Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

পানির অপচয় বড় অপরাধ

Icon

মুনীর উদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পানির অপচয় বড় অপরাধ

আপনি কি জানেন, ছিদ্রযুক্ত কল বা নল দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে পানির ফোঁটা পড়লে প্রতি বছর ২ হাজার ৭০০ গ্যালন পানির অপচয় হয়? টয়লেট একবার ফ্লাশ করলে ৩ গ্যালন পানি খরচ হয়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রতিজন প্রতিদিন সেই একই পরিমাণ পানি দিয়ে জীবন ধারণ করে।

বাগানে পানি দেয়ার নল দিয়ে ঘণ্টায় যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয়, সেই একই পরিমাণ পানি দিয়ে গড়ে চারজনের একটি পরিবারের সারাদিনের পানির সংস্থান হতে পারে। প্রতিবার দাঁত ব্রাশ করার সময় ছেড়ে দেয়া কল দিয়ে যে পরিমাণ পানির অপচয় হয়, তার পরিমাণ চার গ্যালনের সমান।প্রতিবার টয়লেট ফ্লাশ করতে তিন গ্যালন পানি খরচ হয়। তবে আধুনিক টয়েলেটে এই খরচের পরিমাণ এক গ্যালন।

বিশ্বের প্রত্যেক মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৩০ গ্যালন পানি অপচয় করে, যেখানে বিশ্বে বর্তমানে ৩৬০ কোটি মানুষ পানি সংকটে রয়েছে। আমরা এ ধরনের অপচয়ের কথা গুরুত্বসহকারে উপলব্ধি করি না, সাবধান হই না, লজ্জিতও হই না। আমাদের জানা উচিত, যে কোনো ধরনের অপচয় অপরাধ।

প্রতি বছর পানি ব্যবহারের হার ১ শতাংশ হারে বাড়ছে। বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে ৫৭০ কোটি মানুষ পানি সংকটে পড়বে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর ২০১৮ সালের পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

১৯ মার্চ ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ্ব পানি সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও ব্যবহারের ধরন বদলে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী পানির ব্যবহার প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার ২০ কোটি। তখন এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের জোগান দিতে খাদ্য উৎপাদন ৫০ ভাগ বাড়াতে হবে। বর্তমানে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপদ পানির সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে দূষণ। আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার বেশিরভাগ নদীর পানি দূষিত। এটা আগামী দশকে মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। প্রায় ৮০ শতাংশ শিল্প ও নগরবর্জ্য কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই নদীতে ফেলা হচ্ছে, যা পানির গুণগত মান নষ্ট করছে। এটা জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ‘ফাও’কে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে কৃষিকাজে পানির ব্যবহার সাড়ে পাঁচ শতাংশ বাড়বে। এতে আরও বলা হয়, উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় পানির চাহিদা অনেক বেশি বেড়েছে। একই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক পানিচক্র ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এর ফলে পানিসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোয় পানির ব্যবহার আরও বাড়ছে আর খরাপ্রবণ এলাকাগুলোয় পানির সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। পানি দূষণ কমানোর জন্য প্রকৃতিভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। হুমকির মুখে থাকা কোটি কোটি মানুষের পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সবুজনীতি’ গ্রহণ করতে হবে। পানির সরবরাহ ও মান উন্নয়নের জন্য সব দেশের সরকারকে আরও মনোযোগ দিতে হবে।

নগরে পানির প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য চীন ‘নগর জীবনযাপন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরে ব্যবহার্য শতকরা ৭০ ভাগ পানি হবে বৃষ্টির পানি। এই পানি ব্যবহারের পর শোধন করে আবার ব্যবহার করা যাবে। এ ধরনের ১৬টি পাইলট প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ করবে দেশটি, সেখানে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ডলার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন মাটি ব্যবস্থাপনা, ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ও সংরক্ষণ করা, পানি বিশুদ্ধকরণ ও আশপাশের জলাধারে তা সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা করছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির সংকটে কথাও রয়েছে। বরিশালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পান করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রাসিলিয়া সম্মেলনে ইউনেসকোর মহাপরিচালক অদ্রি আজুলাই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, ‘আমরা যদি বসে থাকি বা কোনো উদ্যোগ না নিই, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি মানুষ পানির তীব্র অভাবের মধ্যে পড়বে। পানি সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে আমাদের সবাইকে এক হয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এসব বাস্তবায়ন করতে হবে।’

প্রতিবেদনের প্রধান সম্পাদক রিচার্ড কনর বলেন, ‘মানুষের তৈরি অবকাঠামো যেমন সংরক্ষণাগার, সেচ, খাল ও পরিশোধন কেন্দ্র এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট নয়। আর পলি ভরাট, পরিবেশগত উদ্বেগ ও প্রতিবন্ধকতার কারণে নতুন করে সংরক্ষণাগার তৈরি করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ উন্নত দেশের স্বল্প ব্যয়ের ও সহজলভ্য স্থানগুলো এরই মধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রচুর পানি অপচয় করি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট তীব্র হলেও কোনো কোনো অঞ্চলে পানি প্রাপ্তি তেমন কষ্টসাধ্য নয়। এসব এলাকায় পানি ব্যবহারের জন্য কোনো বিল পরিশোধ করতে হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কথাই ধরা যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় চলাফেরা করার সময় আমি দেখি গাড়ির ড্রাইভাররা গাড়ি ধোয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ পানি অপচয় করছে। যে পানি ছাড়া আমাদের একদণ্ডও চলে না, সেই পানির অপচয় দেখে ভীষণ মর্মাহত হই। শুধু পানি কেন, সবরকম অপচয়ই অমানবিক ও অনৈতিক। অথচ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সর্বস্তরে চলছে এই অপচয়।

এখন মাশআল্লাহ প্রায় প্রত্যেক শিক্ষকের গাড়ি আছে। অনেকের আবার একাধিক গাড়ি রয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে যারা ছুটি নিয়ে সরকারি চাকরি করেন, তাদের সরকারি গাড়ি ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি থাকে। সুতরাং ক্যাম্পাসে গাড়ির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের পানির জন্য কোনো পয়সা খরচ করতে হয় না। তাই পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা একদম স্বাধীন।

জাতি হিসেবে আমাদের মিতব্যয়িতা ও সংযমের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। তবে পয়সা দিয়ে কেনা হলে যে কোনো কিছুর অপচয় রোধে আমরা অতিশয় তৎপর ও হুশিয়ার। প্রত্যেক ড্রাইভারের কাছে থাকে লম্বা মোটা পানির নল, যার একপ্রান্ত পানির কলের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে অন্য প্রান্তের স্রোতের মতো ধাবমান পানি দিয়ে গাড়ি ধোয়া হয়।

ধোয়া বললে হয়তো যথার্থ হবে না। গ্যালনের পর গ্যালন পানি দিয়ে গাড়িকে স্যাম্পু দিয়ে রীতিমতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘষেমেজে গোসল করানো হয়। স্যাম্পু লাগানো ও ঘষামাজার সময় ঘণ্টা ধরে এই চলমান পানি স্রোতের বেগে অনবরত পড়তেই থাকে। পানির কল বন্ধ করা হয় না।

গাড়ির মালিকরা ড্রাইভারদের এই অপচয় দেখেন, কিন্তু কিছু বলেন না। আমি প্রায়ই প্রতিবাদ করি, কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয় না। আমি ওদের বোঝাতে চেষ্টা করি- দেশে লাখো মানুষ সামান্য বিশুদ্ধ পানির অভাবে কত কষ্টে আছে! ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে সামান্য বিশুদ্ধ পানির জন্য হাজার হাজার অসহায় দরিদ্র মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কলসি বা পাত্র নিয়ে প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনে না, বুঝতেও চেষ্টা করে না।

চক্ষুলজ্জায় মাঝে মাঝে ওরা একটু মিতব্যয়ী হওয়ার ভান করে, আমাকে দেখলে একটু সতর্ক হয়। কিন্তু সেই চিরাচরিত অভ্যাস আর সহজে বদলায় না। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে ভাবি, আমি একা আর কী করতে পারি! আমি একা দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের আচরণে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারি না, যেখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন বা সরকার- কারোরই কোনো গরজ নেই।

মানুষ হিসেবে আমরা দ্বিমুখীনীতিতে বিশ্বাসী। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোস্টেল, হলগুলোয় কী হারে পানি ও বিদ্যুতের অপচয় হয়, তা অচিন্তনীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইন্সটিটিউট, ল্যাবরেটরি, অফিস, লাইব্রেরি, টয়লেটে পানি ও বিদ্যুতের অপচয় দেখে আমি ভীষণ কষ্ট পাই।

প্রায়ই দেখি- ক্লাসরুম, কমনরুম, বারান্দা, টয়লেট, অফিস ও বিশ্রামকক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপ্রয়োজনে লাইট-ফ্যান ও এসি চলছে, পানি পড়ছে; কারও নজর কাড়ছে না। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস শেষ করে চলে গেছে, অথচ লাইট জ্বলছে; ফ্যান চলছে ফুলস্পিডে। চোখে পড়লে আমি স্টাফদের ডেকে বন্ধ করতে বলি।

মোকারম ভবনের ছাদে রিজার্ভ ট্যাঙ্কের সমস্যার কারণে কিছুদিন অন্তর অন্তর স্রোতের মতো দিনকে দিন পানি পড়তে থাকে। দেখার কেউ নেই। এ ক্ষেত্রেও আমাকেই কর্তৃপক্ষকে জানানোর উদ্যোগ নিতে হয়। এসব একদিনের ঘটনা নয়, নিত্যদিনের ঘটনা। অথচ এই আমরাই বাসাবাড়িতে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম আচরণ করি। বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাড়ার ভয়ে এক ফোঁটা পানি বা এক সেকেন্ডেরও বেশি লাইট ফ্যান চলতে দিই না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয়ও বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় কম নয়। ছাত্রজীবনে দেখেছি, এখনও প্রায় তা-ই দেখি। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের এদিকে আরও তীক্ষ্ণ নজর দেয়া উচিত। আমি বেশ কয়েক বছর হলে কাটিয়েছি ছাত্র ও হাউস টিউটর হিসেবে। তাই আমি স্বচক্ষে দেখেছি বিদ্যুৎ ও পানির অপচয়। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম এসব অপচয় বন্ধ করতে। কিন্তু তা সবসময় সম্ভব হতো না।

কারণ বাথরুম বা টয়লেটে নিুমানের কলকব্জা ও জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয় বলে কয়েকদিন ব্যবহার করার পর ওসব নষ্ট হয়ে যায়। পুনরায় কলকব্জা বা অন্যান্য জিনিসপত্র ঠিক করতে প্রচুর সময় নেয় বলে অপচয় চলতেই থাকে। আমরা পানির অপচয় বন্ধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। এর মধ্যে থাকতে পারে-

এক. বাসাবাড়িতে আমাদের অধিকাংশ পানির অপচয় হয়- দাঁত ব্রাশ, সেভ করা এবং হাঁড়িপাতিল ও থালাবাসন ধোয়ার সময়। দাঁত ব্রাশ, সেভ এবং হাঁড়িপাতিল ও থালাবাসন ধোয়ার সময় চালু থাকা পানির কল বন্ধ রাখলে প্রচুর পানির সাশ্রয় হবে। দাঁত ব্রাশ করার পর ছেড়ে রাখা কলের পানি ব্যবহার না করে এক গ্লাস পানি দিয়েই মুখ পরিষ্কার করে নেয়া যায়।

দুই. সাবান বা স্যাম্পু দিয়ে গাড়ি ঘষামাজা করার সময় পানির নল ছাড়া থাকলে গড়ে ১৫০ গ্যালনের মতো পানির অপচয় হতে পারে। প্রতিদিন গাড়ি ধোয়ার দরকার হয় না, পরিষ্কার করার দরকার হলে বালতি বা যে কোনো বড় পাত্রে পানি নিয়ে তা করা যায়। গাড়ির চালকরা এ ধরনের অপচয়ের কথা বুঝতে চায় না। সেক্ষেত্রে গাড়ির মালিকরা পানির অপচয় বন্ধ করার জন্য তাদের তাগাদা দিতে পারেন। এতে অনেক পানির সাশ্রয় হবে।

তিন. অনেক মানুষ আছেন, যারা গোসল করতে ঢুকলে আর বের হতে চান না। এ ধরনের দীর্ঘ গোসলের জন্য দশ গ্যালনের মতো পানির অপচয় হয়। গায়ে সাবান মেখে ঘষামাজা করার সময় শাওয়ার বা পানির কল বন্ধ রাখা উচিত। পানি সাশ্রয়কারী শাওয়ারহেড ব্যবহার করলে প্রতিমাসে প্রায় ৭৫০ গ্যালন পানির সাশ্রয় হতে পারে। কাপড়চোপড় ধোয়ার সময়ও আমরা প্রচুর পানি অপচয় করি। ছেড়ে রাখা কলের নিচে কাপড়চোপড় ধোয়ার পরিবর্তে বালতি ব্যবহার করলে প্রচুর পানি সাশ্রয় সম্ভব।

চার. পানি অপচয়ের অন্য এক কারণ হল- টয়লেটের ট্যাঙ্ক ভাল্বে ছিদ্র। এ সমস্যা প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। এতে প্রতিমাসে এক হাজার গ্যালন পানির অপচয় হতে পারে।

পাঁচ. জনসাধারণের জন্য রাস্তাঘাটে, পথে-প্রান্তরে, পার্ক, পাবলিক টয়লেটে পানির অপচয় বন্ধে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, অদূর ভবিষ্যতে যদি কোনো বড় ধরনের আন্তর্জাতিক যুদ্ধ হয়, তবে তা হবে পানি নিয়ে। নীলনদের পানির ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বড় ধরনের বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও লোকসংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে শহরগুলোয়। লোকসংখ্যা বাড়ার অনুপাতে পানি সরবরাহ বাড়ছে না।

পানি সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। তাই আমাদের পানির অপচয় বন্ধ করতে হবে। পানি, বিদ্যুৎ বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অপচয় রীতিমতো অপরাধ। মনে রাখা দরকার, কোনো অপচয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না। যে কোনো অপচয়ের জন্য আমাদের আখেরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় বড় ধরনের গুনাহর কাজ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরাহ বনি ইসরাইলের ২৬ এবং ২৭ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপচয় করও না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ : অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

drmuniruddin@gmail.com

 

পানি অপচয় অপরাধ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম