নতুন শিক্ষা কারিকুলাম ও কিছু প্রস্তাব
ড. মো. খোরশেদ আলম
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বর্তমানে আলোচিত একটি বিষয় ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’। নতুন এ রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সার্বিকভাবে শিক্ষার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রূপরেখাটি ২০২১ সাল থেকে দুটি শ্রেণিতে পাইলটিং শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পূর্ণ বাস্তবায়নের পর্যায়ে যাবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিভিন্ন বিষয়ে কিছু মূল্যায়ন শিখনকালীন কার্যক্রমের ভিত্তিতে এবং কিছু অংশের মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন।
রূপরেখা অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক স্তর, অর্থাৎ নার্সারি ও প্লেতে শিশুদের জন্য এখন আর কোনো বই থাকবে না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরাই তাদের সরাসরি শেখাবেন। এরপর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তিনটি বই পড়ানো হবে, কিন্তু কোনো পরীক্ষা থাকবে না। বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিখন কার্যক্রম ও পরীক্ষা দুটোই থাকবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ থেকে শ্রেণিভেদে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ এবং পরীক্ষা হবে অবশিষ্ট অংশে। তবে বেশকিছু বিষয়ের মূল্যায়ন শতভাগ ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে করা হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। শিক্ষার্থীদের এখন নবম ও দশম শ্রেণিতে অভিন্ন সিলেবাসে পড়ানো হবে এবং অভিন্ন দশটি বিষয়ের ওপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেটাই হবে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। পরে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য এ তিনটার মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিভাগ বেছে নিতে পারবেন। বর্তমান প্রচলিত এইচএসসি পরীক্ষার পরিবর্তে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি আলাদা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয় করে এইচএসসির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ।
দেখা গেছে, নতুন রূপরেখায় ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণ নতুন কিছু দিকদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রূপান্তরমূলক দক্ষতার কথা বলা হয়েছে-শিক্ষার্থী বিবিধ বিষয়ের তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে কাজে লাগিয়ে বাস্তব জীবনের যে কোনো স্তরে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে পারবে, জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা নেওয়ার জন্য অভ্যস্ত হবে। নিঃসন্দেহে এটি খুব যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। পর্যায়ক্রমে আমাদের এ ব্যবস্থায় যেতেই হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, শুধু শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনাই নয়, বরং পারিপার্শ্বিক, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখনকে এ শিক্ষাক্রমে মূল শিখন কৌশল হিসাবে নেওয়া হয়েছে। নিজের কাজ নিজে করার যে শিক্ষা, তা কেবল পরিবার নয়, বরং প্রাক ও প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকা জরুরি।
তবে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এমনকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করেছেন অনেকে। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, অভিভাবকরা যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, তেমনি শিক্ষকরাও খানিকটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। ফলে এর বিরূপ প্রভাবগুলো বাচ্চাদের ওপর পড়ছে বেশ প্রকটভাবে। নতুন রূপরেখা নিয়ে কিছু মানুষ ঢালাও সমালোচনা করলেও অনেক শিক্ষাবিদসহ সচেতন মহল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে রূপরেখার ইতিবাচক বিষয়গুলো প্রশংসাযোগ্য ও সাহসী বলছেন এবং একইসঙ্গে কিছু যৌক্তিক সমালোচনাসহ মতামত তুলে ধরছেন। শিক্ষাব্যবস্থায় প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টের সংযোজন অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির জায়গায় এক ধরনের বৈপ্লবিক চিন্তাও বটে; কিন্তু প্রজেক্টভিত্তিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শ্রেণিশিক্ষকের পর্যবেক্ষণ আবশ্যক এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক মানসম্মত শিক্ষক। বাংলাদেশে এমনিতেই শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল, তাই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বর্তমান পদ্ধতি বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
নতুন রূপরেখা বাস্তবায়নে কিছু প্রস্তাবনা
ক. রূপরেখায় মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শ্রেণিভেদে ত্রিশ থেকে ষাট ভাগ পর্যন্ত মূল্যায়নই করা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন। যেহেতু বর্তমানে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক সংকট রয়েছে, তাই শিখনকালীন মূল্যায়নের অংশে ২০-৩০ শতাংশ রেখে বাকিটা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে পর্যায়ক্রমে এটা বাড়ানো যেতে পারে।
খ. দ্রুততম সময়ে নতুন শিক্ষাক্রম, নতুন পাঠ্যপুস্তক, শিখন-শিক্ষণ, মূল্যায়ন পদ্ধতি ভালোভাবে শিক্ষকদের বোঝাতে হবে। ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণের পর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আবার শহর ও গ্রামে নানা বৈষম্য আছে। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত ও মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগের যেমন ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনি তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি যৌক্তিক তদারকি ও নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গ. এনসিটিবি সমীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় গড়ে ১২ জন, থাইল্যান্ডে গড়ে ২৪ জন, ইন্দোনেশিয়ায় গড়ে ১৫ জন, অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে ৯ জন, ফিনল্যান্ডে গড়ে ১৩ জন, ডেনমার্কে গড়ে ১১ এবং ভারতে গড়ে ২৮ জন। অন্যদিকে আমাদের দেশে মাধ্যমিকে গড়ে ৫২ শিক্ষার্থীকে পড়ান একজন শিক্ষক এবং প্রাথমিকেও গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। অথচ নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ওপর নজর দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে।
ঘ. দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ যেমন কম, তেমনি কম শিক্ষকদের বেতন-ভাতাও। এসব কারণেই এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসেন না। কাজেই মেধাবীদের আনতে হলে তাদের যথাযথ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতির বিষয়ে ভাবতে হবে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে সব স্তরের শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছিল। এগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ঙ. নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাগুলো পালনে সবাইকে শতভাগ আন্তরিক হতে হবে। শ্রেণি শিক্ষকদের এখানে শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা, গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতি পরিহার করে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা, প্রকল্পভিত্তিক কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সমস্যা চিহ্নিত করা, মূল্যায়নের মূলনীতি অনুসরণসহ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বা সুবিধাভোগী মনোভাব পরিহার করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। আবার অভিভাবকদের জন্য সন্তানদের বাড়ির ছোট ছোট কাজ করানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা, ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া, সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখাসহ নানা বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিভাকদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। কোনো কোনো মহল শ্রেণিভিত্তিক শিখন কার্যক্রমের খণ্ডিত অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে এটা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে; যা অভিভাবকদের আরও উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অভিভাবক, শ্রেণিশিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে এটা দূর করতে হবে।
চ. মাধ্যমিকে বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার ফলে নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমান নিয়মে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ওপর আলাদা তিনটি ১০০ নম্বরের বা একত্রে ৩০০ নম্বরের পরিবর্তে তিনটি মিলে মাত্র ১০০ নম্বরের পাঠ্যক্রম পড়লে ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান শিক্ষার বুনিয়াদ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। চমৎকার আধুনিক শিক্ষাক্রমটি আরও ভালো হয়, যদি এতে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি করে ঐচ্ছিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেত-যাতে করে যে চাইবে সে সেই বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ঐচ্ছিক বিষয়ের সুবিধা হলো-মূল সিস্টেমের সুবিধাও সবার জন্য অক্ষুণ্ন থাকবে এবং যারা চাইবে তারা পছন্দের বিষয়ে বাড়তি পড়াশোনা করে তাদের পরবর্তী ধাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।
ছ. বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। শুরু থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে ‘কৃষি শিক্ষা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষিকে গুরুত্ব খুবই কম দেওয়া হয়েছে মর্মে সমালোচনা রয়েছে। পরবর্তী সংস্করণে কৃষি শিক্ষাকে কীভাবে আরও কিছুটা সংযোজন করা যায়, সেটা ভাবা যেতে পারে।
জ. এটা ইতিবাচক যে, মানসিক ও শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় পাঠ্যপুস্তকে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয় জাতীয় শিক্ষাক্রমে স্থান পেয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব স্কুলে শরীরচর্চার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা নেই, তালিকা করে পর্যাক্রমে এটি নিশ্চিত করতে হবে।
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে যোগ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমরা চাই, দেশে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা একুশ শতকের উপযোগী আধুনিক, দক্ষ, শিক্ষিত ও বিকশিত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে। জোর করে কাউকে পদার্থবিদ, অর্থনীতিবিদ বা প্রকৌশলী বানানো যাবে না; কিন্তু যে চায় তাকেও একটা সুযোগ দেওয়ার অপশন থাকা উচিত। তবে এ কথা ঠিক, যে কোনো নতুনত্বই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস্তবতা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন ও যুগোপযোগী করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমটি শুরু হয়েছে, তাই বাস্তবতার আলোকে যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে তা সফল হবে বলে প্রত্যাশা করছি। পরিশেষে বলব, নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে বাস্তবায়িত হোক, যেটি হবে একাধারে আন্তর্জাতিক মানের এবং আমাদের স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে নিজেরা নেতৃত্বের জায়গায় টিকে থাকতে পারে। প্রত্যাশা থাকবে, নতুন শিক্ষাক্রম এমন বিশ্বনাগরিক তৈরি করবে, যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা রাখবে এবং একইসঙ্গে একুশ শতক তথা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।
ড. মো. খোরশেদ আলম : শিক্ষক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
khorshed_du@yahoo.com
