম্পর্কে আমরা মোটামুটি অবগত। কার সঙ্গে কোন বন্ধনে জড়ানো যাবে, আর কার সঙ্গে যাবে না তা মন না মানলেও সমাজ-সংসার মানতে বাধ্য করে। কেননা তা না হলে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এগুলো অচল হয়ে পড়তে পারে। প্রচলিত মূল্যবোধে ধস নামলে তা সমাজে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্যই যুগে যুগে সমাজ বেঁধে দিয়েছে অসংখ্য শৃঙ্খল, যাতে সমাজে সম্পর্কের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা যায়, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়; সর্বোপরি বিশৃঙ্খলা রোধ করা যায়। সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত রয়েছে। বহু অমর প্রেমের সমাপ্তি ঘটছে বংশমর্যাদা রক্ষার নামে।
প্রেমের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো দেশপ্রেম আর সর্বনিকৃষ্ট হলো পরকীয়া প্রেম। দেশপ্রেম শ্রেষ্ঠ এ কারণে যে, এই প্রেম মানুষকে মনের দিক দিয়ে বিশুদ্ধ করে তোলে, অন্যের মঙ্গলার্থে প্রয়োজনে জীবন বিসর্জন দিতে সাহসী করে তোলে। মানব জন্মের সার্থকতাই এই যে ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন-মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?/ আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’ ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ। এই সুখ দেশপ্রেমেই নিহিত।
পরকীয়া নিকৃষ্ট এ জন্য যে, এটি এক ধরনের প্রতারণা, শপথভঙ্গ বা বিশ্বাসঘাতকতা। এ থেকে মহৎ কিছু আশা করা যায় না। পরকীয়া করার অর্থই হলো অবৈধ বাসনার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, অশুভ ইচ্ছার কাছে পরাজিত হওয়া। এটি মানবতার অপমান। এটি একাধিক পরিবার ধ্বংস করে। যারা পরকীয়া করে তারা আসলে প্রচণ্ড রকমের স্বার্থপর। এরা নিজেকে ছাড়া আর কারও কথা চিন্তা করে না। এদের জ্ঞান-প্রজ্ঞা কারও কাজে আসে না। এদের মধ্যে সততা নেই। কখনো কখনো বিবাহিত নারী-পুরুষ পরকীয়ার পথে পা বাড়ায় বন্ধুত্বের নামে।
নতুন কিছুর প্রতি কৌতূহল থেকেই পরকীয়ার যাত্রা। ব্যক্তিজীবনে কমবেশি সবাই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে তার সঙ্গীর আচরণে কিছুটা অসন্তুষ্ট থাকতে পারেন। রুচির সংঘাত, পারিবারিক সমস্যা-এসব কারণেও মানুষের মনে নানা রকম অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। ব্যক্তিজীবনে এসবই শেষ কথা নয়।
বন্ধুত্ব হলো প্রেমের খোলা দুয়ার, যে দুয়ার এক দুর্দান্ত প্রেমের হাতছানি দেয়। ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট দুঃখ-সুখের অভিযোগ-অনুযোগ, একটু-আধটু কাজ করে দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে বন্ধুত্ব মনের অজান্তেই বহুদূর গড়াতে পারে। কেউ কেউ মনে করে, এ এমন এক নির্ভরতা যা যাপিত জীবনের ভারকে নির্ভার করে দেয়, কেননা মানুষ তার বন্ধুকে এমন কিছু শেয়ার করে, যা তার আপনজনকেও করতে পারে না। বন্ধুত্ব এমন এক সম্পর্ক যেখানে কোনো দাবি নেই, চাওয়া-পাওয়া নেই, কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই। এটি এক বন্ধনহীন বন্ধন, বিনি সুতার মালার মতো। মানুষ বোঝে না যে, এই বিনি সুতার মালাই প্রতিদিনের ছোট ছোট দুঃখ-কথার মায়ার বাঁধন, এমন সম্পর্ক নতুন রূপেও আবির্ভূত হয়। প্রচলিত রীতিনীতি এসব বন্ধনকে অস্বীকার করলেও, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও কোনো কোনো মানুষ কৌশলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়।
কোনো কোনো সম্পর্ক সামাজিক রীতিনীতিকে তছনছ করে দিতে পারে। এসব বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। বন্ধু হয়ে যে আসে, সে যেন কোনো রকম ক্ষতি করতে না পারে সেসব বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। সমাজে প্রেমের সুন্দর সুন্দর দৃষ্টান্তও রয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতিতে যা নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয় বন্ধুদের সঙ্গে, সেসব নিয়েও আলোচনা চলতে পারে। নতুন বন্ধুত্ব মানেই পুরোনো বন্ধুত্বের সঙ্গে সংঘাত, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। সমাজে নানা রকম অস্থিরতার খবর পাওয়া যায়। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও কিছু সংকট সৃষ্টি হতেই পারে। এক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।
ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী : সহযোগী অধ্যাপক, সভাপতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
