বাইফোকাল লেন্স
যুদ্ধের মাঠেই ছিলেন না আওয়ামী লীগ নেতারা
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বছরের দু’মাস, মার্চ ও ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। মার্চে স্বাধীনতা এবং ডিসেম্বরে বিজয়ের মাস। বছরের অন্যান্য দিনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না বললেই চলে। স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাস এলেই যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা নিজেদের মতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করে। এসব বর্ণনায় নিজ দল ও নেতাদের নিয়ে যত কথা বলা হয়, সে তুলনায় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মোৎসর্গের কথা খুব কমই থাকে। এসব শুনলে মনে হয়, দলের নেতা-নেত্রীরাই যেন এ দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। এ কথা সত্য, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল; কিন্তু গত দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের যে বয়ান দিয়ে গেছে, তাতে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ একাই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে অন্য কোনো দল ও মতের মানুষের অংশগ্রহণই ছিল না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বায়ান্ন থেকে শুরু করে তিলে তিলে গড়ে ওঠা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতা সংগ্রামের এ বিপুল আয়োজন যেমন একদিন বা এক বছরে সম্ভব হয় না, তেমনি একটি দল বা একক ব্যক্তির একক অবদানেও এ দেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক অবদানের চূড়ান্ত রূপ। অথচ ঝড়-বৃষ্টি,কাদা-পানি মাড়িয়ে শত্রুর গোলাবারুদ মোকাবিলা করে যে যোদ্ধারা এ দেশ স্বাধীন করেছেন, তাদের কথা খুব কমই থাকে আওয়ামী লীগের বয়ানে। মাঠের যোদ্ধাদের নাম নেবে কী; প্রবাসী সরকারের যেসব নেতা মুক্তিযুদ্ধকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আওয়ামী বয়ানে তাদের নামও উচ্চারিত হয় না।
প্রবাসী সরকার ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে গঠিত সরকার। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা; তিনি তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকলেও তার নামেই প্রবাসী সরকারের নেতারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। এ কারণে পরবর্তীকালে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ এমন একটি ধারণা তৈরি করেছে, শেখ মুজিবই দেশ স্বাধীন করেছেন। আওয়ামী লীগের বয়ানের মূলহোতা শেখ হাসিনা, যে কোনো উপলক্ষ্যেই একটি কথাই বারবার বলতেন, তার বাবা শেখ মুজিবই স্বাধীনতা দিয়েছেন। ফলে প্রবাসী সরকারের কাণ্ডারিদের ভূমিকা চাপা পড়ে গেছে। এর জন্য শেখ মুজিব নিজেও কম দায়ী নন! ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর প্রবাসী সরকার নিয়ে কখনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তিনি কোনোদিনই জানতেও চাননি, এ নয় মাস প্রবাসী সরকারের নেতারা কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। শেখ মুজিবের শাসনামলে একবারের জন্যও তিনি ঐতিহাসিক মুজিবনগর সফর করেননি। এমনকি স্বাধীনতার পর যখন কলকাতা সফর করেছিলেন, তখনো প্রবাসী সরকারের সদর দপ্তর, কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের ঐতিহাসিক সেই বাড়িটিও দেখতে যাননি। শেখ মুজিবের এ ধরনের উদাসীনতা এবং অবহেলা এ ধারণাই দেয়, ঐতিহাসিক প্রয়োজনে প্রবাসী সরকার গঠন করা এবং তাদের কার্যকলাপ শেখ মুজিব অনুমোদন করেননি। অতঃপর ১৯৭২ সাল থেকেই প্রবাসী সরকারের কাণ্ডারিরা ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যান।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় জানতে ইচ্ছে করে, প্রবাসী সরকার বাদে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা-যুবনেতা, এমপিএ এবং এমএনএ কলকাতা পাড়ি দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী ছিল? কথিত আছে, তাদের অনেকের ভূমিকাই বিতর্কিত ছিল। আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বিশ্বাস করে ভাগ্যের ফেরে, লাখ লাখ অসহায় মানুষ যখন শরণার্থী শিবিরের পানি আর কাদায়, দুর্গন্ধে, খেয়ে না খেয়ে কষ্টের দিন পার করেছেন, ঠিক সে সময়ে নেতারা আগরতলা আর কলকাতায় ভোগবিলাসে জীবন কাটিয়েছেন। তাদের ভোগবিলাসিতার একটি ছোট্ট বর্ণনা পাই আমরা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহিদজায়া বেগম মুশতারী শফীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ বইয়ে। ড. শফীকে চট্টগ্রামের বাসা থেকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর, প্রায় আড়াই মাস দেশের অভ্যন্তরে দুর্বিষহ জীবন কাটিয়ে যেদিন সন্তানদের নিয়ে আগরতলা গিয়ে পৌঁছান, ঠিক পরদিনই মুশতারী শফী চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি তার বইয়ের ১৮৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন, ড্রইংরুমে বসতেই কুড়ি-পঁচিশ বছরের এক যুবক কেন এসেছেন জানতে চাইলে বেগম মুশতারী শফীর সঙ্গী এয়ার মাহমুদ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, ডা. মান্নান, এমএ আজিজ, মো. হান্নান অথবা চট্টগ্রামের যে কোনো একজন নেতাকে ডেকে দিতে বলেন। মুখ টিপে হেসে যুবকটি উত্তরে বলে, ‘ওনারা একটু বেসামাল আছেন।’ তবে হ্যাঁ, চট্টগ্রামের এম আর সিদ্দিকী সাহেব আছেন। তাকে খবর দিতে পারি। ছেলেটি দরজা খুলে ভেতর যাওয়ার সময় তিনি তাকিয়ে দেখেন, কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা অঘোরে ঘুমাচ্ছেন। সকাল তখন ১০টা বাজে। এম আর সিদ্দিকী আসার পর প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে বিদায় নিয়ে পথে নেমেই এয়ার মাহমুদ একটু ইতস্তত করে বললেন, ‘জানেন আপা, এরা সবাই ড্রিঙ্ক করে পড়েছিলেন।’ এয়ার মাহমুদের মুখে এ কথা শুনে মুশতারী শফীর বিস্ময় আর কাটে না। ‘এখানে ড্রিঙ্ক? এরাই না জাতীয় নেতা, যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।’ উল্লেখ্য, বেগম মুশতারী শফী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন নিয়মিত কথিকা পাঠক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের শিল্পী ছিলেন।
কলকাতার চিত্রও ভিন্ন ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় ধরে আওয়ামী লীগের এমপিএ, এমএনএ, নেতা ও আত্মীয়-স্বজন বেশ আরাম-আয়েশেই কাটিয়েছেন কলকাতায়। দিন যতই গড়িয়েছে, তাদের অর্থ লুটপাটের কথা ততই প্রকাশ পেয়েছে। ২৫ মার্চের পর, দেশত্যাগ করার সময় বিভিন্ন জেলার ডিসি ও রাজনৈতিক নেতারা ট্রেজারিগুলো উজাড় করে অর্থ ও সোনাদানা নিয়েই পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতে। শুধু বগুড়ার তৎকালীন স্টেট ব্যাংক থেকেই বেশ কয়েক কোটি টাকা লুট হয়েছিল। এসব লুটের অর্থের কানাকড়িও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রবাসী সরকারের কাছে হস্তান্তর করেনি। প্রবাসী সরকারের স্টাফ অফিসার এবং হাতেগোনা যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে প্রবাসী সরকারের সদর দপ্তরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, তাদের লেখা বইয়ে আওয়ামী লীগের এসব নেতার অর্থ লোপাটের বর্ণনা পাওয়া যায়, ’৮ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়িতে সারাক্ষণ ‘জয় বাংলা’র লোকের ভিড় লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগের এমপি, নেতাকর্মী, আত্মীয়স্বজন, আমত্য, চামচা সবার জন্য এ বাড়িটি ছিল উন্মুক্ত। দিনের বেলায় বিচরণ তো ছিলই, এমনকি নিশি যাপনেও কোনো কার্পণ্য? ছিল না। অভ্যাগতদের সবার হাতে দেখা যেত একটা নতুন ব্রিফকেস কিংবা ছোট অ্যাটাচি; কোনো কোনো নেতার কাঁধে ঝোলানো থাকত কাপড়ের ব্যাগ। আহার, নিদ্রা, এমনকি প্রাকৃতিক কর্মসম্পাদনের সময়ও তারা ব্যাগ কাছছাড়া করতেন না’। তবে, যে কয়জন আমলা দেশত্যাগের সময় ট্রেজারি থেকে অর্থ নিয়ে গিয়েছিলেন, তারা সে অর্থ প্রবাসী সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। তৌফিক ইমাম ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি রাঙামাটির ডিসি ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা তহবিলের প্রায় দুই কোটি টাকা তৌফিক ইমাম প্রবাসী সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের বেশির ভাগই পরিবার-পরিজন নিয়ে কলকাতায় বেশ আয়েশি জীবনযাপন করেছেন। তাদের বসবাস ছিল অভিজাত এলাকাগুলোতে। সন্ধ্যা হলেই অধিকাংশ সময়ে তারা ব্যস্ত থাকতেন পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত হোটেল, রেস্তোরাঁয় ও নাইট ক্লাবে। বেশুমার খরচের জন্য তারা ‘জয় বাংলা’র লোক বলে পরিচিত ছিলেন। হোটেল গ্র্যান্ড, প্রিন্সেস, ম্যাগস, ট্রিংকাস, ব্লু ফক্স, মলিন রো, হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি অভিজাত হোটেল, সুরিখানা ও নাইটক্লাবগুলো ‘জয় বাংলা’র লোকের জমজমাট আসর বসত। তখন কলকাতায় ‘জয় বাংলা’র লোক মানেই বাড়তি খাতির। বয়-বাবুর্চিরাও তাদের আগমনে উপরি বকশিশ পাওয়ার আশায় ভীষণ খুশি হতেন। খুব জানতে ইচ্ছে করে, কলকাতার অভিজাত নাইটক্লাবে বসে মদের গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়ে, হাঁটু সমান কাদা পানিতে প্রায় ডুবন্ত মুক্তিযুদ্ধের শিবিরগুলোতে প্রশিক্ষণরত হাজার হাজার তরুণের কথা তাদের একবারও কি মনে পড়ত? মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের দরদ থাকবে কী করে? কী করে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কষ্ট উপলব্ধি করবেন? কারণ, যুদ্ধের মাঠেই তো ছিলেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। একবার কলকাতায় এক সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লে কলকাতার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে, যা সে সময় প্রবাসী সরকারের জন্য ভীষণ লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও লেখক আহমেদ ছফা এ ঘটনাটিকে তার কলমে এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘যে সকল মানুষকে দেশে থাকতে শ্রদ্ধা করতাম, কলকাতায় অনেকের আচরণ দেখে সরল বাংলায় যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়-তাই হতে হচ্ছে।’ রাজনৈতিক নেতাদের ভোগবিলাস ও বেহিসেবি চালচলন নিয়ে তিনি তার অলাতচক্র উপন্যাসের ৮১ পৃষ্ঠায় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, ‘কলকাতা এলে মাথায় খুন চেপে বসে। ইচ্ছে জাগে এ ফর্সা কাপড় পরা তথাকথিত নেতাদের সবকটাকে বলি, এ্যায়াসা দিন নেহি রয়েগা। একদিন আমরা দেশে ফিরে যাব। কলকাতায় নরম বিছানায় ঘুমিয়ে পোলাও-কোর্মা খাওয়ার মজা তখন ভালো করে দেখিয়ে দেব।’
মুক্তিযুদ্ধকালে পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান উদ্বাস্তু শিবিরে আওয়ামী লীগ নেতাদের অপকর্মের অনেক ফুটেজ ও ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেন, যা দিয়ে তিনি ডকুমেন্টারি বানাতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়াও কলকাতায় নেতাদের দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা, যৌন কেলেঙ্কারি, ভোগবিলাসসহ বিভিন্নমুখী অপকর্মের প্রামাণ্য দলিল ছিল তার কাছে, ছিল সচিত্র দৃশ্যও। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই ডকুমেন্ট ও ফিল্মগুলো সেখানেই চুরি হয়ে যায়। তিনি তখন কলকাতার বিশিষ্ট কবি ও লেখক মৈত্রেয়ী দেবীর স্কুল বাড়ির শিবিরে থাকতেন। জহির রায়হানের ধারণকৃত এসব সচিত্র দলিল ফাঁস হয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের সংকটময় সময়ে আওয়ামী লীগের কথিত নেতাদের আসল রূপ উন্মোচন হয়ে যাবে বলে এ চুরি তারাই করিয়েছেন বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ চুরি নিয়ে আশ্রয়দাতা স্বয়ং মৈত্রেয়ী দেবীও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তার লেখা ‘এত রক্ত কেন?’ বইয়ের ৮৬ পৃষ্ঠায় তার ক্ষোভ ও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘ফিল্মটাই বা চুরি করল কে এবং কী উদ্দেশ্যে? এ নিয়ে হইচই পড়ে গেল। আমি বললুম,-তোমরা ঘর খোলা রেখে কে যে কখন যাও-আমি তা টেরও পাই না। এখন থেকে আমার কাছে চাবি দিয়ে যাবে। এরপর একদিন সন্ধ্যাবেলা একটি রোগা কালো মতো ছেলে অত্যন্ত মুখচোরা, এসে আমার কাছে চাবি চাইল। আমি বললুম, তোমাকে আমি চিনি না। তোমার কথাও কোনোদিন শুনিনি। জহির রায়হানের ফিল্ম চুরি গেছে। তোমাকে আমি চাবি দেব না।’
এখানে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। মুক্তিযুদ্ধের সত্যানুসন্ধানে এসব কাহিনি যদি বেরিয়ে আসে, তা আমরা অস্বীকার করি কী করে? এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোও মুক্তিযুদ্ধকালীনেরই অংশ, যা আমাদের অনেকেই জানি না। শহিদজায়া মুশতারী শফীর লেখা বইয়ে উল্লেখিত একটি উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চরমপত্র’র প্রখ্যাত এম আর মুকুল প্রবাসী সরকারের মন্ত্রীদের সমপরিমাণ বেতন বৃদ্ধি না করায় এক সপ্তাহের জন্য চরমপত্র প্রচার বন্ধ রেখেছিলেন। প্রবাসী সরকারের পরপর দুটো বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি যেহেতু খুবই জনপ্রিয়, তাই সরকার তার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক আবুল কাশেম সন্দীপ ক্ষোভ প্রকাশ করে সেদিন মুশতারী শফীকে বলেছিলেন, ‘আপা, আমরা যে খেয়ে না খেয়ে, সাত দিন গোসল না-করে, মশার কামড় খেয়ে, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারে কাজ করছি, তারা কী এমন করবেন? দেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হবেন? অথচ দেখবেন, এরাই একদিন হবেন দেশের প্রথম শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক নাগরিক। সুযোগের শীর্ষে অবস্থান করবেন। ‘(বেগম মুশতারী শফী, স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন, পৃষ্ঠা ৩৩২)।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
