আস্থাহীনতাই আমাদের কাল হয়েছে
ড. হাসনান আহমেদ
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তর পড়তে গিয়ে দেখলাম সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে ‘রাজনীতিতে আলটিমেটাম’ (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। রাজনীতি নিয়ে লিখতে আমার মনে সায় দেয় না। কিন্তু স্রোতের প্রতিকূলেও তো থেমে থাকা যায় না, ধানের হাটে ওল নামালেও বিক্রি হতে চায় না। তাই এ মনোভাবের প্রকাশ। তাছাড়া ঘোরানো-প্যাঁচানো কথাও আমার পছন্দনীয় নয়। যা বলি সোজাসাপটা বলি। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সংকট নিরসনে পর্দার ভেতরে ও বাইরে দেশি-বিদেশি নানা মহলের তাগিদ ও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। বড় দলগুলো রাজনৈতিক অসহনশীলতা, অনমনীয় মনোভাব এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে বিদেশি কূটনীতিকরা আগে পর্দার আড়ালে তৎপরতা চালালেও এখন প্রকাশ্যে শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা পদক্ষেপও নিতে দেখা যাচ্ছে।...আলোচনার মাধ্যমে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করা না যায়, তাহলে এর মাশুল দিতে হবে পুরো জাতিকে।...পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দেশে মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, নিত্যপণের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেললেও রাজনীতির মাঠ এখন ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এদেশের রাজনীতি কি শুধুই ক্ষমতা লাভের, জনস্বার্থের নয়? আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কোন দল ক্ষমতায় যাবে, তা ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবে জনগণ। তাহলে জনগণ উপেক্ষিত থাকবে কেন?’
ছোট্ট একটা ডোবায় ভেসে ওঠা ব্যাঙের প্রতি অপরিণামদর্শী বালকদের খেলাচ্ছলে নির্দয়ভাবে ঢিল ছুড়ে প্রাণনাশের চেষ্টার গল্প আমরা সবাই ছোটবেলায় পড়েছি। বালকদের খেলা, কিন্তু ব্যাঙগুলোকে তো শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ভেসে উঠতেই হয়। তাদের পরিণামের কথা বালকগুলো কি একবারও ভাবে? বালকগুলো তো খেলায় মত্ত। হয়তো বলে চলেছে, ‘খেলা হবে’, ‘খেলা হবে’। এটাকে তারা নিছক একটা খেলা ভেবেছে। সব খেলা বিনোদন নয়। কোনো কোনো খেলা খেলে বালকরা আনন্দ পেলেও কোনো না কোনো পক্ষের জীবন-সংহারকও বটে। জীবনের সবকিছুকে খেলাচ্ছলে নিলে চলে না। সবাই কথাগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেও না, যদিও খেলায় ‘মজনুন’ হয়ে যায়। গল্পে পড়েছি, লাইলি-মজনু প্রেমে মজেছিলেন। আমরা বলি লাইলির প্রেমে ‘মজনু পাগল’। সব পাগলামি সুখকর নয়। কথাটা শুনতে আমার বেখাপ্পা লাগে। আরবি ‘মজনুন’ শব্দটাকে সংক্ষিপ্তভাবে বাংলায় ‘মজনু’ বলি, যার অর্থ পাগল, উন্মাদ ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে ‘মজনু পাগল’ বলা মানে ‘পাগল পাগল’; তা কি হয়? বাচ্চারা মজনুন হয়ে ব্যাঙের দিকে নির্বিচারে ঢিল ছুড়তে পারে, যদিও এতে ব্যাঙের ইহলীলা সাঙ্গ হয়। দেশটা নিয়ে আমাদের কি খেলা (তামাশা) করা সাজে? খেলা এক ধরনের বিনোদন-এটি মানতেই হয়। দেশের সাধারণ মানুষ, যারা প্রত্যেকেই এদেশের সম্মানিত নাগরিক, তাদের কষ্ট দিয়ে, নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এ আবার কেমন খেলা? কেমন জেদাজিদি? সেজন্যই হয়তো উপসম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেললেও রাজনীতির মাঠ এখন ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।’ আমার প্রশ্ন, সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমরা কোথায় যাব? আমাদের উপায় কী? দেশ চালানো নিয়ে খেল-তামাশা আদৌ সাজে না। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মালিক জনগণ। আমরা তো দুপক্ষের তামাশা দেখার জন্য বসে নেই। এদেশে বিভিন্ন পেশায় লাখ লাখ লোক আছেন, যারা প্রত্যক্ষভাবে নিজেদের কোনো রাজনৈতিক নোংরামিতে জড়ান না, অথচ বাস্তবতা ও দেশের ভালো-মন্দ বোঝেন। এমনকি দেশটাকেও পরিচালনা করতে পারেন। প্রমাণ তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে পরপর তিনবার হয়েই গেছে। যারা তিন মাস দেশের ভালো করতে পারেন, তারা পাঁচ বছর সময় পেলে দেশের আরও ভালো করতে পারেন। এতে প্রমাণ হয়, রাজনীতিকরা ছাড়াও দেশ চলতে পারে। রাজনীতিকরা দেশের জন্য অবশ্যম্ভাবী কিছু নয়। তবে আমরা চাই, দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা বজায় থাক। রাজনীতিকরা দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে কাজ করুক, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে নয়। আমরা তো পারতপক্ষে কোনো রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। কোনো পক্ষের স্লোগান হাঁকতেও বেরোই না। তবে এদেশের রাজনীতিকদের দায়িত্ববোধ দেখে প্রায়ই হতাশ হতে হয়। প্রতিদিনের পত্রিকা আমাদের প্রতিদিন হতাশার খবর দেয়। ভাবলেই খারাপ লাগে, ‘দুপক্ষের খেলা’য় আমাদের দেশের এ দুর্গতি কেন? আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তি যদি কোনো খারাপ কথাই বলে থাকে, তাহলে আমরা চীন ও আমেরিকার স্বার্থের দ্বন্দ্বে নিজেদের জড়াচ্ছি কেন? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমেরিকাকে একটা বুঝ দিতে পেরেছিলাম, এবার তা পারছি না কেন? ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বেই বা আমরা পক্ষ হচ্ছি কেন? বিগত দুটি নির্বাচন বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও ভারত নিজ স্বার্থে আমাদের সাপোর্ট দিয়েছে। এটা এদেশের সাধারণ মানুষ অবশ্যই বোঝে।
আমি তো দেখি এদেশের রাজনীতির সব সংকটের মূল পারস্পরিক আস্থাহীনতা এবং এ আস্থাহীনতার জন্য আমাদের অতীত কর্মই দায়ী। মানুষ নিজের চোখ ও কানকে কোনোক্রমেই অবিশ্বাস করতে পারে না। তাই দলীয় ব্যবস্থাপনায় ভোটে মানুষ আস্থা না রাখতে পারলে সেটা কি সাধারণ মানুষের দোষ? ক্ষমতাসীন দলও তো সাধারণ মানুষের ওপর আস্থা রাখতে পারে না, তাই বিদেশি সাপোর্ট খুঁজে বেড়ায়। আমরা এ অবস্থায় তো একদিনে উপনীত হইনি। তাহলে আস্থা আসবে কী করে? এমনকি আমরা নির্বাচনে হেরে যাওয়া দল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো নিয়েও বাজে মন্তব্য করতে তখন একটুও দ্বিধাবোধ করিনি, এটা আমরা দেখেছি। এটা আমাদের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এ অনাস্থা ও সব রাজনৈতিক সংকটের মূল আমাদের ‘বিচার মানি, কিন্তু তালগাছটা আমার’ এ মনোভাব। তালগাছটা আমার না হলেই মাথা খারাপ হয়ে যায়। স্বার্থের ব্যাপারে ‘মজনুন’ হয়ে যায়। শুধু আবোল-তাবোল বকতে থাকি। আমাদের বুঝ, ‘আমি যা বুঝি এবং কথার চাতুরতা দিয়ে যে যুক্তি খাড়া করি, তা অন্য কেউই ধরতে পারে না; আমি ভাত খাই আর অন্য সবাই বোকা, চিড়ে খেয়ে দিনাতিপাত করে।’ ‘দেশটা আমাদের, আর অন্য সাধারণ সব মানুষ এদেশের কেউ না, বানে ভেসে এসেছে’-এ বদ্ধমূল ধারণা। অর্থাৎ রাজনীতিকদের দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, জবাবদিহিতার অভাব আমাদের পেয়ে বসেছে। আমাদের দেশের মান-সম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা সাধারণ মানুষ এতে লজ্জা পাচ্ছি। আমি জানি, আমার মতো মাস্টার সাহেবের এরকম চাঁছাছোলা কথায় অনেকে নাখোশ ও বিরক্ত হন। কিন্তু আমি আরও জানি, আত্মবিশ্লেষণ, আত্মজিজ্ঞাসা ও নিজেদের সংশোধনের এখনই উপযুক্ত সময়। জোর করে নির্বাচন করা সম্ভব, কিন্তু ফল ভালো হবে না, যা হবে তা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। জিদের ফল কখনো ভালো হতে পারে না।
রাজনীতিতে মুখের লাগামহীন কথা ও লাঠিয়াল বাহিনী বিনিয়োগ করতে পারলে অনেক লাভ। বিনা পুঁজির ব্যবসা। কারও কাছে জবাবদিহি করা লাগে না। এর চেয়ে বড় ব্যবসা এদেশে আর একটিও নেই। এজন্য এ দশা। এ সুবিধা পাওয়ায় আমাদের অনেকেই, যাদের বিবেকের দংশন নেই, রাজনীতিতে নাম লেখাচ্ছি। ইচ্ছা হয় না, তবুও নেতানেত্রীর সামনে হাসি ধরে রাখি। নিন্দনীয় কাজকেও সাপোর্ট করি। বলতে পারেন কয়টা রাজনৈতিক দলের অপকর্মের সঙ্গে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রের মিল আছে? রাজনৈতিক দলের এসব আস্থাহীনতা ও অপকর্মের কারণে ভুগছে কারা? নিশ্চয়ই দেশ ও সাধারণ মানুষ। আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে-এরা মন থেকে স্বীকার করে না যে, দেশটা জনগণের-তারা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সেবা করার কাজে নিয়োজিত; তারা ব্যক্তিস্বার্থে বা দলীয় স্বার্থে নিয়মিত শপথ ভঙ্গ করে চলেছে। সেজন্য এদেশের এ দশা। এই যে আমার মধ্যে এদেশের রাজনীতি নিয়ে একটা ঘৃণা কাজ করে, এটা আমার প্রতিটি লেখার মধ্যে বিরাজমান। আমি অনেক ভেবে দেখেছি। রাজনীতিতে নৈতিকতা ও দেশপ্রেম বলতে কিছু থাকবে না, রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে, এদেশের একজন শাশ্বত শিক্ষক হয়ে এটি কি মেনে নেওয়া যায়? এভাবেই আমরা দলীয় স্বার্থে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তলে তলে জোট বেঁধে আমাদের উন্নতিকে খর্ব করছি, দেশের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছি, ভবিষ্যৎকে নষ্ট করছি, সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর করে তুলছি। অথচ দোষ চাপাচ্ছি অন্যের ঘাড়ে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ ধোঁয়া তুলসীপাতা নয়, এটি আমরাও বুঝি; কিন্তু তাদের নির্দলীয় সরকারের দাবি তো অযৌক্তিক নয়। ‘খেলা হবে’ দুপক্ষের, আর রেফারি হবে আপনার পক্ষের, এটা কে মেনে নেবে বলুন? এর আগের খেলাগুলোয় রেফারি তো আস্থা ভঙ্গ করেছে। তাহলে দলমত নির্বিশেষে ‘নির্দলীয় রেফারি’ নিয়োগের দাবি কি বাঞ্ছনীয় নয়? ক্ষমতাসীন দল কি এর আগে নির্দলীয় নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেনি? নির্দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি? অথচ আমরা পশ্চিমা দেশের পদ্ধতিকে কখনো আমাদের সঙ্গে তুলনা করছি, কখনো আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছি। এই করে আমরা যুক্তির অসারতা প্রমাণ করছি। ভারত সরকারের প্রতি নির্ভর করে অনেক আকাশ-কুসুম কল্পনা করছি। আমাদের উচিত জনগণের প্রতি আস্থা আনা। যে কোনো পরিবেশে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। কোনো আইন বা বিচারের সম্মুখীন হলে তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা।
আবার ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথায় বিরোধী পক্ষ পুলকিত ও খুশি হোক, এটাকে আমি ভালো চোখে দেখতে পারি না; কারণ আমি এদেশের একজন নাগরিক। এদেশ আমার। এদেশ আমার গর্ব। এদেশের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা মানে আমার মানহানি হওয়া। আমাদের অব্যবস্থা, অপচিন্তা, মানসিক বিকৃতি আমাদেরই সংশোধন ও সমাধান করতে হবে। প্রতিবেশী হোক বা দূরের দেশ হোক, কথায় কথায় বিদেশিদের ডেকে সালিশের আয়োজন করা কোনো পক্ষেরই মর্যাদা বাড়ায় না। যদিও অতীত থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া বিবদমান দুপক্ষই বজায় রেখেছে।
এদেশের উন্নয়নের মেকানিজমের অনেক সমালোচনা হলেও বর্তমান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেক করেছে, এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। নিজের কর্মের প্রতি বিশ্বাস না রেখে আমরা প্রতিবেশী দেশের প্রতি আস্থা এনে সমগ্র বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যাই কী করে? এটা প্রমাণ করে, নিজেদের করা উন্নয়নের ওপর নিজেরা আস্থা হারাচ্ছি। প্রতিবেশী দেশকে আমাদের জন্য ওকালতি করতে বলি কোন সম্মানে? স্বাধীনতার পরপর আমরা রাশিয়াকে অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম, একথা অস্বীকার করার জো নেই। তার পরিণতিও ভালো হয়নি। ভারত নিজেও সে পথ থেকে ফিরে এসে দুই পরাশক্তিকে ব্যালান্স করে চলছে। এখান থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় আছে। চলার পথে একটু ভুল করলে তা অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে। কোনো রাজনৈতিক দলেরই ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে দেশের এবং সাধারণ মানুষের। চোখের সামনের ক্ষুদ্র বুড়ো আঙুল সুদূরের বৃহৎ হিমালয়কেও ঢেকে দিতে পারে। আর দেশের কথা না ভেবে যদি শুধু নিজের দলের কথা ভাবি, সে কথা আলাদা। সে হবে ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’ কিসিমের জেদাজিদি। দলাদলি বাদ রেখে দেশের উন্নতির কথা ভেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিই; সে আশা নিয়ে বলি, ‘আমি বসে আছি আশা-সিন্ধু তীরে সদায়’।
ড. হাসনান আহমেদ এফসিএমএ : অধ্যাপক, ইউআইইউ; সাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ
