সুদানে যুদ্ধের দুই বছর পরও নিশ্চুপ বিশ্ব
ড. টেডরস আধানম ঘেব্রেয়েসুস
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সুদানে আজ থেকে দুই বছর আগে যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা যে দীর্ঘ সময় ধরে চলবে, এমনটা অনেকেই ভাবেননি। ক্ষমতালাভের উদ্দেশ্যে যে ভয়াবহ সহিংস লড়াই চলছে, তাতে যেসব সংকট দেশটিকে গ্রাস করেছে, তার মধ্যে মানবিক সংকট সবচেয়ে বেশি। দেশটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ঘটেছে ব্যাপক স্থানচ্যুতি। সহিংস পরিস্থিতিতে ক্ষুধা, রোগব্যাধি বিরাজ করছে এখন সবখানে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে ৩ কোটিরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। অন্তত দেড় কোটি মানুষ বর্তমানে স্থানচ্যুত। প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষ সুদানের ভেতরে স্থানচ্যুত এবং ৩৯ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থানচ্যুতি সংকট হিসাবে পরিণত করছে। ২ কোটিরও বেশি মানুষের জরুরিভাবে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন।
মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এমন সন্তানের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের পিতা-মাতা। সেখানে আটকে পড়া পরিবারগুলোর জন্য খাবার, নিরাপদ পানি ও চিকিৎসাসেবা নেই। নিয়মিত টিকাদান থেকেও বঞ্চিত এ প্রজন্ম। নেই শিক্ষার আলো। এসব মানবেতর পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। কিন্তু এ নীরবতা বিপজ্জনক। এতে উদাসীনতা তৈরি হয় এবং তা আরও বেশি প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধ সুদানের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয়। চলমান সংঘর্ষে স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর বারবার আক্রমণের কারণে রোগীরা মৌলিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। সুদানের দুই-তৃতীয়াংশ রাজ্যে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে, যার মধ্যে কলেরা, হাম, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও ডিফথেরিয়া উল্লেখযোগ্য। দেশটিতে শুধু কলেরায় অন্তত দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটিতে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্তত পাঁচটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে; যা আরও অন্তত ১৭টি এলাকায় বিস্তার লাভ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই সেখানে হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুদানে কাজ করছে, যাতে মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পেতে পারে। কিন্তু সেখানে প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে সীমিত এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর চলমান আক্রমণের কারণে জীবন রক্ষা করার জন্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে চিকিৎসাসরঞ্জাম সরবরাহ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুদানের মানুষকে সহযোগিতা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেক্ষেত্রে বেসামরিক মানুষ, মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসাকর্মীদের প্রবেশাধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ১৫৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স, কর্মী ও রোগীকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। এতে ৩১৮ জন নিহত এবং ২৭৩ জন আহত হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। কারণ তারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আওতায় সুরক্ষিত; কিন্তু এ বাধ্যবাধকতার বিষয়ে দেশটিতে প্রকাশ্যে অবহেলা করা হয়েছে।
সুদানের সংকট এখন আর অভ্যন্তরীণ দুর্দশা নয়, এটি একটি আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এ সংঘাত প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি তৈরি করছে এবং তা আরও স্থানচ্যুতি, রোগ ও নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি করতে পারে।
আলজাজিরা থেকে ভাষান্তরিত
ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস : মহাপরিচালক, বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা
