Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

হালফিল বয়ান

নেপালে রাজতন্ত্রমুখী রাজনীতি, বাংলাদেশের শিক্ষা

Icon

ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নেপালে রাজতন্ত্রমুখী রাজনীতি, বাংলাদেশের শিক্ষা

রাজতন্ত্র ফিরে পেতে বিক্ষোভে নেমেছেন নেপালের নাগরিকরা। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাস মাঝে-মধ্যে পশ্চাৎমুখী হয়। সামনে না এগিয়ে পেছনের দিকে চলে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের নিকট প্রতিবেশী, হিমালয়কন্যা নেপালে ঘটছে তেমনি উলটা-গতির আবর্ত। গণতন্ত্র থেকে দেশটি আবার রাজতন্ত্রে ফিরে যেতে চাচ্ছে। নেপালি জনতার একটি বড় অংশ গণতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। নেপালে গণতন্ত্রের বদলে রাজতন্ত্রমুখী রাজনীতি থেকে বাংলাদেশের এ শিক্ষা নেওয়ার দরকার আছে, ভালো পদ্ধতি ও ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ না করলে মানুষ পুরোনো খারাপ ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাইতে পারে। বিশেষত, বাংলাদেশ যখন একনায়কতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরশাসন হটিয়ে বৈষম্যমুক্ত-অংশগ্রহণমূলক নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে যাচ্ছে এবং সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে নানা উথাল-পাতাল, দোলাচল পেরিয়ে চলেছে, তখন নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে কোনো ভুল পদক্ষেপ মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস-সমর্থনের সংকট তৈরি করে ‘আগেই ভালো ছিল’ ধরনের মনোভাব তৈরি হতে পারে। গণতান্ত্রিক নেপালে তেমনই সংকট তৈরি হওয়ায় মানুষ আবারও রাজতন্ত্রে ফিরে যেতে মাঠে নেমেছে।

নেপালের রাজতন্ত্রমুখী আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ করতে হলে সেখানকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকেও। একদা বিশ্বের একমাত্র সাংবিধানিক হিন্দুরাষ্ট্র নেপাল প্রায় দুই দশক আগে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র ত্যাগ করে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হয়েছিল; কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল, তা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পুরোপুরি সফল হয়নি। ফলে সেখানে জনমনে ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছে, যা ক্রমে ক্রমে গণতন্ত্রের বদলে আবার রাজতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোর ব্যাপক আন্দোলনের আগেও রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে নেপালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু সেসব আন্দোলন জনসমর্থন পায়নি। কিন্তু দুই দশকের গণতান্ত্রিক শাসনে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধীরগতি দেশটির মানুষের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা কমছে এবং প্রজাতন্ত্র নিয়ে আগ্রহ কমচ্ছে। মানুষ আবারও পুরোনো রাজতন্ত্রের সমর্থনের জন্য স্লোগান দিচ্ছে। গণতন্ত্রের বদলে রাজতন্ত্রের সমর্থনে সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে মানুষের অংশগ্রহণও বাড়ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নেপালের পার্লামেন্টে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি সংঘাতের প্রেক্ষাপটে। তখন দেশটিতে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি শান্তিচুক্তি হয়, যে গৃহযুদ্ধে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। বিশেষত মাওবাদী কমিউনিস্ট ও গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল রাজতন্ত্রের অবসান ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। মূলত সেই জনদাবির ভিত্তিতে রচিত শান্তিচুক্তির ধারাবাহিকতায় রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল নেপালে।

কোনো কারণ ছাড়া নেপালের মানুষ গণতন্ত্র ছেড়ে পুরোনো রাজতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার পক্ষে আন্দোলন করছে, ঘটনাটি এমন নয়। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষে যেসব যুক্তি হাজির করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো-

ক. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা ও দুর্নীতির বিস্তার : ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে নেপাল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হলেও নেপালের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা, দলাদলি, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং ব্যাপক দুর্নীতি জনমনে আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, রাজতন্ত্রকালীন শাসনে এ ধরনের অরাজকতা কম ছিল।

খ. জাতীয় ঐক্য ও পরিচয়ের সংকট : রাজতন্ত্র নেপালের জাতীয় ঐক্য, হিন্দু সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার হিসাবে কাজ করত বলে আন্দোলনকারীরা মনে করেন। গণতন্ত্রের অধীনে সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হলেও অনেক নাগরিক এখন মনে করছেন, রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা জাতীয় সংহতির প্রতীক হিসাবে কাজ করতে পারে।

গ. রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা : মাওবাদী এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন, ক্ষমতা লিপ্সার কারণে রাজনৈতিক দল/নেতৃত্ব ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব ও জনবিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের একাংশ মনে করেন, এসব দল জনস্বার্থের রাজনীতি নয়, বরং ক্ষমতার ভাগাভাগি করছে।

ঘ. রাজপরিবারের প্রতি আবেগ ও সম্মান : প্রয়াত রাজা বীরেন্দ্র ছিলেন একজন জনপ্রিয় ও সুশাসক হিসাবে পরিচিত। ২০০১ সালের রাজপ্রাসাদ হত্যাকাণ্ড এবং পরে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি অনেকের মনে রাজতন্ত্রের প্রতি সমবেদনা তৈরি করেছে। বর্তমানে রাজা জ্ঞানেন্দ্র জনগণের সেই আবেগে ভর করে আবার জনসমর্থন ফিরে পাচ্ছেন।

ঙ. অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও বৈদেশিক হস্তক্ষেপের ভয় : গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরও নেপালে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব কমেনি বরং বৈদেশিক প্রভাব (বিশেষত ভারত ও চীনের প্রভাব) বেড়েছে। তাই, অনেকেই বরং পুরোনো রাজতন্ত্রকেই একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের সম্ভাবনা হিসাবে দেখছেন।

নেপালিরা হুবহু অতীতের রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বদলে কিছুটা পরিবর্তিত ব্যবস্থার রূপরেখাও দিয়েছেন। তাদের দাবির বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-১. সাংবিধানিক রাজতন্ত্র; ২. সম্পূর্ণ স্বৈরতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের বদলে গণতন্ত্রের সঙ্গে সমন্বয়; ৩. ধর্মীয় ও ঐতিহ্যিক পরিচয়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা; ৪. দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন; ৫. আর্থিক স্বচ্ছতা; ৬. মৌলিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রবর্তন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতান্ত্রিক সরকারের নানা দুর্বলতার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষের ধারাবাহিকতায় নেপালে রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলন শক্তিশালী রূপলাভ করেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের জেরে বহু মানুষ হতাহত হওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অংশ। আন্দোলনকারীরা সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ফেরানোর দাবিতে একাধিক সরকারি বাসভবন ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগও করে। সেই সঙ্গে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (ইউনিফায়েড মার্ক্সিট লেনিনিস্ট) প্রধান তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং বিরোধী দলনেতা কমরেড প্রচণ্ডের বিরুদ্ধেও স্লোগান উঠেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কার্ফ্যু জারি ও সেনা টহল চালাতে হয় কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক ভিডিওবার্তায় দেশের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশবাসীকে তার পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন জ্ঞানেন্দ্র। এতে তার প্রতি অভূতপূর্ব সমর্থনের ঢল নামে। রব ওঠে ‘রাজতন্ত্র ও হিন্দুরাষ্ট্র’-র প্রত্যাবর্তনেরও। তারপর থেকে আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায় রাজতন্ত্রের দাবির দিকে। মানুষ স্লোগান দেয়. ‘এসো রাজা, জাতিকে বাঁচাও’।

নেপালের রাজতন্ত্র ছিল খুবই প্রাচীন; রয়েছে এর দীর্ঘ ঐতিহ্যও। এক রাজকীয় অভ্যুত্থানে রাজা বীরেন্দ্র সপরিবারে নিহত হলে ২০০১ সালে জ্ঞানেন্দ্র রাজা হন। কিন্তু একনায়কতান্ত্রিক কার্যকলাপের জন্য ২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। এর পরে ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং এর বছর সাতেকের মধ্যেই নেপালে গৃহীত হয় নতুন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধান। ২০০৮ সালে নেপাল যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রে পরিণত হওয়ার পরবর্তী প্রায় দুদশকে দেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলো জোট বেঁধে দেশ শাসন করেছে বটে, তবে মানুষ যে স্থায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশা করেছিল, তা নেতারা দিতে পারেননি। বস্তুত, গত সতেরো বছরে সে দেশে ১৪টি সরকার ক্ষমতায় আসা-যাওয়া করেছে। এ সময়ে অর্থনীতির কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। বরং মূল্যস্ফীতি জনসাধারণের জীবন আরও দুঃসহ করে তুলেছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে বাধ্য হচ্ছেন বিদেশে পাড়ি দিতে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যকলাপের ফলে ফের জনসাধারণের মনে সরকারবিরোধী আন্দোলন সূচিত হয়, যার ফায়দা নিচ্ছে রাজতন্ত্রের প্রতি অনুগত নেতৃত্ব।

নেপালের রাজতন্ত্রপন্থি রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির (আরপিপি) চেয়ারপারসন রাজেন্দ্র লিংডেন মনে করেন, রাজা নেপালিদের জাতীয় পরিচয় এবং গর্বের সঙ্গে যুক্ত। তার মতে, ‘শাসন করার ইনস্টিটিউশন হিসাবে আমরা রাজতন্ত্র চাই না। তবে দেশের অভিভাবক হিসাবে আমরা রাজতন্ত্র চাই, যেটি দেশের স্বার্থরক্ষা করবে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিহত করবে।’ যদিও আরপিপি ২০১৭ সালের নির্বাচনে পার্লামেন্টে আসন পেয়েছিল মাত্র একটি। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে থেকে সর্বশেষ ২০২২ সালের নির্বাচনে রাজতন্ত্র ও হিন্দুপন্থি কর্মসূচি নিয়ে দলটি ১৪টি আসন পায়। আরপিপি বর্তমানে নেপালের পঞ্চম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এ দল ও তাদের সহযোগীরা মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করছে, নেপাল অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়ছে। মানুষের চাকরি নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ-সুবিধাও সীমিত। এ কারণেই আবার রাজাকে ফেরানো দরকার।

জনগণ যে এসব কথা বিশ্বাস করছে তার প্রমাণ হলো, গণবিক্ষোভে ক্ষমতাহারা রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে রাজধানী কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার মানুষ অভ্যর্থনা জানিয়ে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি উত্থাপন করেছে। মানুষ মনে করছে, রাজতন্ত্র অবসানের প্রক্রিয়াকে রাজা সহযোগিতা করেছিলেন এবং জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ছিলেন তিনি। তখন তিনি শান্তি বজায় রাখতে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। জনগণের প্রয়োজনে তিনি আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি মানুষের সঙ্গে আছেন।

যদিও রাজতন্ত্র একটি পুরোনো ও স্বৈরতান্ত্রিক ধারণা, তথাপি প্রবাস থেকে রাজা জ্ঞানেন্দ্রর ফিরে আসা ও তার প্রতি ক্রমবর্ধমান জনসমর্থন উপেক্ষা করার বিষয় নয়। বরং রাজতন্ত্রপন্থি আন্দোলন নেপালের বর্তমান পটভূমিতে প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত জ্ঞানেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ নেপালের বিভক্ত রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন তেমন কোনো কথা বলেননি। তবে গত কয়েক মাসে তিনি কয়েকবার জনসমক্ষে এসেছেন। এ সময় তিনি প্রধানত বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন। সঙ্গে তার সমর্থকরা ছিলেন। তিনি হিন্দুত্ব ও রাজতন্ত্রের পক্ষে নিজের স্পষ্ট অবস্থানেরও জানান দিয়েছেন। এমনকি, গত ফেব্রুয়ারিতে নেপালের কয়েকটি জেলায় সফর শুরুর প্রাক্কালে এক বিবৃতিতে জ্ঞানেন্দ্র বলেছিলেন, ‘এখন সময় এসেছে। আমরা যদি আমাদের জাতিকে বাঁচাতে চাই, জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে চাই, এখনই কাজ শুরু করতে হবে। আমি দেশবাসীকে নেপালের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি সমর্থন করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাধারণ নেপালির মধ্যে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে অসন্তোষ বাড়ছে। এটাকে সুযোগ হিসাবে দেখছে রাজতন্ত্রের অনুগতরা। এ মওকায় তারা নিজেদের দাবি ও জনহতাশাকে এক করতে চাইছেন। বিশেষ করে বিশ্বের দেশে দেশে ডানপন্থি রক্ষণশীল দলগুলো সফল হওয়ার দৃষ্টান্তে তারা উজ্জীবিত হচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, রাজতন্ত্রকামীরা আগামী দিনে হিংসার পথ অবলম্বন করতে পারেন এবং জনসমর্থন ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নেপালের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের হারানো ক্ষমতা আবার ফিরেও পেতে পারেন।

নেপালে রাজতন্ত্রে ফিরে আসার পরিস্থিতি মূলত বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া থেকে সৃষ্টি হয়েছে, এতে গণতান্ত্রিক শাসনের অনৈক্য ও দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। যদিও এটি একটি সংবেদনশীল ও বিতর্কিত বিষয়, তবে এর উত্থান গণতন্ত্রের ব্যর্থতা, জনগণের হতাশা ও সুশাসনের অভাব থেকে উৎসারিত। নেপাল যদি সত্যি সত্যিই আবার হিন্দুরাষ্ট্র ও রাজতন্ত্রে ফিরে আসে, তাহলে দেশটি পেছনে হাঁটতে শুরু করবে এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কর্তৃত্ববাদী-উগ্র ধারাকে পুষ্ট করবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে নেপালের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে গণতন্ত্রের ব্যর্থতা, নেতৃত্বের স্বার্থবাদী দ্বন্দ্ব ও শাসন সম্পর্কে জনগণের হতাশা কোনো কারণে বাড়তে না পারে এবং এসবের সুযোগে পতিত স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ বা পরিবারতন্ত্র যেন আবার ফিরে আসার সুযোগ না পায়।

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ : চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নেপাল রাজতন্ত্র

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম