ছাত্ররাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ
দিলীপ কুমার সরকার
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এ জনপদের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ দেশের ঐতিহ্যমণ্ডিত ইতিহাস ও জাতিগত প্রতিটি অর্জনের ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। এ ভূমিকা কখনো ছিল রাজনৈতিক পরিচয়ে, কখনো নির্দলীয় অবয়বে এবং কখনো সবার সম্মিলিত প্রয়াসে। যখনই কোনো অন্যায়-অবিচার সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে, তখনই ছাত্রসমাজ প্রতিবাদী হয়ে রাজপথে নেমেছে। নৈতিকতাবোধ থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাসহ সাহসিকতা নিয়ে লড়াই-সংগ্রামই যেন একসময় ছিল তারুণ্যের আদর্শ। আমাদের এ ভূখণ্ডে কোনো ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্র আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল গত শতাব্দীর ষাট, আশি ও নব্বইয়ের দশক। সেই বিবেচনায় উল্লিখিত সময়কালকে এ দেশের ছাত্ররাজনীতি, তথা ছাত্র আন্দোলনের স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে।
ছাত্ররা যখন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জনস্বার্থ রক্ষা বা জাতীয়স্বার্থে কোনো সাংগঠনিক পরিচয়ে একতাবদ্ধ হয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এবং যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে লক্ষ্য অর্জনে ব্রতী হয়, সাধারণভাবে তখন তাকে ছাত্ররাজনীতি বলে। ’৪৭-পরবর্তী কালকে আমলে নিলে দেখা যায়, ছাত্রসমাজের সংশ্লিষ্টতা বিবেচনায় আমাদের এ ভূখণ্ডে বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল-ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ সালের নির্বাচন, শিক্ষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মজিদ খানের শিক্ষানীতিবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ইত্যাদি।
’৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান এবং পরবর্তীকালে ঢাকায় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া পর সূচিত ভাষা আন্দোলনের মূলশক্তি ছিল এদেশের ছাত্রসমাজ। ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনকালে যুক্তফ্রন্টের প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিল ছাত্রসমাজ। সেই সময় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ উদ্যোগে ‘যুক্তফ্রন্ট কর্মী শিবির’ গঠন করে নির্বাচনি তৎপরতা চালিয়েছে। সামরিক শাসন জারি হলে সংস্কৃতি সংসদ, শিল্প সাহিত্য সংসদ, সাংস্কৃতিক পরিষদ ইত্যাদি নামে ছাত্ররা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল। শরিফ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন ছিল ছাত্রসমাজেরই আন্দোলন, যার চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ’৬২-এর ১৭ সেপ্টেম্বরে বাবুল, মোস্তফা ও ওয়াজিউল্লাহ্’র প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল ছাত্রসমাজ। শুধু তাই নয়, ছয় দফাকে একীভূত ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি এ আন্দোলনে গতিবেগ সঞ্চার করেছিল। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে ন্যাপ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকলেও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদই ছিল এ আন্দোলনের প্রাণ। ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপকভাবে প্রচারণার কাজটি করেছে ছাত্ররা। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয়েছিল ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগেই। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনী (এফএফ), বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ), ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও কাদেরিয়া বাহিনীতে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মজিদ খানের শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলন। মূলত মজিদ খানের শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জোরালো হয়েছিল এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলনে শহিদ হন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, কাঞ্চন, আইয়ুব, দিপালী সাহা প্রমুখ। এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রদের মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে ওঠে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ব্যানারে সেলিম, দেলোয়ার, রাউফুন বসুনিয়া, শাহজাহান সিরাজসহ অনেকের রক্তের বিনিময়ে; যা এরশাদের পতনকে ত্বরান্বিত করে। উল্লেখ্য, সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের চাপেই সেই সময় ঐতিহাসিক তিন জোটের রূপরেখাও (রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আচরণবিধি) ঘোষিত হয়। পরবর্তীকালে ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত আন্দোলনও ছিল ছাত্র আন্দোলন ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে গড়ে তোলা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনও এ দেশের সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান; যার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে কর্তৃত্ববাদী সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের।
এদেশের অতীতের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো ছাত্রসমাজের অবদানের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রদের মধ্যে আদর্শনিষ্ঠা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার তাগিদ, সাহসিকতা এবং তারুণ্যের সহজাত প্রবৃত্তি ইত্যাদি এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তবে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের অতীত সম্পর্কে জনমনে ইতিবাচক ধারণা থাকলেও ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশনের (এনএসএফ) দুর্বৃত্তায়ন এবং ইসলামী ছাত্রসংঘ কর্তৃক আলবদর বাহিনী গঠন করে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়াসহ জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী হিসাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়াকে এ দেশের মানুষ সবসময় চরম ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ক্ষমতাসীনদের দোসর হিসাবে ছাত্র সংগঠনগুলোর দাপট ও বিভিন্ন অপকর্মকেও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ ও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে এসেছে। সাম্প্রতিককালে নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অপরাজনীতির কারণে এ দেশের সাধারণ ছাত্রসমাজসহ সাধারণ মানুষ সংগঠনটির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল।
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অতীত ইতিহাস অত্যন্ত উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ হলেও সেই ঐতিহ্য ছাত্রসমাজ আজ হারাতে বসেছে। তারুণ্যের সেই আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতা, সাহসিকতা, লড়াকু ঐতিহ্য ইত্যাদি যেন শুধু অতীতের সুখস্মৃতির বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে অনেকাংশে ছাত্ররাজনীতি যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, সিটবাণিজ্য, কমিটিবাণিজ্য ইত্যাদির সমার্থক। ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের নেতৃত্ব বিকাশের একটি পন্থা হিসাবে বিবেচিত হলেও আমাদের বর্তমান কলুষিত ছাত্ররাজনীতি সেই নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারছে না। আমাদের ছাত্ররাজনীতি এখন ছাত্রদের রাজনীতি নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের ব্যবহার করার রাজনীতি। বড় বড় ছাত্র সংগঠন, বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বাণিজ্য ও বিভিন্নমুখী অপকর্মের জন্য দায়ী। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষ ছাত্রদের ভিন্নদৃষ্টিতে দেখা শুরু করেছে। জনমনে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, তারুণ্যের এ বিপুল শক্তি ও অসীম সাহসিকতা ইতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হলে, আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। তবে তারুণ্যের এ নতুন সম্ভাবনাকে চোখ-কান খোলা রেখে পর্যবেক্ষণও করছে এ দেশের মানুষ। যে তরুণ সমাজ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলেছে, নতুন করে ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে বলেছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেছে, ভোটাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে, সেই তরুণ সমাজের আচরণ তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, সেটিও মানুষ পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
মাঝেমধ্যেই দেশে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে দাবি ওঠে। আমরা ভুলে যাই, আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধসাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ তাই সাংবিধানিকভাবেই ছাত্ররা রাজনীতি করার অধিকার রাখে। আমি মনে করি, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি একটি ভ্রান্তধারণাপ্রসূত ভাবনা। এদেশে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা কখনোই মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিষিদ্ধ হতে পারে লেজুড়বৃত্তির দুর্বৃত্তায়িত ছাত্ররাজনীতি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে দেশে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির ধারাটি বাধাগ্রস্ত হবে। আর সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি থাকলে তা হবে ভবিষ্যতের গুণগত মানসম্পন্ন জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য সহায়ক। ব্যতিক্রম বাদ দিলে আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব প্রদানকারী উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের প্রায় সবাই ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়েই বিকশিত হয়েছেন। তবে তারা সবাই জনকল্যাণমুখী রাজনীতির ধারায় সম্পৃক্ত রয়েছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
দেশের ছাত্ররাজনীতিতে বিরাজমান লেজুড়বৃত্তির ধারা অতীতে এমন প্রকট ছিল না। আমাদের মনে রাখতে হবে, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মের আগেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল, জাসদ সৃষ্টির আগেই জাসদপন্থি ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল, সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের চাপেই ১৫, ৭ ও ৫ দলীয় জোট তিন জোটের রূপরেখা ঘোষণা করেছিল। আমাদের জনমত সৃষ্টি করতে হবে লেজুড়বৃত্তির দুর্বৃত্তায়িত ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে, ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয়। একই সঙ্গে তরুণদের, বিশেষত মেধাবী তরুণদের ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। সেই ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্রদের কল্যাণে, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে। সেই ছাত্ররাজনীতি হবে অন্যায়, অনাচারের আর বৈষ্যমের বিরুদ্ধে; সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে।
দেশের ছাত্ররাজনীতির আরেকটি লক্ষ্য হবে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব সৃষ্টি। তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ। বর্তমানে বিরাজমান কলুষিত ছাত্ররাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করাসহ শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। পদক্ষেপগুলো হবে, বর্তমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-এর বিধান অনুযায়ী লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা, একই বিধান অনুযায়ী লেজুড়বৃত্তির শিক্ষকরাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্রসংগঠনগুলোর টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি-ভর্তিবাণিজ্য-সিটবাণিজ্য কঠোরভাবে দমন করা, সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর সিট মেধা-যোগ্যতার ভিত্তিতে যথাযথনিয়মে বরাদ্দ করা, রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্যসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের সংস্কৃতি পরিবর্তন করা, রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়োগবাণিজ্য বন্ধ করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রসংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা, সব শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ইত্যাদি। উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে সুস্থতা ফিরে আসাসহ শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
পরিশেষে আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আজকের তরুণরাই আমাদের সেই স্বপ্নপূরণের কারিগর। তারাই আগামী দিনে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করবে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃত্ব দেবে। তাই, মেধা-মননে বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হওয়া একান্ত জরুরি। আর এজন্য প্রয়োজন ছাত্রদের রাজনীতিবিমুখতা কাটিয়ে তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়া। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কারিগররা নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার পাশাপাশি নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারবে এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বপরিসরে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে অনন্য উচ্চতায়। এদের নেতৃত্বেই আমাদের স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ ঘটবে; মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সৃষ্টি হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের সেই স্বপ্নের স্বদেশ।
দিলীপ কুমার সরকার : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
