সৌদি-মার্কিন ডিজিটাল নেতৃত্ব বিশ্বকে নতুন রূপ দিতে পারে
দিমাহ আল-ইয়াহ্ইয়া
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফর শুধু প্রতীকী ছিল না, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারও কারও কাছে ‘মাগা ইন দ্য ডেজার্ট’ হিসাবে বিবেচিত ট্রাম্পের এই সফরকে শুধু দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক মৈত্রীর প্রতিফলন হিসাবেই নয়, দুই দেশ ভবিষ্যতে কীভাবে বিশ্বকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নেতৃত্ব দিতে পারবে, তার একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবেও দেখা হচ্ছে। কারণ ইতঃপূর্বে তাদের কাছে কূটনীতি, মূলধন ও কোডের সমন্বয় কখনো এত জরুরি বিষয় হিসাবে গণ্য হয়নি, এতটা আশাব্যঞ্জকও ছিল না।
আট দশকেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন-সৌদি সম্পর্ক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে-সেটা জ্বালানি মার্কেট থেকে প্রতিরক্ষা পর্যন্ত। কিন্তু আজ আরও শক্তিশালী রূপ নিচ্ছে এ অংশীদারত্ব, যা ডিজিটাল শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রূপান্তরমূলক উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎকে সংজ্ঞায়িত করে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে তার সাহসী ‘ভিশন ২০৩০’ এজেন্ডার অধীনে সৌদি আরব শুধু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে না, বরং এটি গতিও পাচ্ছে। সৌদি ডেটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে চলতি বছর LEAP (সৌদি আরবের একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনী ও সম্মেলন, যা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি উদ্ভাবক ও বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করে) প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, সৌদি আরব বিশ্বে ডিজিটাল শক্তিধর দেশ হিসাবে ক্রমেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে।
এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ট্রাম্প প্রশাসনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অগ্রগামী প্রযুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সম্পূরক শক্তি পেয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেভিড স্যাকসকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে অফুরন্ত ক্ষমতা প্রদান করেছেন এবং প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিটে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্সের এআইর সম্ভাবনা উন্মোচনের আহ্বান এমন একটি প্রশাসনের সংকেত দেয়, যা উদ্ভাবনকে বাধাহীন করে, নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু পঙ্গু করে তোলে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব, দেশ দুটি আলাদা হলেও তাদের পারস্পরিক পরিপূরক সুবিধা রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী এক নতুন শৃঙ্খলিত ডিজিটাল ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে। আমেরিকার আছে অতুলনীয় উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর সৌদি আরব প্রদান করে পুঁজির ব্যাপকতা এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার এক কৌশলগত অবস্থান। দেশ দুটি শুধু পারস্পরিক লাভের জন্য নয়, মানবজাতির উন্নতির জন্য বিশ্বে ডিজিটাল পরিমণ্ডলকে পুনর্গঠনে একসঙ্গে কাজও করতে পারে।
২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এটিই একমাত্র আন্তঃসরকারি সংস্থা, যা শুধু ডিজিটাল সমৃদ্ধির উন্নয়নের জন্য নিবেদিত। এর সদর দপ্তর রিয়াদে অবস্থিত। চার মহাদেশজুড়ে ১৬টি সদস্য রাষ্ট্রের ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ এর প্রতিনিধিত্ব করছে এবং এদের মোট দেশজ উৎপাদন ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। ডিজিটাল সহযোগিতা সংস্থা বিশ্বব্যাপী একটি সত্যিকারের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, বিশেষত যুবক ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে সংস্থাটি নিবেদিত। এখানে আমি প্রথম সৌদি নারী হিসাবে এমন বহুপাক্ষিক সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমি সরাসরি দেখছি কীভাবে আমাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ডিজিটাল ফাঁকফোকর বন্ধ করতে, পুরোনো সিস্টেম অতিক্রম করতে এবং সংযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করছে। কিন্তু আমরা একা এটি করতে পারব না। ডিজিটাল যুগ একটি নতুন ধরনের কূটনীতির দাবি রাখে, যা ভূখণ্ডগত সীমার ওপর নয়, প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। ডেটার কোনো সীমানা নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষমতার নিয়মগুলো পুনর্লিখন করছে। সাইবার নিরাপত্তা, ক্লাউড অবকাঠামো ও অ্যালগরিদমিক অখণ্ডতা এখন দেশগুলোর জাতীয় স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
রিয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফর শুধু কূটনৈতিক সংকেত নয়-এটি একটি কৌশলগত কর্মসূচির আহ্বানও বটে। আমাদের কাছে বিরল সুযোগ রয়েছে কথাবার্তার বাইরে গিয়ে কিছু নির্মাণ করার। একটি দ্বিপাক্ষিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত যৌথ তহবিল গঠন করা, যা আফ্রিকা, এশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথজুড়ে ডিজিটাল সংযোগ সম্প্রসারণের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শক্তি, লজিস্টিকস ও প্রতিরক্ষা; ডেটা সুরক্ষায় ডিজিটাল ট্রেড ফ্রেমওয়ার্ক; মুক্তবাজার এবং অবকাঠামোর স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করবে।
সংক্ষেপে, আমরা এ শুভেচ্ছাকে ডিজিটাল অবকাঠামোতে রূপান্তর করতে পারি। ডেটা সেন্টার থেকে ফাইবার নেটওয়ার্ক, শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম থেকে এআই স্যান্ডবক্স পর্যন্ত, যা মার্কিন-সৌদি ডিজিটাল অংশীদারত্ব বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির ভিত্তি হতে পারে। ডিজিটাল কো-অপারেশন অরগানাইজেশন এ কাজটি বাস্তবায়নের জন্য সেতু, উৎসাহদাতা ও মঞ্চ হিসাবে প্রস্তুত।
বিশ্ব পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইতিহাস স্মরণে রাখবে, আমরা পরবর্তীকালে কী তৈরি করতে চলেছি। আসুন, শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগত বিপ্লবের সাক্ষী না হয়ে বরং নেতৃত্বও দিই। একসঙ্গে হলে আমরা দ্রুতই এদিকে অগ্রসর হতে পারব, আরও স্মার্টলি তৈরি করব, যেতে পারব অনেক দূর। একসঙ্গে আমরা মার্কিন-সৌদি ডিজিটাল অংশীদারত্বকে শুধু শক্তিশালীই করব না-সত্যিই মহান করে তুলব।
আরব নিউজ থেকে অনূদিত
দিমাহ আল-ইয়াহ্ইয়া : ডিজিটাল কো-অপারেশন অরগানাইজেশনের মহাসচিব
