Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক তাৎপর্য

Icon

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের জন্মের পর গত ৫২ বছরে যে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি, অবকাঠামো, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের উন্নয়ন হয়েছে, তা বিশ্ববাসীর কাছে ‘ডেভেলপমেন্ট মিরাকল’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ উন্নয়নের পেছনে রয়েছে জনগণের অংশীদারত্ব, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সফল কর্মতৎপরতা এবং সর্বোপরি সরকারের সময়োচিত পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নীতি সহায়তা। স্বাধীনতার পর প্রাথমিক পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন, দুস্থ, অভাবী মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ এবং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সরকার কয়েক বছর নিরলস পরিশ্রম করে দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু কৃষির উন্নয়নে সবুজবিপ্লবের সূচনা করেন এবং সমবায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নেও উদ্যোগী হন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাপান সফরকালে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই যমুনা সেতু নির্মাণের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে মেঘনা ও যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সূচনা হয়।

সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ সব সরকারের সময়ই জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় ছিল। তবে ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিন মেয়াদ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকার ফলে বর্তমান সরকারের সময়ই বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার উদ্যোগ, সাহস, উন্নয়নবান্ধব কর্মতৎপরতা, উন্নয়ন সহযোগীদের সরকারের প্রতি আস্থা ও সহযোগিতা মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করেছে।

বর্তমান শতাব্দীর শুরু থেকেই দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৪.৫ শতাংশ হারে বাড়তে থাকে, যা ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহসী উদ্যোগ নেয় এবং একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যরে বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ উন্নয়ন অভিযাত্রায় দৃপ্তপদে এগিয়ে চলেছে। মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন এ উন্নয়ন-অগ্রযাত্রারই অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দেশের সব জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন এবং দেশের বিভিন্ন অংশের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। সেজন্য নানা ছোট-বড় প্রকল্প গ্রহণে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পেরেছেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই দেশ এগিয়েছে পরিকল্পনামাফিক। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও শতবর্ষব্যাপী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) গ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।

বর্তমান শতাব্দীর শুরুর দশক থেকে অদ্যাবধি বিশ্ব অর্থনীতি বেশ কয়েকবার মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে দুবছর করোনা মহামারি এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, সরবরাহ চেইনে বিপর্যয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতিও সমস্যাজর্জরিত হয়। এ অবস্থায়ও দেশের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন অভিযাত্রা থেমে থাকেনি। বরং নানা প্রতিকূলতার ভেতরেও মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দেশের কর্মসংস্থান, ভোগচাহিদা, উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থা সচল রেখেছে। এ পর্যায়ে কয়েকটি মেগা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হলে ওপরের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যাবে।

পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শাসনের প্রথম মেয়াদেই (১৯৯৬-২০০১) পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং জাপান সরকার পরিচালিত প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই ফলাফলের ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন। নানা গুজব, আলোচনা-সমালোচনায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও গড়িমসি করলে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। দেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ একটি অবিশ্বাস্য অর্জন, আমাদের সামর্থ্যরে পরিচায়ক, আমাদের সততা এবং প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসের বিজয়। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর ১০ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে (ভায়াডাকটসহ) সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীসহ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। প্রায় ৩২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর অর্থনীতি, যোগাযোগ, উৎপাদন, শিল্পায়ন, পর্যটন ইত্যাদিতে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য ও পরিবর্তন এসেছে। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের ২৫ জুন এ সেতু উদ্বোধনের পরদিন থেকে ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত টোল বাবদ ১১৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে, যার দৈনিক গড় আদায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার ওপর। রেলসহ এ সেতু পুরোদমে চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনসহ দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে। বলতে গেলে, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন অন্যান্য মেগা প্রকল্পের পথিকৃৎ হিসাবে বিবেচিত।

ঢাকা মেট্রোরেল : ঢাকা শহরের যানবাহন সমস্যা নিরসনকল্পে বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় ২০০৭ সালে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান গৃহীত হয়। বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে এ কৌশলগত পরিকল্পনা আংশিক সংশোধন করে গ্রহণ করে। নগরীর দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ছয়টি এমআরটি রুটের একটি ‘এমআরটি-৬’ জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, পরিকল্পনা, টেন্ডার প্রক্রিয়া ইত্যাদি ২০১১-১৫ সাল পর্যন্ত শেষ করে ২০১৬ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোরেল চালু হয়। গত ৪ নভেম্বর মতিঝিল পর্যন্ত মোট ২০.১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। এ রুট আরও ১.১৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ সমাপ্ত হলে উত্তরা-কমলাপুর রুটে মেট্রোরেল পুরোদমে চালু হবে। বর্তমানে মেট্রোরেলে প্রতিদিন এক লাখের বেশি যাত্রী ভ্রমণ করছে। মেট্রোরেলের চলাচল ঢাকার জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। এ রুটের সাফল্যজনক চালুর পর অন্য কয়েকটি এমআরটি লাইন নির্মাণের ব্যাপারে ইতোমধ্যে জাপান সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরত্ব সহজে অতিক্রমের জন্য তথা ঢাকা শহর বাইপাস করে উত্তরবঙ্গ থেকে ভারী যানবাহনসহ যাত্রীবাহী বাস চলাচলের জন্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১০ সালে, যার নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় ২০১১ সালের প্রথমদিকে। এটি দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ পিপিপি প্রকল্প। নানা কারণে এ প্রকল্প নির্মাণে কিছুটা বিলম্ব হয়। ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক চালুর উদ্বোধন করেন। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়েটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। এ উড়াল সড়ক থেকে বিভিন্ন স্থানে ওঠানামার জন্য র‌্যাম্পসহ (২৭ কিলোমিটার) মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। ঢাকা-আশুলিয়া আরও একটি উড়াল সড়ক নির্মিত হচ্ছে। উভয় এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার যানজট নিরসন, পরিবহণ সময় সাশ্রয় ও ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল : কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয় ২০১১ সালে। বাংলাদেশ ও চীন সরকার জিটুজি অর্থায়নে এ টানেল নির্মাণ করে। এ টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৬ হাজার ৭০ কোটি এবং বাকি ৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মূল নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হলে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেলের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এ টানেল চট্টগ্রামের আনোয়ারার শিল্পাঞ্চল, কে ইপিজেড, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ পার্বত্য জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ সহজ করবে। চীনের সাংহাই শহরের আদলে কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে উঠবে নান্দনিক শহর। শিল্প, বিদ্যুৎ অবকাঠামো ও পর্যটনশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল : ৭ অক্টোবর ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। তবে এটি বিমান ও যাত্রী চলাচলের জন্য এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে এ টার্মিনালের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এভিয়েশন এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি টাকা জাপান সরকারের ঋণ সহায়তা। এ টার্মিনাল চালু হলে বছরে সেবা পাবেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী। বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এ দুই টার্মিনালের মোট আয়তন ১ লাখ বর্গমিটার। দ্বিতীয় টার্মিনালের আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মিত এ টার্মিনাল চালু হলে পৃথিবীর নামকরা এয়ারলাইনগুলো ঢাকায় তাদের বিমান চলাচল শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রাজস্ব সংগ্রহসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বিমানবন্দর হবে আরও একটি মাইলফলক।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি সমস্যা নিরসনে অন্য বহু দেশের মতো বাংলাদেশও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই লক্ষ্যে বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারে নির্মীয়মাণ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে। এ প্ল্যান্টের দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি ২০২৪ সালের জুন নাগাদ বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটি বেশ অনেকটা পিছিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম এনে টেস্ট রান করা হয়েছে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।

ওপরের মেগা প্রকল্পগুলো ছাড়াও গত এক যুগে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও রাষ্ট্রের ঋণ সহায়তা নিয়ে আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে। কোনো কোনোটির বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে; যেমন-মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ, পূর্বাচল ৩০০ ফুট প্রশস্ত এক্সপ্রেসওয়ে, যমুনা নদীতে বিকল্প রেলসেতু নির্মাণ, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা ইত্যাদি।

এসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপের ফসল। সরকারের ধারাবাহিক স্থায়িত্ব, স্থিতিশীলতা এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির কারণেই মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। কারণ বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি প্রতিটি প্রকল্পেরই সরকারি অংশ থাকে। দেড় দশক ধরে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির কারণেই অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সামর্থ্য অর্জিত হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এবং বাস্তবায়ন-পরবর্তী সময়ে দেশের কর্মসংস্থান, রাজস্ব আহরণ, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং ভোগচাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দু-একটি প্রকল্প ছাড়া অধিকাংশ প্রকল্পের রেট অব রিটার্ন ধনাত্মক প্রমাণিত হয়েছে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ছে, সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মানের কাজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন বেশকিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ফলে ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজতর হবে। উন্নয়নের লাইফলাইন এ প্রকল্পগুলো যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হচ্ছে, তেমনি নানা ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ প্রশমিত করছে।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : সাবেক সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম