Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

কারার ঐ লৌহ কপাট এভাবে ভাঙা যায় না

Icon

বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কারার ঐ লৌহ কপাট এভাবে ভাঙা যায় না

বাবুল কাজী, ডাকনাম বাপি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার দাদা, কাজী সব্যসাচী বাবা। বাপি আমার স্কুলজীবনের বন্ধু। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিভা প্রমাণের ছিটেফোঁটা অদ্যাবধি দৃশ্যমান হয়নি। উত্তরাধিকার সূত্রে সে প্রাপ্ত হয়েছে সারল্য, দুরন্তপনা আর বন্ধুবান্ধবদের আসর প্রাণপ্রাচুর্যে মাতিয়ে রাখার সক্ষমতা। তাছাড়া সে একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ। যে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটকে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিকাশের ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে ১৯৮২ সালে, তার প্রথম টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের সে ছিল একজন অলরাউন্ডার। বাপির পরিবার এখন শোকের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে; মাত্র কয়েকদিন আগে ওর কনিষ্ঠ ভগ্নীপতি পরলোকগমন করেছেন। এর সঙ্গে কদিন যাবৎ যুক্ত হয়েছে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের নতুন একটি সুরের যন্ত্রণা। ভারতের ‘পিপ্পা’ নামক চলচ্চিত্রে জগদ্বিখ্যাত সংগীত পরিচালক এ আর রহমান গানটির যে সুর করেছেন তা অন্তর্জালের দুনিয়ায় ব্যাপক শোরগোল তৈরি করেছে, সমালোচনার তীক্ষ্ণ বাণে বিদ্ধ হচ্ছেন ওই গুণী সংগীতজ্ঞ।

বাপির সঙ্গে কথা হলো। ও জানাল ওর আপন চাচা কাজী অনিরুদ্ধের পরিবার থেকে এ আর রহমানকে এ গান ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। চুক্তিপত্রও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরিবার দাবি করছেন চুক্তিপত্রে গানের কথা এবং সুর অপরিবর্তিত রাখার শর্ত ছিল। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ছায়ানট সংগীত পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করবে বলে জানা গেছে। সেজন্য তারা ওই চুক্তিপত্র পাওয়ার জন্য পরিবারের কাছে অনুরোধ করেছে, এখন পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। এ তো গেল সমস্যাটির আইনগত দিক। কিন্তু আইনসংগত হলেই সবকিছু সিদ্ধ হয়ে যায় না। এ আর রহমান চুক্তির শর্ত মেনেও যদি কাজটা করে থাকেন, তারপরও সব কথা শেষ হয়ে যায় না। আইন দিয়ে তো আর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। গান তো মনের খোরাক। মনের ওপর কি আইনের নিয়ন্ত্রণ সব সময় কাজ করে! আইনের বাইরে নৈতিকতা বা চেতনা বলেও বিষয় আছে। চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আইন মেনেই শ্রীলংকার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে টাইমড আউট করেছিলেন, তবু তাকে সমালোচিত হতে হচ্ছে। কারার ঐ লৌহ কপাট গানটির প্রতিষ্ঠিত ও জনসমাদৃত একটি সুর রয়েছে। ওই সুরের ব্যত্যয় ঘটানো নৈতিক বা চেতনাগতভাবে কতটা সমীচীন হয়েছে, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। পাক-ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে এ গানটির একটি বিশেষ স্থান রয়েছে, যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। তিনটি দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে এ গানটির সম্পর্ক রয়েছে। দুশ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের নিগড় ছিন্ন করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্র গঠন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের চরম বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক শাসন তথা শোষণব্যবস্থার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতালাভের সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণগুলোয় এ গানটির নিবিড় সম্পৃক্ততা বিদ্যমান। যুগে যুগে গানটি স্বাধীনতাকামী জনতাকে অফুরন্ত প্রেরণা জুগিয়েছে।

গানের সুর সম্বন্ধে নজরুল ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’তে কী বলেছিলেন, তা স্মরণ করা যেতে পারে। নজরুলের নিজ উদ্যোগে প্রকাশিত অর্ধসাপ্তাহিকী ‘ধূমকেতু’র ১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় কবির লেখা কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ এবং এগারো বছরের মেয়ে লীলা মিত্রের লেখা নিবন্ধ ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ’ ছাপা হয়। লেখা দুটো রাজরোষে পড়ে এবং বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। পুলিশ কবিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে হাজির করে। বিচারক সুইনহো, যিনি নিজেও একজন কবি ছিলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইনের ১২৪-ক ধারা অনুসারে রাজদ্রোহের অভিযোগে কবিকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন। বিচার চলাকালীন ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আদালতে দাঁড়িয়ে অনবদ্য ভাষায় অবিস্মরণীয় যে সাক্ষ্য প্রদান করেন তা ‘ধূমকেতু’র শেষ সংখ্যায় ছাপা হয় এবং ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে সাহিত্যমর্যাদা লাভ করে। তাতে একপর্যায়ে তিনি বলছেন-‘আমার হাতের বাঁশি কেড়ে নিলেই সে বাঁশির সুরের মৃত্যু হবে না; কেননা আমি আরেক বাঁশি নিয়ে বা তৈরি করে তাতে সেই সুর ফোটাতে পারি। সুর আমার বাঁশির নয়, সুর আমার মনে এবং আমার বাঁশি সৃষ্টির কৌশলে। অতএব, দোষ বাঁশিরও নয় সুরেরও নয়; দোষ আমার, যে বাজায়।’

নজরুলের মনে নিজ জীবন থেকে উৎসারিত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের যে সুর সৃষ্টি হয়েছিল, যা অসংখ্য মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছিল, এ আর রহমান তার গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেননি। চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান পেরেছিলেন। তার ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন খান আতাউর রহমান; অসম্ভব প্রতিভাবান এ সুরকার বাংলা গানের জনপ্রিয় অনেক গানের সুর রচনা করেছেন। দুজন মিলে গানটির কথা, সুর, গায়কী ও দৃশ্যায়নের সফল প্রয়োগ করতে পেরেছিলেন। কারার ঐ লৌহ কপাটে কবি নজরুলের সুর এবং আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরই বহাল রাখা হয়। আজও নজরুলের ওই গানটি কেউ শুনতে চাইলে এটিই খুঁজে বের করেন। সুইনহো কবি হয়েও নজরুলের মতো কবির প্রতি অবিচার করেছিলেন, এ আর রহমান সুরকার হয়েও নজরুলের মতো সুরকারের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

গানটি লেখার জন্য নজরুলকে সম্পূর্ণরূপে কল্পনাশ্রয়ী হতে হয়নি। কারাবরণের জ্বালা তিনি নিজে ভোগ করেছেন ও জ্বালামুখ থেকেই অগ্ন্যুৎপাতের মতো এমন গানের উদ্গিরণ হয়েছে। জীবনে অন্তত দুবার তার ওপর কারাদণ্ড আরোপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার কারাদণ্ড হয়েছিল ১৯৩০ সালে ‘প্রলয় শিখা’ কবিতার জন্য, ৬ মাস। তবে গান্ধী ও আরউইনের মধ্যে চুক্তির কারণে এবার তাকে কারাভোগ করতে হয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৯১৭ সালের শেষদিক থেকে ১৯২০ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর নজরুলের সামরিক জীবনের পরিধি। এ সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গলি রেজিমেন্টের একজন সাধারণ সৈনিক থেকে ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। যুদ্ধের দামামা ও উত্তেজনার মধ্যে তিনি যে ছন্দ আবিষ্কার করেছেন, তা সুর আকারে এমন অনেক গানের মধ্যে প্রবেশ করেছে। প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে ১৯২০ সালের মার্চে নজরুল দেশে ফিরে কলকতায় সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের সম্পাদনায় অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ওই বছর সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ প্রকাশিত হলে তাতে যোগদানের মাধ্যমেই নজরুলের সাংবাদিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। এতদিন পর্যন্ত নজরুল প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা রচনার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা করছিলেন। তখনো নিজে গান লিখে সুর করতে শুরু করেননি, তবে তার কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়ে তার স্বরলিপিসহ পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংগীতজ্ঞ মোহিনী সেনগুপ্তা, যেমন: ‘হয়তো তোমার পাব দেখা’, ‘ওরে এক কোন স্নেহ-সুরধ্বনী’।

কলকাতায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর ১৯২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে, ছিলেন প্রায় তিন মাস। ১৪ এপ্রিল নজরুলকে হুগলী জেলে স্থানান্তর করা হয়। তাকে সাধারণ পোশাক পরানো হয়-ডোরাকাটা প্যান্ট-শার্ট। কোমরে বাঁধা হয় দড়ি, হাতে লোহার হাতকড়া, পায়ে বেড়ি। অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেওয়া হয়। নজরুলসহ কয়েদিদের এখানে অমানুষিক অত্যাচার করা হতো। এখানে কবি লিখলেন ‘এই শিকল-পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল’-বিখ্যাত গানটি; লোহার গরাদের সঙ্গে ঘা দিয়ে বাজিয়ে বাজিয়ে গাইতে লাগলেন। জেলের অবস্থা ক্রমে জোরালো হয়ে উঠল এবং যত রকম শাস্তি দেওয়া যায় তার সব ব্যবস্থা করা হলো। প্রতিবাদে নজরুলসহ অন্য কয়েদিরা অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। নজরুলের ৩৯ দিনের অনশন আলোড়ন তুলেছিল সারা বাংলায়। অবশেষে কবির শাশুড়ি বিরজা সুন্দরী দেবীর অনুরোধে অনশন ভেঙেছিলেন কবি। নজরুলের জেলের সঙ্গী নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী ‘নজরুলের সঙ্গে কারাগারে’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এই বন্দিশালার সীমাবদ্ধ ও শাসন সংযত পরিবেশেও কত সহজেই না কাজী গান লিখতেন, সুরারোপ করতেন, লিখতেন দীর্ঘ কবিতা!’ নজরুলকে বহরমপুর জেলে আনা হলো ওই বছরের ১৮ জুন। জেল সুপার ছিলেন বসন্ত ভৌমিক, যিনি ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রফুল্লকুমার সরকারের ভগ্নীপতি। নজরুলের লেখাপত্রের খোঁজ তিনি ভালোই জানতেন। তিনি নজরুলকে একটা হারমোনিয়াম জোগাড় করে দিলেন। আর কবিকে পায় কে? চলল গান। জেলের ভেতরের বন্দিরা শুধু নয়, বাইরেও লোকেরা দাঁড়িয়ে নজরুলের গান শুনতে লাগল। সংগীতবহুল ছোট একটা নাটক লিখেছিলেন এই জেলে বসে। নাটকটা হারিয়ে গেলেও এ নাটকের একখানা গান কিন্তু রক্ষা পায়, সেটা আরেকটি বিখ্যাত গান ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছে জুয়া’। জেল কোড ভেঙেছেন এ অভিযোগে এখানেই আবার একটা মামলা হলো, মোকদ্দমার তারিখও পড়ল। তবে কোনো কারণে এ মামলা আর অগ্রসর হয়নি। এক বছর তিন সপ্তাহ কারাবাসের পর ১৯২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

কমরেড মুজফ্ফর আহমদের বর্ণনানুসারে কারার ঐ লৌহ কপাট গানটি রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে, যখন কবির বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর ৬ মাস। ওই সময় গান্ধীজির নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলছিল। ব্রিটিশবিরোধী এ আন্দোলন দমনের জন্য ইংরেজ সরকার বহু তরুণকে গ্রেফতার করে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো ‘বাঙ্গলার কথা’ নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। স্বদেশি আন্দোলনের চেতনাবহ লেখা প্রকাশের জন্য তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। পত্রিকার হাল ধরেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী। গানটি ‘ভাঙার গান’ শিরোনামে ওই পত্রিকার ২০ জানুয়ারি ১৯২২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। গান রচনায় প্রেক্ষাপট মুজফ্ফর আহমদ রচিত ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’য় পাওয়া যায়-‘আমার সামনেই দাশ-পরিবারের শ্রী সুকুমাররঞ্জন দাশ ‘বাঙ্গলার কথা’র জন্য (নজরুলের কাছে) একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। শ্রীযুক্তা বাসন্তী দেবী তাকে কবিতার জন্য পাঠিয়েছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন জেলে।...অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু করেন।...সুকুমাররঞ্জন আর আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি আমাদের পড়ে শোনাতে লাগল। ‘বিষের বাঁশি’ বাজেয়াপ্ত হওয়ার কিছুদিন পরই ১৯২৪ সালের ১১ নভেম্বর ‘ভাঙার গান’ নিষিদ্ধ হয়। স্বাধীনতার আগে ‘ভাঙার গানে’র ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা ওঠেনি।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘কারাগারে আমরা অনেকে যাই, কিন্তু সাহিত্যের মধ্যে সেই জেলজীবনের প্রভাব কমই দেখতে পাই। তার কারণ অনুভূতি কম। কিন্তু কাজী নজরুল যে জেলে গিয়েছিলেন, তার প্রভাব তার লেখার অনেক স্থলেই পাওয়া যায। এতেই বোঝা যায়, তিনি একটি জ্যান্ত মানুষ।’ নজরুলের বেশকিছু গান কমল দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন সুরকার সুরারোপ করেছিলেন। কিন্তু এ গানটি নজরুল নিজে সুর করেছিলেন। গানটির বিষয়বস্তু তার নিজের জীবনঘনিষ্ঠ ছিল। ফলে গানটির সুর করা তার জন্য সহজ ছিল। গানটি তিনি দ্রুত দাদরার তালে সুর করেছিলেন। এ আর রহমানের সুরে সেই তাল রক্ষিত হয়নি; ‘হা হা হা পায় রে হাসি’র জায়গায় নজরুলের সুরে যে বিদ্রুপের ঠেস রয়েছে, তার অনুভূতি পাওয়া যায় না। সমগ্র গানে জ্যান্ত নজরুলের সন্ধান পাওয়া যায় না। সৃষ্টির জন্য কখনো কখনো ভাঙার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কালজয়ী পুরাকীর্তি ভাঙা যায় না।

বাপির কথা দিয়ে শেষ করি। ও বলছিল, ‘এ আর রহমান একজন মহান শিল্পী। একটি গানের জন্য তিনি তার সারা জীবনের অর্জন বিসর্জন দেবেন না। তিনি নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা নেবেন।’ আমরাও সেই প্রত্যাশায় রইলাম।

বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক; গীতিকার ও সুরকার

baizid.romana@gmail.com

কারা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম