Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ভালো, নাকি মন্দ

Icon

পিনাকী ভট্টাচার্য

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ভালো, নাকি মন্দ

পিনাকী ভট্টাচার্য

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এখন বাংলাদেশের হট টপিক। এটা বিএনপি ছাড়া সব দলই চায়। বিএনপি চায় না। বিএনপি কেন চায় না, আর অন্যরা কেন চায়, আমি নিশ্চিত অধিকাংশ মানুষ এটা বলতে পারবে না, এমনকি দলের কর্মীরাও বলতে পারবে না। আমার এটা বোঝার জন্য অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। যা হোক, আজকে আমরা দেখব আসলে এ পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে কি না। রাজনৈতিক দলগুলো কী বুঝে চাচ্ছে, আর কী বুঝে বিরোধিতা করছে।

জামায়াত ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, ভালো কথা; কিন্তু এটার মধ্যে একটা খুব ইন্টারেস্টিং দফা আছে, তা হচ্ছে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন। এটার মানে কী? ধরেন আপনার আসনে মোট ভোট ১০ লাখ, মানে মোট ভোটার আর কী! তো ইলেকশন হলো, বিএনপি পেল ৫ লাখ, জামায়াত পেল ৩ লাখ। এটা তো পুরোই লস জামায়াতের জন্য। তারা বলছে, না ৩০০ আসনে যত ভোট পড়বে, সেই ভোট মোট ভোটের যত শতাংশ, ৩০০ আসনের তত শতাংশ সিট তাদের দিতে হবে। তার মানে, কোনো সিটে আলাদাভাবে যারা জিতছে না, তারা যদি সব মিলে এক পারসেন্ট ভোটও পায়, তাহলে তারা তিনটা সিট পাবে। যদি আধা পারসেন্ট পায়, তাহলেও একটা সিট অন্তত পাবে। ছোট দলের জন্য খারাপ না, সিট বাড়ে এতে। ইউরোপের অনেক দেশে এ সিস্টেম আছে। তাই ন্যাশনাল পলিটিক্সে ছোট দলের একটা ভয়েস আছে। তাহলে তো ভালোই, তাই না? পশ্চিমে তো অনেক কিছুই আছে রাজনীতিতে। আমরা জানি, পশ্চিমে সেকুলারিজম আছে। পশ্চিমে এলজিবিটিকিউ রাইটসের ইস্যু আছে। পশ্চিমে মদ খাওয়া, জুয়া-ক্যাসিনো আছে। আমাদের দেশের লোকেরা মেনে নেবে? তার মানে, পশ্চিমে আছে-এটা কোন সাফাই হতে পারে না। ছোট দলের জন্য এটা ভালো। জামায়াত কি ছোট দল, নাকি মনে করছে যে চিরজীবন সে ছোট দল থাকবে? ওই যে আছে না, সেকেন্ড ডিভিশনে খেলা; চিরজীবন সেকেন্ড ডিভিশনে খেলবে জামায়াত? আমরা দেখব এই ইস্যুটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত কি না, করলে কেন উচিত, না করলে কেন উচিত না।

এখানে আরেকটা বিষয় যুক্ত করা দরকার। তা হচ্ছে, এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে আপনি ক্যান্ডিডেটকে ভোট দেন না, মার্কায় ভোট দেন। এখন এই পদ্ধতি কেন দলগুলো চায়? আমি কোনো অনুমান করব না, আমি তাদের দলীয় ডকুমেন্ট থেকে দেখিয়ে দেব। আমি সব দলেরটা দেখাচ্ছি না; আমি জামায়াতেরটা দেখাই, কারণ জামায়াতই এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাওয়া সবচেয়ে বড় দল; তারা কী বলে এই দাবির পক্ষে আর্গুমেন্ট হিসাবে, আসেন সেটা একটু বুঝে দেখি।

জামায়াত একটাই যুক্তি দিচ্ছে এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের জন্য। নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করবে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন। আর কোনো দ্বিতীয় যুক্তি নেই। ক্যান্ডিডেটদের টাকা খরচ করতে হয়। টাকার খেলা বন্ধ করার জন্য জামায়াত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চায়, খুব সৎ চাওয়া, তাই না? আচ্ছা, জামায়াতের ভাইয়েরা বলেন তো, জাতীয় পার্টি তো ৭ শতাংশ ভোট পায়, তাই না? তার মানে তারা ২১টা সিট পাবে। ২১টা না পেলে ১৫টা পাবে, ১৫টা না পেলে ১০টা, ১০টা না পেলে ৫টা তো পাবে, নাকি? এর মধ্যে যদি সে একেকটা সিট ৫০০ কোটি টাকায় বিক্রি করতে চায়, হবে না বিক্রি? আপসে হবে, আওয়ামী লীগের লোকেরাই কিনে নেবে। মজা তো, এলাকায় যেতে হলো না, মারপিট করতে হলো না, ক্যাম্পেইন করতে হলো না, ভোটকেন্দ্র দখল করতে হলো না, এমনকি রাজনীতি করতে হলো না। আপনাকে এমনকি নমিনেশনও কিনতে হলো না। শোনা যায়, নমিনেশন দিয়ে অনেকে টাকাপয়সা নেয়। আপনার টাকা আছে, আপনার জেতা সিট কিনে নিলেন, নো রিস্ক, হারার কোনো ভয় নেই। ধরেন, দল এলাকা ভাগ করে দিল; বলল যে, এখন যে সিট আছে ওইভাবে ভাগ করবে। এই সিট অনুসারে, এই যে ধরেন বগুড়া, এখানে যত কেন্দ্র আছে, এখানে যদি বিএনপি জিতে, বিএনপি বলল যে তাহলে তোমাকে এমপি বানাব, ওই ক্যান্ডিডেট খরচা করবে না জেতার জন্য? পারবেন টাকার খেলা কমাতে? বরং বাড়িয়ে দেবেন টাকার খেলা। আরও কেন্দ্রীভূত করে দেবেন। কারণ ওই পাবলিককে জনগণ ভোট দেবে না, ওই পাবলিককে সিলেক্ট করবে দলের নেতা।

আর কী কী সমস্যা আছে? বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে তো অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রায় অনুপস্থিত। নেতৃত্ব অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে দলীয় তালিকা তৈরি হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে, এটা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্বকে দুর্বল করে দেবে। দলীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা আরও কেন্দ্রীভূত করবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে জবাবদিহিতা কমবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বই নির্ধারণ করবে কে সংসদে যাবে। ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের ক্ষমতা কমে যাবে। মানে এখন তো জনপ্রিয় নেতা হলে তার জেতার চান্স থাকে। মানুষের কাছে ভালো হতে হয়। সেটার কোনো দরকারই পড়বে না। দেখেন, আমরা অনেকে মনে করি, রাজনীতি মানে হচ্ছে, নির্বাচন, আইন, সংসদ-এ সবকিছু; কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মুশতাক খান একটা খুব সোজা কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনীতি আসলে একটা অদৃশ্য বোঝাপড়া। সেটাতে ঠিক হয় কে ক্ষমতায় থাকবে, কে টাকা খাবে, কে নিরাপদে থাকবে। এই বোঝাপড়াকেই বলা হয় পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট বা বাংলায় বলে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাত্ররা ভাঙতে চেয়েছিল। আর সেটাকেই তারা বলছিল নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এই বন্দোবস্ত লিখিত না। কিন্তু খুব বাস্তব। বড় বড় রাজনৈতিক দল, আমলা, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, পুলিশ, বিচারক, এলিট-সবাই একটা অলিখিত চুক্তিতে থাকে। আমি আরেকটু বুঝিয়ে বলি। ধরেন রাস্তার ট্রাকে চাঁদাবাজি, হাটের ইজারা, ছিনতাই, মস্তানি, ঠিকাদারি, বালুমহাল-এসব জিনিস আছে না, যেগুলোয় টাকাপয়সা আসে, এটার একটা ইকোনমি আছে-কে তুলবে টাকা, কে নেবে, পুলিশ কত পাবে, রাজনৈতিক নেতা কত পাবে, তৃণমূলের মাস্তান কত পাবে, মন্ত্রী কত পাবে, হাসিনা কত পাবে-এ সবকিছুই সেটেলড সেই অলিখিত চুক্তি দিয়ে। এ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অংশ এমপি। সে খরচা করে, মাস্তান পালে, কর্মী পালে, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, উকিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, স্থানীয় মাফিয়ার ওপরে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের ওপরে নিয়ন্ত্রণ রাখে। এভাবেই এ বন্দোবস্ত টিকে থাকে। হাসিনা চলে যাওয়ার পরে অপরাধ বাড়ছে কেন? কারণ, এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ওপর যাদের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ছিল, তারা নাই হয়ে গেছে। এখন কেউ সেভাবে কন্ট্রোল করেন না, তাই এরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যা খুশি করছে। এটা ল অ্যান্ড অর্ডারের বিষয় না, এটা সেই অলিখিত চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পরিণতি। আমাদের নতুন বন্দোবস্ত করার আগেই আপনি আরেকটা বন্দোবস্ত আনছেন। বাংলাদেশে ইনস্টিটিউশন নেই, গড়ে ওঠেনি। এই ইনস্টিটিউশনের বিকল্প হচ্ছে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এখানে রাজনৈতিক দল, তার নেতাকর্মী একটা জটিল ভারসাম্য রক্ষা করে, সমাজকে টিকিয়ে রাখে। এটা যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং সহিংসতা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে। আপনি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন করে পুরো পলিটিক্যাল ফেব্রিক ধ্বংস করে দেবেন, কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। জেলা শহরগুলোর আন্ডারওয়ার্ল্ড, ঢাকা শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ডও আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তার ব্যবসা-বাণিজ্য, ভাগবাঁটোয়ারা-এই জায়গাটা কে নেবে তখন? আপনি তো সব ওলটপালট করে দিয়েছেন। এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই-একটা কথা আছে না? আপনি এলোমেলো করে দিয়েছেন রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে। এ জায়গা তো ফাঁকা থাকবে না। জায়গাটা কে নেবে? পুলিশ নেবে, প্রশাসন নেবে, আরেকটা হাসিনার শাসন তৈরি হবে। পুরো সমাজ, রাষ্ট্র রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যে দেশে ইনস্টিটিউশন গড়ে ওঠেনি, সেই দেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তই হলো সমাজকে টিকিয়ে রাখার বিকল্প ব্যবস্থা। আর আপনি সেই ব্যবস্থা ভেঙে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নামের গুগলি মারলে রাষ্ট্র গড়িয়ে পড়বে গ্যাংয়ের হাতে, পুলিশের হাতে, প্রশাসনের হাতে, স্থানীয় মাফিয়ার হাতে।

এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন আঞ্চলিকতা বাড়িয়ে দেবে। আমি বেলজিয়ামের উদাহরণ দেব। বেলজিয়ামের ভেতরে আছে দুটি বড় জাতিগত, ভাষাগত গোষ্ঠী-একটা হচ্ছে ফ্লেমিশ, ওলদান ভাষায় কথা বলে, থাকে দেশের উত্তর অংশে, তার নাম হচ্ছে ফ্লান্ডার্স; আর দুই নম্বর হচ্ছে ওয়ালুন, ফরাসি ভাষায় কথা বলে, থাকে দেশের দক্ষিণ অংশে, নাম হচ্ছে ওয়ালুনিয়া। এরা কিন্তু আলাদা ভাষায় কথা বলে, আলাদা স্কুলে পড়ে, আলাদা গণমাধ্যম আছে তাদের জন্য, এমনকি আলাদা রাজনীতি করে, দল আলাদা। এই বেলজিয়ামে সংখ্যানুপাতিক ভোট আছে। এই পিআর সিস্টেমে ভোট যতই ছোট হোক, আলাদা পরিচয়ের দলও সংসদে ঢুকে পড়ে। এর ফলে বেলজিয়ামে গড়ে উঠছে শুধু ফ্রেমিশ স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এমন দল। এরা কিন্তু জাতীয় স্বার্থ দেখে না, কেবল নিজেদের অঞ্চলের স্বার্থ দেখে। ফলে সর্বজনীন রাজনীতি আর হয় না। হয় আঞ্চলিক স্বার্থের জন্য রাজনীতি। এর ফলাফল কী? সরকার গঠন করতে পারে না। ফ্লেমিশ আর ওয়ালন-এদের মতানৈক্য চূড়ান্ত। মতানৈক্যের কারণে বেলজিয়ামের জাতীয় পরিচয় দুর্বল হয়। সবাই নিজেকে ওয়ালুন বা ফ্রেমিশ ভাবে-বেলজিয়ান ভাবে না। ভাষা-শিক্ষা-অর্থনীতি সব আলাদা হয়ে গেছে। স্কুল আলাদা, পাঠ্যক্রম আলাদা। আলাদা মিডিয়া, এমনকি আলাদা ট্যাক্স ও প্রশাসন চলছে অঞ্চলভিত্তিক। যেহেতু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, সরকার গঠন হয় না। এক বছরের বেশি সময় সরকার গঠন হয়নি এরকম উদাহরণ আছে। এই রাষ্ট্র টিকবে না।

এবার আরও মারাত্মক উদাহরণ দেই। ইসরাইল যে আগ্রাসি রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে, এটা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের জন্য। কিভাবে? ইসরাইল তো এখন একটা রাষ্ট্র না, একটা চরমপন্থি যুদ্ধযন্ত্র। আর এই রূপান্তরের বীজ পোঁতা আছে তাদের এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যবস্থায়। এখানে ৩ শতাংশের মতো ভোট পেলে সংসদে ঢুকে যায় যে কেউ। এই ফাঁক গলে ক্ষমতার মঞ্চে উঠে আসছে একঝাঁক ধর্মীয় হুলিগান, যারা গণতন্ত্র না; ধর্মীয় শাসন এবং জাতিগত নিধন চায়, ফিলিস্তিনের ধ্বংস চায়, গাজার ধ্বংস চায়। কারা এই হুলিগান? যেমন এসএইচএএস, এরা নারী অধিকারের প্রকাশ্য শত্রু, সিভিল ম্যারেজের প্রকাশ্য শত্রু। এরা ৫ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পায়; কিন্তু মন্ত্রিসভায় তারা নীতিনির্ধারক, তাদের জন্য সরকার গঠিত হয়। কারণ কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না এবং এরা এই সাপোর্টটা দেয় এবং সরকারের নীতি জিম্মি হয়ে যায় এদের কাছে। ইসরাইলে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না সরকার গঠনের জন্য; এই হুলিগানদের সমর্থন লাগে। তারা চুক্তি করে শর্ত দেয় যে, আমাদের দাবি যদি না মানো, তাহলে সরকার ফেলে দেব। এদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই বিচার সংস্কার ইস্যুতে ২০২৩ সালে ইসরাইলে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ হয়েছে। এদেরই নেতা বেনগাভি বলছে, আরবদের সরাও, এটা আমাদের। এর ফলে কিন্তু হামাস রকেট ছুড়ে, তারপর যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরাইলের মন্ত্রিসভার ছোট দলগুলো বলছে, গাজার জনসংখ্যা কমাও, পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করো, বোমা দিয়ে তাদের ছারখার করে দাও। এই যুদ্ধ ধর্মীয় প্রতিশোধে পরিচালিত গণহত্যা। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ফাঁক গলে ঢুকে গেছে যারা, তারাই এসব ঘটাচ্ছে। ইসরাইলই আজকে প্রমাণ যে, সংখ্যাগত সমতা মানে রাজনৈতিক সুস্থতা নয়। পিআর মানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নয়। অনেক সময় চরমপন্থার কেন্দ্রীভবন।

বাংলাদেশকে নিয়ে কি সেই পথে হাঁটতে চান আপনারা? আমরা কী দেখতে চাচ্ছি এমন একটা দেশ, যেখানে ভোটার থাকবে কিন্তু কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না, যেখানে রাজনীতি থাকবে কিন্তু রাষ্ট্র থাকবে না, যেখানে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকবে স্থানীয় গ্যাং, পুলিশ আর প্রশাসনের হাতে? শক্তিশালী ইনস্টিটিউশন না গড়ে ওঠায় যে রাষ্ট্রের প্রতিটি জেলা এখনো একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে টিকে আছে, এই প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন এসে সেই সামাজিক ভারসাম্য ধ্বংস করে দেবে, রাজনৈতিক ভারসাম্য ধ্বংস করে দেবে। নতুন কিছু গড়ার আগে পুরোনোটাকে ভেঙে ফেলতে চাইলে দায়িত্ব তো আপনারই; কিন্তু যদি আপনি না জানেন কী ভাঙছেন, তাহলে আপনি তো স্থপতি না, আপনি তো ধ্বংসের কারিগর।

বাংলাদেশ আজ এক ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু দলের ভুল সিদ্ধান্ত, কিছু বুদ্ধিজীবীর নির্বোধ গুগলি আর কিছু বিদেশি থিংট্যাংকের ঠেঁসে দেওয়া এক্সপেরিমেন্ট-এসব মিলে আজ রাষ্ট্র এক ভয়ংকর জুয়াখেলায় ঢুকে পড়ছে। একটা দেশ, যেটার গণতন্ত্র ছিল ভঙ্গুর; আইনের শাসন ছিল কাগুজে, সেই দেশে আপনি যদি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না রেখে এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের সিস্টেম চাপিয়ে দেন, তাহলে যা গড়ে উঠবে, তা গণতন্ত্র না, তা হবে পলিটিক্যাল মাফিয়ার এনক্লেভ আর মানুষ শুধু ব্যালটের ছেঁড়া কাগজ হয়ে থাকবে। আমরা কি একটা রক্তাক্ত বিপ্লবের পরে এমন একটা পরিণতি চেয়েছিলাম? বিচারের ভার আজ আপনাদের উপরে দিলাম। এই দেশ ধ্বংস করবেন না।

‘পিনাকী ভট্টাচার্য : দি আনটোল্ড’ ইউটিউব চ্যানেল থেকে

পিনাকী ভট্টাচার্য : প্রভাবশালী ইউটিউবার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম