Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

নিউইয়র্কের চিঠি

ট্রাম্পযুগে মিডিয়া ও মতপ্রকাশের আমেরিকান স্টাইল

Icon

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ট্রাম্পযুগে মিডিয়া ও মতপ্রকাশের আমেরিকান স্টাইল

আমেরিকায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার কোনো আইন নেই। এদেশে গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে বিবেচিত ‘ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন’ বা ‘মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা’, ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ’ বা ‘বাকস্বাধীনতা’, ‘ফ্রিডম অফ প্রেস’ বা ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করা হয়েছে।

২৩৪ বছর আগে ১৭৯১ সালে গৃহীত আমেরিকান সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, এসব স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন কোনো আইন কংগ্রেস প্রণয়ন করবে না। শুধু তাই নয়, এ সংশোধনীর আওতায় প্রণীত আইনে তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহকারী বা তথ্যের উৎস প্রকাশ না করার বিশেষ অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে।

তা সত্ত্বেও সংবাদপত্র বা বর্তমান যুগে আরও ব্যাপক অর্থে গণমাধ্যম অথবা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা বা তাদের ‘কাট টু সাইজ’ করার কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন, যিনি বা যারা আইন প্রয়োগ করেন তাদের ওপর, যা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করছেন। প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিনি হোয়াইট হাউস প্রেস কোর-এর দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা রীতিনীতিতে কাঁপন ধরাতে কালক্ষেপণ করেননি।

তিনি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংবাদপ্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) হোয়াইট হাউজে প্রবেশ এবং তাকে বহনকারী বিমান ‘এয়ারফোর্স ওয়ানে’ আরোহণ নিষিদ্ধ করেছেন। এরপর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রেস অফিস হোয়াইট হাউজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টারও ত্রুটি করেনি।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের অপরাধ কী ছিল? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফ্লোরিডার পশ্চিমের সামুদ্রিক জলসীমাকে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এর প্রচলিত নাম ‘গালফ অফ মেক্সিকো’ বা ‘মেক্সিকো উপসাগরের’ পরিবর্তে ‘গালফ অফ আমেরিকা’ নামকরণ করে যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, এপি তাদের নিজস্ব স্টাইলে সমালোচনা করে এটিকে উল্লেখ করেছিল ‘গালফ অফ হোয়াটেভার’ বা ‘যা হোক না কেন উপসাগর’। এতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি এবং এপি ইচ্ছাকৃতভাবে এটিকে বিকৃত করেছে ধারণায় হোয়াইট হাউজ সংবাদ সংস্থাটিকে শাস্তি দিয়েছে।

শুধু হোয়াইট হাউজ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনও তাদের অপছন্দনীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠানের প্রবেশাধিকার খর্ব করেছে ট্রাম্পের পথ অনুসরণ করে। পেন্টাগন ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং ‘সিএনএনে’র মতো প্রথম সারির সংবাদপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অধিক বন্ধুসুলভ ‘নিউজম্যাক্স’কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তনে গণমাধ্যম শিল্প নড়েচড়ে উঠেছে। তারা বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকান সংবিধানের প্রথম সংশোধনীকে দুর্বল করছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এবং চিফ অফ স্টাফ সুজি ওয়াইলসসহ ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

হোয়াইট হাউজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইউজিন ড্যানিয়েলস এক জোরালো বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউজের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে মুক্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলার একটি উদ্যোগ ছাড়া আর কিছু নয়।’ যৌথভাবে প্রতিবাদ করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও ব্লুমবার্গ নিউজ। তারা বলেছে, ‘হোয়াইট হাউজের পদক্ষেপ নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ সাংবাদিকদের অধিকার সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ বলেছে : ‘কোনো রাজনীতিবিদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না যে, কোন কোন সাংবাদিক তার সংবাদ কাভার করবেন-কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টির চেষ্টা চালান।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বৈরী আচরণ করে আসছেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউজে তার ব্রিফিং থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতাকে বের করে দিয়েছেন। কোনো কোনো সংবাদদাতার সঙ্গে রীতিমতো অসদাচরণ করেছেন। এপির দৃঢ় যুক্তি হচ্ছে, তাদের ‘গালফ অফ হোয়াটেভার’ উল্লেখ করতে দেওয়া উচিত, কারণ তারা এটাকেই যৌক্তিক বিবেচনা করেছেন।

এক্ষেত্রে প্রশ্ন এটা নয় যে, ট্রাম্প তার গণমাধ্যমবিরোধী মানসিকতায় এটাকে যৌক্তিক মনে করেন কিনা, বরং তিনি গণমাধ্যমকে কতটা সহ্য করতে পারেন সেটিই বড় প্রশ্ন। যদিও হোয়াইট হাউজ সংবাদদাতাদের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্রিফিং কাভার করা বেশ কঠিন, পদে পদে তাদের খেয়াল রাখতে হয় প্রেসিডেন্টের কথাগুলো সামান্য এদিক-সেদিক হলে তিনি কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন, তা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে তাকে কাভার করা সহজ।

কারণ, তিনি খোলা গ্রন্থের মতো। তার মনে কী আছে, তা তিনি প্রায় প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেন। তার মাঝে কোনো রাখঢাকা নেই। সেজন্য বিভিন্ন জরিপ ফলাফলে দেখা যায়, অধিকসংখ্যক আমেরিকান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে বেশি বিশ্বাস করে। অতএব, ট্রাম্প সাংবাদিকদের ওপর খড়গ্হস্ত হয়ে তার অপছন্দনীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো দ্বিধা করেন না।

ট্রাম্প যা করছেন তা তার আচরণগত বৈশিষ্ট্য, তাতে আমেরিকান সংবিধানস্বীকৃত বাক-ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সামগ্রিকভাবে খর্ব হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে আমার প্রথম আগমন ১৯৮৮ সালে। এ দেশের প্রথম সারির উচ্চতর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন পড়াশোনা করার সুযোগ হয়েছিল আমার। আমি পাকিস্তান আমলে আইয়ুব ও ইয়াহিয়া খান এবং বাংলাদেশে জেনারেল জিয়া ও এরশাদের যুগের প্রেস সেন্সরশিপ দেখেছি।

সেজন্য আমার প্রথম আমেরিকান অভিজ্ঞতায় এদেশে আচরিত বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার আওতা আমার আবদ্ধ মস্তিষ্কে তোলপাড় সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট ছিল। ওই সময়েই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সালমান রুশদির বিতর্কিত গ্রন্থ ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হয়। সারা বিশ্বের মুসলমানরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বহু দেশে গ্রন্থটি নিষিদ্ধ করা হয়। ইমাম খোমেনি রুশদির মাথার মূল্য ঘোষণা করেন এক মিলিয়ন ডলার। আমেরিকার সর্বত্র গ্রন্থটি প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছিল।

চলমান এ বিষয়টির ওপর আমাদের জন্য এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ইউসি বার্কেলির এক বিশেষজ্ঞ শিক্ষক আসেন এবং মোটামুটি স্পষ্ট করেন যে, বইটি নিয়ে যদি বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টির পরিস্থিতিও হয়, তাহলেও কোনো আইনের আওতায় এর প্রকাশনা ও বিক্রি বন্ধ করার জন্য আমেরিকায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। প্রশাসন বড়জোর প্রকাশনা বা বিপণন সংস্থাকে অনুরোধ করতে পারে বইটি বিপণন না করতে।

সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে এ স্বাধীনতার স্বীকৃতি এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, মতপ্রকাশের জন্য মানুষের গায়ে হাত তোলা ছাড়া যার যা খুশি তাই করতে পারে এবং এজন্য আদালতের দরজা খটখটালেও কারও বিরুদ্ধে প্রায় কিছুই করা যায় না। প্রথম সংশোধনীর বক্তব্য : ‘Congress shall make no law respecting an establishment of religion. or prohibiting the free exercise thereof, or abridging the freedom of speech, or the press.’ জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননা, সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, আপত্তিকর কার্টুন আঁকা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করার কারণে হুজ্জত ও খুন-জখমের মতো ঘটনা ঘটতে থাকলেও যারা এসব করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রশাসন হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের দ্বারা অন্য কোনোভাবে আইন লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা তা যাচাই করে তাদের গ্রেফতার করে আদালতের মুখোমুখি করতে পারে।

যেমন, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে টেরি জোনস নামে ফ্লোরিডার এক মুসলিমবিদ্বেষী যাজক ৯/১১-এ টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ফলে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিহত প্রত্যেকের জন্য একটি করে মোট ২,৯৯৮টি কুরআন জ্বালানোর ঘোষণা দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। মুসলিম দেশগুলোতে এর প্রতিক্রিয়া ছিল ভয়াবহ। প্রতিবাদী মানুষকে ঠেকাতে অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়েছে।

কোনো কোনো দেশে বেশকিছু হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু আমেরিকান সংবিধান আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের হাত-পা এমনভাবে বেঁধে দিয়েছে যে, কুরআন পুড়িয়ে যাজকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অতএব, যাজক তার গাড়ির পেছনে একটি ট্রেলারে ২,৯৯৮টি কুরআন কেরোসিনে ভিজিয়ে রওয়ানা হন তার নির্ধারিত গন্তব্যে, যেখানে তিনি কুরআনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জ্বালাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

পথিমধ্যে পুলিশ যাজকের পথরোধ করে তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার গ্রেফতার কুরআন জ্বালিয়ে মুসলিম বিশ্বে তুলকালাম কাণ্ড সৃষ্টি করা অথবা একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ জ্বালানোর চেষ্টার কারণে নয়; বরং জ্বালানি তেল বা কোনো দাহ্য বস্তু পরিবহণের নিয়মকানুন সম্পর্কিত আমেরিকায় যে আইন রয়েছে, তা লঙ্ঘন করার কারণে এবং দর্শনীয়ভাবে যাজক তার কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র ঝুলিয়ে রেখে আইন ভঙ্গ করেছিলেন বলে।

‘ইনোসেন্স অফ মুসলিমস’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন নাকুলা বাসলে নাকুলা ওরফে স্যাম বেসিল নামে এক আমেরিকান এবং ২০১২ সালের কোনো এক সময়ে চলচ্চিত্রটির ট্রেলার ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হয় দু’বছর পর এবং যথারীতি প্রতিবাদ ওঠে। মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতদের তলব করে চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করাসহ নির্মাতার বিচার দাবি করা হতে থাকে। স্যাম বেসিল আত্মগোপন করে-আইনের হাত থেকে বাঁচতে নয়, গুপ্তঘাতকের হাতে প্রাণ যেতে পারে এই ভয়ে। কিন্তু পুলিশ লোকটিকে গ্রেফতার করে।

মহানবির (সা.) চরিত্রের ওপর কলঙ্ক আরোপ বা ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে নয়, বরং চলচ্চিত্রটির মূল অভিনেত্রী আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, স্যাম বেসিল তাকে যে অর্থ প্রদান করতে চেয়েছিলেন, তা তাকে পরিশোধ করা হয়নি এবং চলচ্চিত্রের যে কাহিনি তাকে বলা হয়েছিল, চলচ্চিত্রায়ণের কোনো পর্যায়েই তা রক্ষা না করে তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

আমেরিকান প্রশাসন অত্যন্ত নমনীয়ভাবে ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়, ‘ইনোসেন্স অফ মুসলিমসে’র ট্রেলার আপলোড করার ক্ষেত্রে আইনের কোনো লঙ্ঘন করেছে কিনা। ইউটিউব জানায়, তারা আইন ও তাদের গাইডলাইনের মধ্যেই আছে। তাদের মতে, চলচ্চিত্রটির মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বিষয় থাকলেও মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে কিছু নেই। সেজন্য এটি ‘হেট স্পিচের’ মধ্যে পড়ে না।

‘ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন’, ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ’ এবং ‘ফ্রিডম অফ প্রেস’ নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রচণ্ড মাথাব্যথা। এ স্বাধীনতার আবার হাজার রকম ব্যাখ্যা এবং রকমফের আছে। আমি এখন যে দেশটিতে বসবাস করছি, সেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা দিয়ে নারীদের প্যান্টি, ব্রা, পুরুষদের শার্ট, প্যান্ট বানিয়ে পরিধান করলে কেউ এটিকে আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করেন না, জাতীয় পতাকার অবমাননা বা স্বাধীনতার চেতনায় আঘাত হানার ঘৃণ্য চক্রান্তের অভিযোগে কারও অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।

যত্রতত্র রাতদিন জাতীয় পতাকা উড্ডীন থাকলেও পতাকা আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা হয় না। ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদের অনেক ধরনের প্রকাশের মধ্যে আমেরিকান জাতীয় পতাকা পোড়ানো ছিল অন্যতম। জাতীয় পতাকার অবমাননা ঠেকাতে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ১৯৬৮ সালে প্রথমবারের মতো ফেডারেল ফ্ল্যাগ প্রটেকশন অ্যাক্ট পাশ করে এবং এর আলোকে ৪৮টি স্টেট অভিন্ন আইন পাশ করে পতাকার অবমাননা প্রতিরোধ করার জন্য। কিন্তু ১৯৮৯ সালে ইউএস সুপ্রিমকোর্ট এ আইনকে নাকচ করে দেন।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, পতাকা পোড়ানো আমেরিকান সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সঙ্গে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। এরপর আরও ছয় দফা হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ফ্ল্যাগ প্রটেকশন অ্যাক্ট পাশ করলেও সিনেট তা অনুমোদন করেনি। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের এক পার্কে কিছু তরুণ আমেরিকান পতাকা পোড়ানোর কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা বলে, ‘আমরা অত্যাচার ও গণহত্যার প্রতীক আমেরিকান পতাকা ভস্মীভূত করব।’ তাদের পালটা গ্রুপও সেখানে সমবেত হয়। পুলিশ আসে। একটি পতাকা পোড়ানো হয়।

পুলিশ তাতে বাধা দেয়নি। কারণ তারা দুপক্ষের সম্ভাব্য সংঘর্ষ ঠেকাতে এসেছিল, পতাকা পোড়ানোর কাজে বাধা দিতে নয়। একই বছরের প্রথমদিকে নর্থ ক্যারোলিনার ছোট এক সিটির মহল্লায় দিগম্বর হয়ে এর-ওর বাড়ির সামনে ছোটাছুটি করছিলেন এক ব্যক্তি। লোকজন অনেকে ভীত, অনেকে বিব্রত। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দিগম্বরের সঙ্গে কথা বলে, মহল্লাবাসীর সঙ্গেও কথা বলে এবং লোকজনকে আশ্বস্ত করে, দিগম্বর লোকটিকে গ্রেফতার করার কারণ ঘটেনি। তিনি তো কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : সিনিয়র সাংবাদিক ও অনুবাদক

ট্রাম্প

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম